কলকাতা: রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ, অথচ কলকাতায় বিমল গুরুংয়ের গায়ে হাত লাগাল না পুলিশ। বিজেপির কেউ হলে গ্রেফতার করা হত। এনডিএ ছাড়তেই গুরুংয়ের বিরুদ্ধে সরব বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়।
গতকাল তিন বছর পর আকস্মিক জনসমক্ষে এসে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিজেএম) সুপ্রিমো ঘোষণা করেন, এনডিএ ছাড়ছি। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ গোর্খাল্যান্ড সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি। ২০২১-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়, তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপিকে জবাব দেব। পরদিনই কৈলাস বলেন, ওর বিরুদ্ধে এত কেস দেওয়া হল, অথচ পুলিশ হাত লাগাচ্ছে না। বিজেপির কেউ হলে গ্রেফতার করত। বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বন্ধুত্বে ইতি টানতেই ঘুরিয়ে মোর্চা নেতার গ্রেফতারির দাবি তুলল বিজেপি। সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটের আগেই, পাহাড়ের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত।
২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৯। পরপর তিনটি লোকসভা ভোটেই দার্জিলিং থেকে মোর্চার সাহায্যে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী। এরই মধ্যে ২০১৭-তে দার্জিলিংয়ে অশান্তির জন্য গুরুংয়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা রুজু করে রাজ্য পুলিশ। ২০১৭ –এর ১৭ জুন সিংমারিতে সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনাতেও গুরুং ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়। সেবছরই ১৩ অক্টোবর গুরুংকে ধরতে গিয়ে খুন হন সাব ইন্সপেক্টর অমিতাভ মালিক। সেই মামলাতেও অভিযুক্ত গুরুং। এর পরই গা ঢাকা দেন তিনি। তবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের খবর মাঝেমধ্যেই মিলছে। যে জল্পনা আরও উস্কে দেয় বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার ছেলের বিয়ের ভাইরাল হওয়া ছবি, যাতে গুরুংকে দেখা যায়।
তবে তিন বছর অন্তরালে থাকার পর বুধবার আচমকা কলকাতায় হাজির হয়ে বোমা ফাটিয়ে গুরুং দাবি করেন, পাহাড় নিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি মোদি-শাহ। কিন্তু মমতা কথা রেখেছেন। ঘোষণা করেন, ২০২১-এ মমতা, তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপিকে জবাব দেব। মমতাকে আবার মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাই। ২০২৪-এ যে গোর্খাল্যান্ডের পাশে থাকবে, তাকে সমর্থন করব। পাল্টা বিজয়বর্গীয় বলেন, যাঁর বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের ডায়েরিতে এত মামলা, তিনি কীভাবে বহাল তবিয়তে কলকাতায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন? মমতা কি গোর্খাল্যান্ড চাইছেন?
তৃণমূল অবশ্য এ নিয়ে কোনও উত্তর দেয়নি। বুধবারই তাদের তরফে ট্যুইট করে বলা হয়, এনডিএ ত্যাগ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আস্থা রাখার বিষয়ে গুরুংয়ের সিদ্ধান্তকে স্বাগত। গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে হাতিয়ার করে বিজেপি যে সংকীর্ণ রাজনীতি করেছে এবং তাদের অবিশ্বাসযোগ্য আচরণ এখন সারা বাংলার মানুষের কাছে স্পষ্ট।

এদিকে আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে গুরুংয়ের এনডিএ ত্যাগ কি বিজেপিকে পাহাড়ে ও ডুয়ার্সে বিপাকে ফেলবে? বিজয়বর্গীয়ের জবাব, বিজেপি সমুদ্র, যে দাঁড়াতে পারে সে লাভবান, যে পারে না তাঁর ক্ষতি। দলের কিছু হবে না।
২০১৭-র অশান্তির পর দু-ভাগ হয়ে যায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। প্রথম থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলছে বিনয় তামাং গোষ্ঠী। এবার সেই পথে হাঁটতে শুরু করলেন গুরুংরাও। এবার কি তৃণমূলের হাত ধরে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হবে? এ ব্যাপারে বিনয়পন্থী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক তথা জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপা বলেন, ৩ বছর আগে চাইলে দার্জিলিংয়ের অর্থনৈতিক এত ক্ষতি হত না, আমরাই ঠিক ছিলাম, গণ্ডগোল করে গোর্খাল্যান্ডের দাবি পূরণ হবে না।
বুধবার কলকাতায় এসে ললিত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে ওঠেন গুরুং। বৃহস্পতিবার সারাদিন ঘর থেকে বেরোননি তিনি।