ঢাকা: বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্বাস্তু শিবির রয়েছে বাংলাদেশে। আর সেখানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ালে কী হবে, তা ভাবতেই শিউরে উঠছেন ত্রাণের কাজে নিযুক্ত কর্মীরা। উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে ঠাসাঠাসি করে থাকা প্রায় লাখ দশেক রোহিঙ্গা মুসলিমদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের কাজ খুবই কঠিন হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন আধিকারিকরা।  প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। প্লাস্টিকের ঝুপড়িতে পাশাপাশি বসবাস। শিবিরে উদ্বাস্তুদের জন ঘণত্ব বাংলাদেশের জনঘণত্বের প্রায় ৪০ গুণ বেশি। তাই এমন জায়গায় ভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।

প্রত্যেকটি ঝুপড়ি প্রায় ১০ বর্গ মিটারের। সেখানেই গাদাগাদি  করে কোনও কোনও ঝুপড়িতে ১২ জনের বসবাস। উদ্বাস্তুদের মধ্যে এখনও কোনও সংক্রমণ ছড়ায়নি। কিন্তু আধিকারিকরা রয়েছেন চরম উদ্বেগের মধ্যে। রাষ্ট্রপুঞ্জ কোনও টেস্ট করছে না। কিন্তু সন্দেহভাজনদের একটি সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশের অতিরিক্ত উদ্বাস্তু,ত্রাণ ও প্রত্যর্পণ কমিশনার মহম্মদ শামসুদ্দোজা বলেছেন, ওদের ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সর্বতো চেষ্টা করছি। মায়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন কক্সবাজার থেকে টেলিফোনে সংবাদসংস্থাকে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। সরকারি দমন-পীড়নের চাপে পড়ে মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ঢল নেমেছিল রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের।

শামসুদ্দোজা বলেছেন, ভালোমানের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের প্রস্তুতি নিয়ে ৩৪ টি শিবিরে পরিস্থিতি সামলানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

কক্সবাজারের শীর্ষ সরকারি প্রশাসক মহম্মদ কামাল হোসেন বলেছেন, নিতান্ত প্রয়োজন থাকলে শিবিরগুলিতে বিদেশিদের যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিদেশীদের সীমাবন্ধ পরিসরে কাজ চালাতে বলা হয়েছে। শিবিরের মধ্যেই ১০০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সহযোগিতায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ ২০০ বেডের একটি হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্বাস্তু এজেন্সি জানিয়েছে, শিবিরগুলির বাইরে উখিয়া ও তেকনাফে ১,২০০ বেড প্রস্তুত করা হচ্ছে।

কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর-এর কমিউনিকেশন অফিসার লুইস ডোনোভান জানিয়েছেন, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন, ইউনিসেফ ও সেভ চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় আরও ১,৭০০ বেড তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

ডোনভান জানিয়েছেন, জল ও সাবান বেশি করে সরবরাহ করা হচ্ছে।  কয়েক হাজার কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে উদ্বাস্তুরাও।

শিবিরগুলিকে কর্মরত অন্য়ান্যদেরও ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে বলা হয়েছে। মসজিদের ইমাম ও স্থানীয়দেরও এই কাজে লাগানো হয়েছে।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯  সংক্রমণের ৫৪ টি ঘটনা সামনে এসেছে।মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের। ইতালি বা অন্য যে সব দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, সেই দেশগুলি ফেরতদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিদেশ ফেরতদের অনেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায়  রাখা বা সেল্ফ কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশিকাকে তোয়াক্কা করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আটকাতে বাংলাদেশে আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষিত হয়েছে। গৃহবন্দি থাকার নিয়ম যাতে পালিত হয়, সেজন্য বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।