নয়াদিল্লি: ক্ষেপণাস্ত্র বিনিময় জারি পঞ্চম দিনেও। ইরান বনাম ইজরায়েল সংঘাত ঘোরাল হচ্ছে ক্রমশ। সেই নিয়ে কাটাছেঁড়ার মধ্যেই চাঞ্চল্যকর তথ্য় সামনে এল। ইরান পরমাণু বোমা তৈরির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে, তাই তাদের শক্তি খর্ব করা জরুরি বলে দাবি করেছিল ইজরায়েল। কিন্তু আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রিপোর্ট বলছে, পরমাণু বোমা তৈরি থেকে এখনও কয়েক বছর পিছিয়ে ইরান। কিন্তু ইজরায়েল যে আগ্রাসন দেখিয়েছে, তাতে ইরান আরও দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা। (Iran-Israel War)

গত সপ্তাহে ইরানে হামলা চালানোর সময় তেহরানের পরমাণু সক্রিয়তার দিকে আঙুল তুলেছিল ইজরায়েল। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের দাবি ছিল, পরমাণু শক্তি সঞ্চয়ের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ইরান। আর কয়েক মাসের মধ্যেই তাদের হাতে পরমাণু অস্ত্র চলে আসবে। তাই তারা কিছু করার আগেই, তাদের হাত ভেঙে দেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে ইজরায়েলের সেই যুক্তি ধোপে টিকছে না। (Iran-Israel Conflict)

কারণ UN Intelligence Assessment রিপোর্ট অন্য কথা কথা বলছে। ওই রিপোর্ট তুলে ধরে CNN জানিয়েছে, পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে ইরান ক্রমশ এগিয়ে চলেছে ঠিকই। কিন্তু মাত্র কয়েক মাস নয়, পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে, লক্ষ্যে পৌঁছতে এখনও কমপক্ষে তিন বছর লাগবে ইরানের। বরং আগ বাড়িয়ে হামলা চালিয়ে ইজরায়েল আসলে ইরানকে আরও মরিয়া করে তুলল বলে মনে করছেন আমেরিকার বিশেষজ্ঞমহল।  তাঁদের আশঙ্কা, এতদিন ধীর গতিতেই কাজ চালাচ্ছিল ইরান। কিন্তু ইজরায়েলের হামলার ফলে অস্তিত্ব সঙ্কটের প্রশ্নকে সামনে রেখে দ্রুত গতিতে কাজ করবে তারা। এর ফলে কয়েক মাসেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে ফেলার লক্ষ্যে নামবে তারা।

CNN জানিয়েছে, ইউরেনিয়াম মজুত থাকা ইরানের নানতাঞ্জ পরমাণু কেন্দ্রটিতে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। ব্যাপত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেখানে। কিন্তু Fordow পরমাণু কেন্দ্রটি ইজরায়েলের নাগালের বাইরে। সেটিকে কার্যত দুর্গে পরিণত করেছে তেহরান। সেখানে পৌঁছনোর ক্ষমতা নেই ইজরায়েলের। আমেরিকার অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র, আকাশপথে নজরদারি চালানোর সহযোগিতা পেলেও সেখানে আঘাত হানতে ইজরায়েলকে বেগ পেতে হবে। 

ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেনের আমলে পশ্চিম এশিয়ায় কূটনীতিক হিসেবে মোতায়েন থাকা ব্রেট ম্যাকগার্ক বলেন, “ওই পরমাণু কেন্দ্রের উপর ঘোরাঘুরি করতে পারে ইজরায়েল, তাদের কার্যক্ষমতাও সাময়িক ভেঙে দিতে পারে, কিন্তু সবকিছু গুঁড়িয়ে দিতে গেলে আমেরিকার সামরিক শক্তির প্রয়োজন পড়বে। হয় সামরিক আঘাত হানতে হবে, নয়ত হাঁটতে হবে সমঝোতার পথে।”

বরং ইজরায়েলের পদক্ষেপে ট্রাম্প সরকারও বিপাকে পড়েছে বলে মনে করছে আমেরিকার কূটনৈতিক মহল। পশ্চিম এশিয়ায় আরও একটি যুদ্ধে জড়াতে নারাজ তারা। খরচের দিকটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে। কিন্তু ইরান পরমাণু শক্তিধর হয়ে উঠুক, তাও চায় না তারা।  আমেরিকার B-2 বম্বার যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালালেই যে ইরানের ওই পরমাণু কেন্দ্র গুঁড়িয়ে দেওয়া সম্ভব, তা বিলক্ষণ বোঝা যাচ্ছে। ফলে এই সুযোগ হাতছাড়া করার পক্ষে নন অনেকেই।

এমন পরিস্থিতিতে দু’দিন আগে পর্যন্ত ইরান বনাম ইজরায়েল সংঘাত থেকে নিজেদের দূরে রাখছিলেন ট্রাম্প। রবিবার তিনি বলেন, “আমরা এতে যুক্ত নই। পরে যদি যুক্ত হতেও হয়, এই মুহূর্তে নই।” অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগে ইরান এবং ইজরায়েলের আলোচনায় বসা উচিত বলেও জানান তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার কানাডায় আয়োজিত G-7 বৈঠক থেকে মাঝপথেই বেরিয়ে যান ট্রাম্প। যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “যুদ্ধবিরতি চাইছি বলিনি একবারও। আমরা যুদ্ধবিরতির চেয়েও ভাল কিছু চাইছি। সমাপ্তি চাই, সত্যিকারের সমাপ্তি। শুধু যুদ্ধবিরতি নয়।” 

ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত থাকতে হবে বলে আগেও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, ইরানের পরমাণু কেন্দ্র পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে কি যুদ্ধবিমান পাঠাবেন তিনি? যদিও বা পাঠান, তাতে কি ইরানের পরমাণু শক্তি ভেঙে দেওয়া যাবে পুরোপুরি? তাঁর বক্তব্য, “কিছুরই গ্যারান্টি নেই।” তবে CNN জানিয়েছে, বিশেষ রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফ-সহ একটি প্রতিনিধি দলকে কাজে নামিয়েছেন তিনি। ইরানকে আলোচনার টেবিলে টেনে আনাই কাজ তাদের। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকেও পাঠানো হতে পারে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা তাই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে বলে মত কূটনীতিকদের।

তথ্যসূত্র: CNN