কলকাতা: রাজ্যে কোভিড বেডের সঙ্কট মেটাতে পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্য সরকার। সরকারি হাসপাতালে বেড বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। ৫ হাজার ৬০৪ থেকে বাড়িয়ে ৭ হাজার ৪২৮ হচ্ছে কোভিড বেডের সংখ্যা। অর্থাৎ, ১৮২৪ টি বেড বাড়ানো হচ্ছে। বাড়তি বেডে খুব শীঘ্রই রোগী ভর্তি করা হবে বলে স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এম আর বাঙ্গুরে বেড বাড়ছে ২৭২। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাড়ছে ৩৬০টি বেড। বেলেঘাটা আইডি-তে বাড়ছে ১৫০টি বেড। চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার হাসপাতালে বাড়ছে ২৭৫টি বেড।
রাজ্যে ভয়ঙ্কর হচ্ছে করোনার সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রাজ্যে ভ্যাকসিনের আকাল। সেইসঙ্গে রাজ্যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে কোভিড বেডেরও।
সারা দেশজুড়েই করোনায় ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। দেশের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও দৈনিক সংক্রমণের ভিত্তিতে নতুন আতঙ্কের নজির তৈরি হল সোমবার। রাজ্যের স্বাস্থ্যদফতরের পক্ষ থেকে সোমবার জারি করা বিবৃতি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৫১১ জন। এই সময় ব্যবধানের মধ্যে রাজ্যে করোনার বলি ১৪ জন।
রবিবারের পর সোমবারও রাজ্যের দুই জেলা কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগণায় নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় নতুন করে মারণ ভাইরাসের কবলে পড়েছেন ১ হাজার ১১৫ জন, আর উত্তর ২৪ পরগণায় সংখ্যাটা ১ হাজার ৮৭ জন।
সোমবারই রাজ্যে নবান্নে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। হাসপাতালগুলিকে গত বছরের থেকে ২০ শতাংশ বেশি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিকাঠামো তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মাইক্রো কনটেনমেন্ট জোন তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও আরটিপিসিআর টেস্টের সংখ্যাও বাড়াতে বলা হয়েছে। অক্সিজেন ও অ্যাম্বুল্যান্সের পর্যাপ্ত পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ফের সেফ হাউসগুলিকে সচল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, রবিবার রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩৯৮ জন। মৃত্যু হয় ১০ জনের। যার মধ্যে কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগণা দুই জেলাতেই সংক্রামিত হাজার পেরিয়েছিল। কলকাতাতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১০৯ জন। আর উত্তর ২৪ পরগণায় সংখ্যাটা ১ হাজার ৪৭ জন।
গত শনিবার রাজ্যে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৪৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। শুক্রবার সংখ্যাটা ছিল ৩ হাজার ৬৪৮ জন। বৃহস্পতিবার নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ৭৮৩ জন। বুধবার আক্রান্ত হন ২ হাজার ৩৯০ জন। মঙ্গলবার করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন ২ হাজার ৫৮ জন।
করোনা যখন সুনামির মতো আছড়ে পড়ছে, তখন বেডের প্রবল সঙ্কটের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। সোমবারের স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে ৪৪১টি কোভিড বেডের সব কটি ভর্তি। নিউটাউনে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে করোনার জন্য বরাদ্দ ১৫০টি বেডের একটিও খালি নেই। বেলেঘাটা আইডির ১৬৫টি বেডের মধ্যে মাত্র ২০টি বেড খালি।কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ৩০০টি কোভিড বেডের মধ্যে প্রায় সবকটিই ভর্তি।এনআরএসে ১১০টি কোভিড বেডের মধ্যে প্রায় সবকটিই ভর্তি।
একই অবস্থা কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলিরও। সিএমআরআই-এ ১৩৩টি কোভিড বেডের প্রায় সবকটিতে রোগী ভর্তি । ঢাকুরিয়া আমরির ৮৯,মুকুন্দপুর আমরির ৩৩,সল্টলেক আমরির ২৪,বেলভিউ ক্লিনিকের ১১৪, ডিসানে ১৬০,ফর্টিসে ৬৮,মেডিকায় ১৬২,আরএন টেগোর হাসপাতালে ৭৩, ও পিয়ারলেসের ১২৯ কোভিড বেডের প্রায় সবকটি ভর্তি।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে হাসপাতালে কোভিড বেডের সঙ্কট মেটাতে পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। সরকারি হাসপাতালে বেড বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।