কলকাতা: স্বামী বিবেকানন্দ তখন রমতা সাধু। তখনও শিকাগো যাননি, ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভারতের শহরে গ্রামে, গভীরভাবে চিনছেন ভারত আত্মাকে। তখনই হাথরসে আসেন তিনি। সেই হাথরস, নারী নিগ্রহের ঘটনায় যা এখন শিরোনামে। এখান থেকে তিনি পান একনিষ্ঠ শিষ্য শরৎচন্দ্র গুপ্তকে।
স্বামী গম্ভীরানন্দ যুগনায়ক বিবেকানন্দ-য় লিখেছেন, হাথরস স্বামীজির স্মৃতিধন্য। বৃন্দাবন থেকে হরিদ্বার যাচ্ছিলেন স্বামীজি। হাথরস স্টেশনের তরুণ সহকারী স্টেশন ম্যানেজার শরৎচন্দ্র গুপ্ত দেখতে পান, এক সাধু প্ল্যাটফর্মে মাটির ওপর বসে আছেন। শরৎচন্দ্র জিজ্ঞাসা করেন, তিনি ক্ষুধার্ত কিনা। সাধু হ্যাঁ বলায় তিনি তাঁকে নিজের বাড়ি নিয়ে আসেন। শরৎচন্দ্র বলেছেন, আমি স্বামীজির সেই ভয়ঙ্কর চক্ষু দুইটিরই পিছু লইলাম। স্বামীজি তাঁর বাড়িতে কয়েকদিন ছিলেন। তারপর শরৎচন্দ্র তাঁকে বলেন, আমায় কিছু উপদেশ দিন। উত্তরে স্বামীজি বিদ্যাসুন্দর থেকে সুন্দরের প্রতি মালিনীর উক্তি সুর করে গেয়ে বলেন, বিদ্যা যদি লভিতে চাও, চাঁদমুখে ছাই মাখ, নইলে এই বেলা পথ দেখ। শরৎচন্দ্র বলেন, আপনি যা বলবেন তাই করতে রাজি, সর্বস্ব ত্যাগ করে আপনার সঙ্গে যেতে আমি প্রস্তুত।
কিছুদিন সেখানে থাকার পর স্বামীজি ব্রজেনবাবু নামে আর এক বাঙালি ভদ্রলোকের বাড়ি কদিন থাকেন। তখন স্থানীয় বাঙালিটোলার বাসিন্দারা ভিড় করতেন তাঁকে দেখতে। কিন্তু কদিন পর স্বামীজি শরৎচন্দ্রকে বলেন, আর আমার এখানে চলবে না। আমরা সন্ন্যাসী, আমাদের এক জায়গায় অধিক দিন থাকা উচিত নয়, তা ছাড়া আমি তোমাদের ভালবাসার টানে পড়ে যাচ্ছি। হৃষীকেশে চলে গেলেন তিনি, সঙ্গে শরৎচন্দ্র, স্বামীজি তাঁকে মন্ত্রদীক্ষা দিয়েছেন।