নিউ ইয়র্ক: ১১৬ বছর বয়সে মৃত্যু হল বিশ্বের প্রবীণতম মানুষ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা সুজানা মুশ্যাট জোনসের। উনিশ শতকে জন্মানো শেষ জীবিত মার্কিন নাগরিক ছিলেন তিনিই। তাঁর মৃত্যুতে আক্ষরিক অর্থেই একটি যুগের অবসান হল।

 

১৮৯৯ সালের জুলাই মাসে আলাবামায় জন্ম সুজানার। তাঁর ঠাকুর্দা ও ঠাকুমাকে আফ্রিকা থেকে দাসবৃত্তির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ধরে আনা হয়েছিল। বাবা-মা ছিলেন ভাগচাষি। ফলে জন্ম থেকেই দারিদ্র্য ছিল সুজানার নিত্যসঙ্গী।

 

১১ জন ভাই-বোনের মধ্যে সুজানা ছিলেন তৃতীয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে তিনিও চাষের কাজ করতেন। এরই সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েদের স্কুলে চলছিল পড়াশোনা। শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় সেই স্বপ্ন মাঝপথেই বিসর্জন দিতে হয়।

 

১৯২৩ সালে নিউ ইয়র্কে চলে আসেন সুজানা। তিনি ধনী পরিবারগুলিতে পরিচারিকার কাজ শুরু করেন। ১৯২৮ সালে তাঁর বিয়ে হয় হেনরি জোনস নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। কিন্তু বিবাহিত জীবন সুখের হয়নি। পাঁচ বছর পরেই তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। ২০১১ সালে বিয়ে নিয়ে সুজানা বলেছিলেন, তিনি কোনওদিন স্বামীকে বুঝতেই পারেননি।

 

বিবাহ বিচ্ছেদের পর আর কোনও সম্পর্কে জড়াননি সুজানা। বাকি জীবনটা তিনি ভাইপো-ভাইঝিদের সঙ্গেই কাটিয়ে দেন। আফ্রিকান-আমেরিকান মহিলাদের পড়াশোনায় সাহায্য করার জন্য তহবিল তৈরি করার কাজ করে গিয়েছেন তিনি। ১০৬ বছর বয়স পর্যন্ত কর্মক্ষম ছিলেন সুজানা।

 

গত বছর জাপানের মিসাও ওকাওয়া নামে ১১৭ বছর বয়সি এক মহিলার মৃত্যুর পর বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মানুষের খেতাব পান সুজানা।

 

এত বছর বাঁচার রহস্য কী? ১১৬ তম জন্মদিনে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, তিনি অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে কাটান এবং কোনওদিন মদ্যপান বা ধূমপান করেননি। প্রতিদিন ডিম ও বেকন খেতেন তিনি। জীবদ্দশায় দুটি বিশ্বযুদ্ধ, ২০ জন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে দেখেছেন ‘মিস সুজি’। বহু ইতিহাসের সাক্ষী ছিলেন এই প্রবীণা।

 

সুজানার মৃত্যুর পর এখন বিশ্বের প্রবীণতম মহিলা ইতালির এমা মোরানো। তাঁর জন্ম ১৮৯৯ সালের নভেম্বরে।