রিচার্ডসন, নয়াদিল্লি:  শেরিন ম্যাথুজ বা ছোট্ট সরস্বতী, যে নামেই তাকে ডাকা হোক সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে সকলেই তাকে এখন চেনে। ভারতের গয়ায় ছোট্ট একরত্তি মেয়েকে জঙ্গলে ফেলে চলে যায় তার জন্মদাত্রী মা। তারপর নালন্দায় অপরিচিত মানুষের যত্নে অনাথ আশ্রমে বেড়ে উঠছিল সে।

ছবি সৌজন্যে ফেসবুক

তবে কেরলের এক দম্পতি, বর্তমানে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের বাসিন্দা, ২০১৬ সালের ২৩ জুন তাকে দত্তক নেয়।তবে ভালবাসার বদলে সেখানেও ছোট্ট শিশুটির কপালে জোটে অচ্ছেদা, বেধড়ক মার, ভেঙে যায় হাত, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়ে নানা আঘাতের চিহ্ন। তবে ছোট্ট শিশুর মুখের হাসি ছিল অমলিন। তার দোষ ছিল সে তার বয়সি অন্য পাঁচজন বাচ্চার মতো কথা বলতে পারত না, নিজেকে সঠিকভাবে বোঝাতে পারত না। তার পালক পিতার দাবি, শুধুমাত্র দুধ না খাওয়ার জন্যে শাস্তি দিতে শীতের রাতে গায়ে সামান্য জামা পরে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। ৭ অক্টোবর থেকে নিখোঁজ ছিল সে। তারপর পনেরো দিনের সন্ধান শেষে টেক্সাসের স্থানীয় সময় ২২ অক্টোবর এক রবিবার সকাল এগারোটায় বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে এক কালভার্টের মধ্যে থেকে তার দেহ উদ্ধার হয়েছে। যদিও এখনও মেডিক্যাল পরীক্ষা চলছে দেহটি অফিসিয়ালি তার সেটা প্রমাণের জন্যে। তবে রিচার্ডসন পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, দেহটি যে শিশুটির সেটা ঘোষণা করা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

এদিকে গত ৭ অক্টোবর রাতে দত্তক কন্যা হারিয়ে যাওয়ার পর নিশ্চিন্তে বাড়িতে এসে জামা কাপড় ধুয়েছিল বাবা ওয়েসলি ম্যাথুজ এবং ঘুমিয়ে ছিল মা সিনি ম্যাথুজ। মেয়েকে খোঁজার বদলে আইনজীবী নেয় পালক মা সিনি। মেয়ের দেহ খুঁজে পাওয়ার অনেক আগেই সিনি আইনজীবী মারফত জানিয়ে দেয়, সে শোকাহত। তারপর গত পনেরো দিন পুলিশের সঙ্গে তল্লাশিতে সামান্য সহযোগিতা না করে কার্যত ঘরে দরজা বন্ধ করে বসেছিল ম্যাথুজ দম্পতি। পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের চেষ্টায় অবশেষে খুঁজে পাওয়া যায় একটি শিশুর দেহ, যেটা সম্ভবত শেরিনের।

ছোট মেয়ের দেহ পাওয়ার পরও বাইরে আসে না মা-বাবা। অবশেষে সোমবার, ২৩ অক্টোবর তারা আদালতে যায় তাদের বায়োলজিক্যাল সন্তানের কাস্টডি ফিরে পেতে। তবে আপাতত আদালত সেই শুনানি মুলতুবি রেখেছে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। ম্যাথুজদের বড় মেয়ে ফস্টার কেয়ারেই থাকবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর বিচারকের সিদ্ধান্ত তিনি ওই মেয়েকে ম্যাথুজদের পরিবারের অন্য সদস্যদের হাতে হস্তান্তরিত করবেন কিনা, জানানো হয়েছে রিচার্ডসন পুলিশের তরফে।

ছবি সৌজন্যে ফেসবুক

এদিকে দীর্ঘ পনেরো দিন পর প্রকাশ্যে এলেও সোমবার দুজন পৃথক আইনজীবী নিয়ে আদালতে এসেছিল ম্যাথুজ দম্পতি। তারা শেরিন সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করে। অবশেষে সোমবার দুপুরে শিশুকে আঘাত করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ফার্স্ট ডিগ্রি ফ্যালোনি চার্জ আনা হয়েছে, যেখানে তার যাবজ্জীবন বা পাঁচ থেকে ৯৯ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার দুপুরে রিচার্ডসন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে শেরিনের পালক পিতা আগের যে বয়ান দিয়েছিল, তার থেকে সরে গিয়ে অন্য বয়ান দেয় বলে জানা গিয়েছে। তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়নি, তবে সে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে।

বেঁচে থেকে কার্যত অসহায়, অরক্ষিত ছিল শেরিন। নিজের ওপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে পারেনি সে। রাতের অন্ধকারে একলা হারিয়ে যায় সেই ছোট্ট প্রাণ। তবে আজ পুরো টেক্সাসবাসী তাকে বিচার দেওয়ার জন্যে লড়ছে। হাউস্টনে ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এবিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা না হলেও, তারা পুরো তদন্তের গতিপ্রকৃতির ওপর নজর রাখছে বলে জানা গিয়েছে। বিচার পাবে শেরিন!