নয়াদিল্লি: স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে আমেরিকা রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু হাতে হাতকড়া, পায়ে শিকল পরে ফিরে আসতে হয়েছে ভারতে। বেআইনি ভাবে প্রবেশ করতে যাওয়া ভারতীয় অভিবাসীদের সেনার বিমানে চাপিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে আমেরিকা। সেই নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে জোর তরজা শুরু হয়েছে। কেন আমেরিকার সেনার বিমানকে ভারতে নামতে দেওয়া হল, কেন নিজের বিমান পাঠিয়ে সসম্মানে ভারতীয়দের ফেরত আনা হল না, সংসদেও সেই প্রশ্নে বিদ্ধ হতে হল কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারকে। (Illegal Indian Migrants)
ভারতীয় অভিবাসীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ নিয়ে বৃহস্পতিবার উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। সমালোচনা, নিন্দার মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত বিবৃতি দিতে হয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে। কিন্তু আমেরিকায় বেআইনি অনুপ্রবেশকারী ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো কোনও নতুন ঘটনা নয় বলে পাল্টা যুক্তি দেন তিনি। কিন্তু আমেরিকার সেনার বিমান নামা নিয়ে সেদেশের অভিবাসন নীতির উল্লেখ করেন তিনি। (Narendra Modi)
কিন্তু রাজ্যসভায় বিষয়টি নিয়ে সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখেল। তিনি বলেন, “পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি আমাদের। শীঘ্রই ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে উঠব। আর ‘বিশ্বগুরু’ ভারতের নাগরিকদেরই শিকলের বেড়ি পড়ানো হল। অথচ কলম্বিয়ার মতো দেশ, যারা প্রথম ১০-এর মধ্যেও নেই, তারা নিজেদের বিমান পাঠিয়ে নাগরিকদের সসম্মানে দেশে ফেরাতে পারে। আমাদের সরকারকে বিমান পাঠাতে কে বাধা দিয়েছিল? বিমান তো কম নেই?”
এক্ষেত্রে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভ পেত্রোর উদাহরণই দিয়েছেন সাকেত। আমেরিকা থেকে সম্প্রতি একাধিক দেশের বেআইনি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কলম্বিয়ার অভিবাসীদেরও হাতে হাতকড়া পরিয়ে, কোমর-পায়ে শিকলের বেড়ি পরিয়ে, সেনার বিমানে চাপিয়ে দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগী হয় আমেরিকা। কিন্তু আমেরিকার সেনার বিমানকে দেশের মাটিতে নামতে দিতে রাজি হননি গুস্তাভ। নাগরিকদের হাতকড়া, শিকল পরানো নিয়েও আপত্তি জানান তিনি। পরিষ্কার জানিয়ে দেন, পরিযায়ী বা অভিবাসী হওয়া কোনও অপরাধ নয়। এর পর নিজে থেকে বিমান পাঠান। সসম্মানে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনেন। নতুন করে যাতে জীবন শুরু করতে পারেন তাঁরা, তার জন্য স্বল্প সুদের ঋণ প্রকল্পেরও ঘোষণা করেন।
কলম্বিয়া যদি নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষার জন্য আমেরিকার চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারে, ভারত কেন পারবে না, প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। বিশেষ করে করোনার সময় এবং পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় বিমান পাঠিয়ে ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলে, এখন কেন সম্ভব হল না, উঠে আসছে সেই প্রশ্নও। যদিও জয়শঙ্করের দাবি, বেআইনি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর অধিকার আছে আমেরিকার। কী ভাবে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে, তা আমেরিকার অভিবাসন দফতরই ঠিক করে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্র নয়া আইন আনার ভাবনাচিন্তা করছে বলে দিল্লি সূত্রে খবর। Overseas Mobility (Facilitation and Welfare) Bill 2024 নামের বিলটি শীঘ্রই সংসদে পেশ করা হতে পারে, যার আওতায় অভিবাসন প্রক্রিয়া সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করা যায়।