বেজিং: গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ ছিল স্বামীর বিরুদ্ধে। বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছিল আদালতে। সেই সময়ই ঘটল নাটকীয় ঘটনা। বিবাহবিচ্ছেদ আটকাতে স্ত্রীকে পিঠে তুলে নিয়ে দৌড় দিলেন স্বামী। বিষয়টি সামনে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আদালত কক্ষ থেকে স্ত্রীকে পিঠে তুলে নিয়ে পালানোর ঘটনা বেনজির। সেই নিয়ে  সোশ্যাল মিডিয়াতেও সাড়া পড়ে গিয়েছে। (Viral News)


চিনের সিচুয়ান প্রদেশ থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, লি নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ আনেন স্ত্রী চেং। বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় লি তাঁকে মারধর করতেন বলে অভিযোগ করেন চেং। দীর্ঘ ২০ বছর সংসার করার পরও লি-র অভ্যাস পাল্টায়নি বলে অভিযোগ করেন। (China News)


লি এবং চেং-এর দুই সন্তানও রয়েছে, এক ছেলে, এক মেয়ে। গোড়ার দিকে বিবাহবিচ্ছেদে সায় দেয়নি আদালত। দীর্ঘ ২০ বছরের দাম্পত্য, আবেগ, অনুভূতির কথা ভেবে লি-কে আরও একটি সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদের দাবিতে অনড় ছিলেন চেং। আদালতে নতুন করে আবেদন জানান তিনি। 


সেই মতো শুনানি শুরু হলে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন লি। বিবাহবিচ্ছেদ চান না বলে জানান আদালতে। কিন্তু চেং নিজের অবস্থান পাল্টাননি। এমতাবস্থায় আদালতকক্ষেই আচমকা চেংকে পিঠে তুলে নেন তিনি। চিৎকার শুরু করে দেন চেং। কিন্তু কেউ কিছু বোঝার আগেই দৌড় দেন লি। আদালত থেকে বেরিয়ে বেশ কিছু দূর চলে যাওয়ার পর তাঁকে আটকায় পুলিশ। 


গোটা ঘটনায় আদালতও হতচকিত হয়ে পড়ে। স্ত্রীকে নিয়ে পালানোর চেষ্টার জন্য লি-কে ভর্ৎসনা করে আদালত। লিখিত ভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হয় তাঁকে, তাতে ভুল স্বীকার করেন তিনি। ভবিষ্যতে এমন করবেন না বলে অঙ্গীকারও করেন। লেখেন, "আবেগের বশে এমনটা ঘটিয়ে ফেলেছি। বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে ভেবে ওকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিলাম। আদালত, বিচারকের নির্দেশ মানিনি। নিজের ভুল বুঝতে পারছি। ভবিষ্যতে আর এমনটা হবে না।"


তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এর পর আর বিবাহবিচ্ছেদের দিকে এগোননি চেং। গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ তুলে নিয়ে লি-কে আরও একটি সুযোগ দিতে রাজি হন তিনি। যদিও এ নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করছেন চিনা নাগরিকরা। আদালতের ভূমিকাতেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। গার্হস্থ্য হিংসার মতো গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও কোন যুক্তিতে আদালত চেং-কে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে, লি-কে আরও একটি সুযোগ দিতে বলে, প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। 


গার্হস্থ্য হিংসা নিয়ে চিনের আইন-কানুন আগেও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এল চায়না উইমেন্স ফেডারেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের ৩০ শতাংশ বিবাহিত মহিলা গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হওয়ার কথা মেনেছেন। ৬০ শতাংশ মহিলা যাঁরা আত্মহত্যা করেন, তাঁরা কোনও না কোনও ভাবে পারিবারিক হিংসার শিকার হন বলেও জানা যায়।