নয়াদিল্লি: গত ডিসেম্বরে রাজ্য়ের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য় হিসেবে গৌতম আদানির ছেলে কর্ণ আদানিকে রাখার কথা ঘোষণা করেছে বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র সরকার। এই পরিস্থিতিতে পুরোপুরি উল্টো পথে হাঁটল আর এক বিজেপি শাসিত রাজ্য, উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্য়নাথ সরকার। শিল্প সম্মেলনের ঠিক আগে, স্মার্ট মিটার বসানোর জন্য় আদানি গোষ্ঠীর টেন্ডার বাতিল করল উত্তরপ্রদেশ সরকার। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বিজেপি-র মধ্য়ে কোনও চোরাস্রোত বইছে? অনেকে আবার এই ঘটনাকে নরেন্দ্র মোদি এবং যোগী আদিত্যনাথের মধ্যে অলিখিত লড়াইয়ের প্রতিফলন বলে উল্লেখ করছেন।


আদানিকাণ্ডকে হাতিয়ার করে কী ভাবে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই হবে, তা নিয়ে দিল্লিতে বিরোধীদের মধ্যে বড়সড় ফাটল ধরা পড়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলগুলির যৌথ কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না তৃণমূলকে। এ বার মোদির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গৌতম আদানির সংস্থা নিয়ে বিজেপি-র অন্দরেও কার্যত বিভাজন ধরা পড়ল।

উত্তরপ্রদেশে সরকার চালাচ্ছেন যোগী। অন্য দিকে, বিক্ষুব্ধ শিবসেনার গোষ্ঠীকে নিয়ে মহারাষ্ট্রে জোট সরকার চালাচ্ছে বিজেপি। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল এই দুই রাজ্যের সরকারকে আদানিদের নিযে ভিন্ন পথে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। যেমন, গত ডিসেম্বর মাসে রাজ্য়ের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য় হিসেবে আদানির ছেলে কর্ণকে রাখার কথা ঘোষণা করেছিল মহারাষ্ট্র সরকার। কিন্তু একেবারে উল্টো পথে হেঁটেছে যোগীর উত্তরপ্রদেশে।

রাজ্যের বিদ্যুৎ বন্টণকারী সংস্থা DISCOM-কে স্মার্ট মিটার সরবরাহ করার জন্য আদানি গোষ্ঠীকে বরাত দিয়েছিল মধ্যাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ নিগম। ৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার বিনিময়ে, ৭৫ লক্ষ স্মার্ট মিটার সরবরাহের বরাত দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু আদানির বিরুদ্ধে আমেরিকার সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরপরই সেই বরাত বাতিল করা হয়েছে।


গত ৪ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, অনিবার্য কারণে টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি বাইরে থেকে স্বাভাবিক মনে হলেও, তার আঁচ এসে পড়েছে রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠছে, মোদি-ঘনিষ্ঠ আদানির সংস্থার বরাত বাতিল করে কি কোনও কড়া বার্তা দিতে চাইল যোগীর সরকার? সেই সঙ্গে আরও একটি জল্পনা মাথাচাড়া দিয়েছে জাতীয় রাজনীতিতে। মোদির উত্তরসূরি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর আসনের দিকে কি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন যোগী আদিত্যনাথ, এই প্রশ্নও মাথাচাড়া দিচ্ছে।


কারণ,প্রধানমন্ত্রী মোদির বয়স ৭০ পেরিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। সেই তুলনায় যোগী সবে অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। সঙ্ঘের নিয়ম অনুযায়ী, আর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না মোদি। যদিও তাঁকে সামনে রেখেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে লড়ার কথা ইতিমধ্যেই জানিয়েছে বিজেপি। কিন্তু নির্বাচনী জয়ী হলে আদৌ মোদি প্রধানমন্ত্রী হবেন, নাকি যোগীকে তুলে আনা হবে, সেই নিয়ে জল্পনা চলছে।