নয়াদিল্লি: চাঁদের মাটি ছুঁয়ে ইতিহাস গড়েছে ভারত। ভারতীয় বিজ্ঞানীদের জয়জয়কার চারিদিকে। কিন্তু চন্দ্রযান-৩ অভিযানের (Chandrayaan 3 Landing) সাফল্যেও রাজনীতির রং। চন্দ্রপৃষ্ঠে মহাকাশযানের অবতরণের মুহূর্তে টেলিভিশন জুড়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতি হোক বা কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে বাদ দিয়ে ISRO-য় গমন এবং তার আগে পথসভা, নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে মোদি এবং বিজেপি-র নেতা-নেত্রীরা ISRO-র বিজ্ঞানীদের কৃতিত্বে ভাগ বসাচ্ছেন বলে উঠছে অভিযোগ।
ISRO-কে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সরাসরি অভিযোগ তুললেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। শনিবার ট্যুইটারে (অধুনা X) বিষয়টি নিয়ে সরব হন তিনি। লেখেন, '২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-র রাজনৈতিক হাতিয়ার এখন ISRO. নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদী উন্মাদনা জাগিয়ে তুলতে এখন থেকে প্রতিটি অভিযানকে চাবুকের মতো ব্যবহার করা হবে। কয়েক দশকের গবেষণাকে 'মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়' ম্যাজিকে পরিণত করতে ২৪ ঘণ্টা খেটে চলেছে ভক্ত এবং ট্রোল সেনারা। জাগো ভারত। আর হ্যাঁ, আমি দেশদ্রোহী নই'।
চলতি বছরের বাজেটেই প্রযুক্তি খাতে ISRO-র বরাদ্দ কমিয়ে আনে কেন্দ্র। এমনকি চন্দ্রযান-৩ অভিযানে যুক্ত ইঞ্জিনিয়াররা ১৭ মাস বেতন পাননি বলেও অভিযোগ করেছেন বিরোধীরা। তাই চন্দ্রযান-৩ অভিযানের কৃতিত্বে আদৌ ভাগ বসানো চলে কিনা, প্রশ্ন তুলেছেন সকলে। মোদি সরকারের আমলেই প্রথম নয়, তার আগেও একাধিক অভিযান হয়েছে, এবং কখনও রাজনৈতিক স্বার্থে তার ব্যবহার হয়নি বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা।
শনিবার মহুয়াও লেখেন, 'হ্যাঁ, চাঁদের বুকে ISRO-র ল্যান্ডার নেমেছে। এই যদিও প্রথম বার নয়। BJP-কে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে যে, নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং চাঁদে অবতরণ করেননি। আর চন্দ্রযান নিয়ে গবেষণাতেও যুক্ত ছিল না BJP-র আইটি সেল। আমি শুধু বলছি আর কী'।
শুধু মহুয়াই নন, চন্দ্রযান-৩ অভিযানের সাফল্যে মোদি অযাচিত ভাবে ভাগ বসাতে চাইছেন বলে অভিযোগ করছেন বিজেপি বিরোধী শিবিরের অনেকেই। কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশের কথায়, 'বেঙ্গালুরুতে নাকি না এসে পারছিলেন না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি! আমি ভাবছি, মণিপুর নিয়ে কেন সমান উদ্যোগ চোখে পড়ল না তাঁর তরফে! বিগত তিন মাস ধরে সেখানে যা ঘটছে, তা নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই। মণিপুর কি এই দেশের অংশ নয়? তাই উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক...'।
শনিবার বিদেশ সফর সেরে ভারতে ফিরেছেন মোদি। গ্রিস থেকে সোজা বেঙ্গালুরুতে নামেন তিনি। বিজেপি নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে সেখানে পথসভা করেন তিনি। তার পর পৌঁছন ISRO-র দফতরে। সেখানে চাঁদের বুকে বিক্রমের অবতরণের জায়গাটির 'শিবশক্তি পয়েন্ট' নামকরণ করেন তিনি। এর পাশাপাশি, চন্দ্রযান-২ যেখানে ভেঙে পড়েছিল, সেই জায়গার নামকরণ করেন, 'তেরঙ্গা পয়েন্ট'। ২৩ অগাস্ট চাঁদের বুকে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের অবতরণের দিনটিকে জাতীয় মহাকাশ দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা করেন।