বিজাপুর: চারদিন জঙ্গলে হেঁটে মাওবাদীদের ডেরায় ঢুকে তাদের বুঝিয়ে রাজি করিয়ে অপহৃত স্বামীকে উদ্ধার করে আনলেন ছত্তিশগড়ের এক মহিলা। পুলিশে চাকরি করেন বলে স্বামীকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল মাওবাদীরা।
মে-র প্রথম সপ্তাহে সুনিতা কাট্টামের স্বামী সন্তোষ কাট্টামকে গোরানা গ্রাম থেকে অপহরণ করে মাওবাদীরা। সুনিতা বলেছেন, ৪ মে বিকালে মুদিখানার জিনিসপত্র কিনতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফেরেননি বিজাপুরের ভোপালাপটনম থানায় নিযুক্ত কনস্টেবল সন্তোষ। দুদিন বাদে সুনিতা খবর পান, তাঁকে মাওবাদীরা অপহরণ করেছে। তবে সন্তোষের এর আগে কয়েকবার কাউকে কিছু না বলে আচমকা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নজির থাকায় প্রথমে সুনিতার অপহরণের তত্ত্ব বিশ্বাস হয়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন নিশ্চিত হলেন, মাওবাদীরাই সন্তোষকে তুলে নিয়ে গিয়েছে, সুনিতা পুলিশকে খবর দেন, এলাকায় নিজের পরিচিত লোকজনেদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন যদি তারা কেউ কিছু জেনে থাকে, এই আশায়।
সুনিতা বলেছেন, ঠিক করলাম, শুধু বসে বসে ভেবে গেলে হবে না, ওঁকে উদ্ধারের জন্য নিজেকেই কিছু করতে হবে। মাওবাদীরা কেমন, তা সুনিতার জানা ছিল কেননা তাঁর বাপের বাড়ি মাওবাদী সন্ত্রাসের কেন্দ্রভূমি পাশের সুকমা জেলার জাগরগুন্ডায়। ৬ মে ছোট দুই মেয়েকে বিজাপুর পুলিশ লাইনে বাড়িতে ঠাকুমার কাছে রেখে ১৪ বছরের মেয়ে, এক স্থানীয় সাংবাদিক ও কয়েকজন গ্রামবাসীকে সঙ্গে করে সুনিতা জঙ্গলে ঢোকেন। তিনি বলেছেন, কিছুটা রাস্তা মোটরসাইকেলে গিয়ে তারপর চারদিন ধরে দুর্গম জঙ্গল ভেদ করে চলতে চলতে অবশেষে মাওবাদীদের ডেরার হদিশ পাই।
সেটা ছিল ১০ মে। পরদিন মাওবাদীরা সন্তোষের পরিণতি স্থির করতে গণ আদালত বসিয়েছিল। তখনই ৬ দিনে প্রথম স্বামীকে দেখতে পান সুনিতা। তিনি বলেছেন, গ্রামবাসীরা, আমি সবাই মিলে ওঁকে ছেড়ে দিতে মাওবাদীদের বোঝাই।
তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, সন্তোষকে ছেড়ে দেওয়ার আগে মাওবাদীরা হুঁশিয়ারি দেয়,এরপর পুলিশের চাকরি না ছাড়লে ফল ভাল হবে না।
কী করে এরকম একটা বিপজ্জনক ঝুঁকিতে ভরা পথে পা বাড়ানোর সাহস পেলেন? সুনিতার উত্তর, একজন স্ত্রী তাঁর স্বামীকে রক্ষা করতে যতদূর যেতে হয়, যেতে পারেন। বস্তার রেঞ্জের পুলিশের আইজি সুন্দররাজ পি জানিয়েছেন, সন্তোষের অপহরণের খবর আসার পর নানা সূত্রের মাধ্য়মে তাঁর হদিশ পাওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল, তাঁর পরিবারও উদ্যোগ নিয়েছিল, তাই পাছে মাওবাদীরা সন্তোষের ক্ষতি করে, এই আশঙ্কায় পুলিশ অভিযানে নামেনি।