জোশীমঠ: এমনিতেই ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা বলে পরিচিত। সারা বছর পুণ্যভূমিতে যাতায়াত লেগে থাকে মানুষের।  তার উপর পাহাড় কেটে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, রাস্তাঘাট তৈরি এবং বেআইনি ভাবে বনভূমি কেটে হেটেল ব্যবসার রমরমিয়ে চালানোর অভিযোগ ছিলই। ছিল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপও।  এ বার বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এল উত্তরাখণ্ডে। সেখানে মাটির অবনমন  ঘটে ফাটল ধরল শয়ে শয়ে বাড়িতে। এই পরিস্থিতির জন্য সরকারেকেই কাঠগড়ায় তুলছেন উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) মানুষ জন (Uttarakhand Land Subsidence)।


মাটির অবনমন  ঘটে ফাটল ধরল শয়ে শয়ে বাড়িতে


উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠের (Joshimath) ঘটনা। মাটির অবনমন নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সতর্ক করে আসছিলেন পরিবেশবিদরা। ভূমিকম্প প্রবণ ওই এলাকায় ভূপৃষ্ঠের জল চুঁইয়ে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে বলেও সতর্ক করেছিলেন অনেকে। এমনকি বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের রিপোর্টেও মিলেছিল বিপদের ইঙ্গিত। কিন্তু তার পরও সেখানে প্রকৃতিকে রুষ্ট করার অভ্যাসে বিরাম দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। আজ তারই ফল ভুগতে হচ্ছে বলে দাবি সাধারণ মানুষের।


জোশীমঠে এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে ৫৭০টি বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছে। জায়গায় জায়গায় বসে গিয়েছে মাটি। তাতে এই কনকনে ঠান্ডায় গ্রাম জোশীমঠ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। বিপজ্জনক অবস্থা থেকে উদ্ধার করে বুধবার ২৯টি পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।  তবে এখনও প্রায় ৫০০ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভিটে আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন। সবমিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষ। সেগুলি জরিপ করে দেখা হচ্ছে। আইআইটি রুরকি থেকে বিশেষজ্ঞদের দল পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামিও শীঘ্রই সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি তদারকি করবেন বলে জানা গিয়েছে।


আরও পড়ুন: Budget 2023-'24: ২.৫ থেকে ৫ লক্ষ, বাড়তে চলেছে করছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা! বাজেটের আগে তুঙ্গে জল্পনা


হিমালয় অভিযানের ফটক হিসেবে ধরা হয় জৌশীমঠকে। বদ্রীনাথ এবং ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার যাওয়ার পথও এই জোশীমঠের উপর দিয়েই। এ ছাড়াও জ্যোতির্মঠ হিন্দু মনাস্ট্রি, চিন সীমান্তে সেনা শিবিরও রয়েছে। তার পরও সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতি সরকার উদাসীন থেকেছে বলে অভিযোগ উঠে আসছে। প্রশ্ন উঠছে ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের তপোবন-বিষ্ণুগড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প , হেলাং বাইপাস তৈরি নিয়ে। দুর্বল মাটিকে আরও দুর্বল করে দেওয়ার জন্য এই প্রকল্পগুলিই দায়ী বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।


সেখানকার বাসিন্দাদের দাবি, ২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকেই জায়গায় জায়গায় এমন ফাটল ধরতে শুরু করে। বার বার তা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে উদাসীনই থেকেছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধেও এর আগে সরব হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। গত বছর অক্টোবরে সেই নিয়ে বনধও পালন করা হয়। কিন্তু তাতেও কিছু বদলায়নি বলে অভিযোগ। তাঁরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি ২ নম্বর ওয়ার্ডে মাটির নিচে থেকে চুঁইয়ে ঘোলা জল উঠে আসতে থাকে।


২০২১ সালের অক্টোবর মাস থেকেই জায়গায় জায়গায় এমন ফাটল ধরতে শুরু করে


পাহাড় ভেদ করে গড়ে তোলা সুড়ঙ্গের কারণেই এমন ঘটছে বলে সে বার রিপোর্টও তৈরি করে বিশেষজ্ঞদের দল। পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে সরকারকে জানায় তারা। ওই দলে শামিল ভূবিজ্ঞানী এসপি সতী জানিয়েছেন, মাত্র কয়েক বছরে নয়, প্রায় এক দশক আগেই প্রথম বিপদের ইঙ্গিত মেলে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জব্য তৈরি সুড়ঙ্গ বিপদ ডেকে আনছে আঁচ পেয়ে ২০১৩ সালে কাজও সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। এমনকি ওই এলাকায় বড় ধরনের নির্মাণকার্য বন্ধ রাখার রিপোর্ট জমা পড়েছিল ১৯৭৮ সালেই। কিন্তু তার পরও কাজ থেমে থাকেনি। তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে জলবায়ু পরিবর্তন। তাতেই শিরে সংক্রান্তি নেমে এসেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।