Ankiti Bose: ২৭ বছরেই ১০ হাজার কোটির সংস্থা, নিজের সংস্থা থেকেই এ বার বহিষ্কৃত বঙ্গতনয়া, যৌন নিগ্রহে মুখ খোলার মাশুল!
যে বয়সে কেরিয়ার নিয়ে খাবি খান আর পাঁচ জন, সেই বয়সে কার্যত সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু এক লহমায় সব হারালোর মুখে বঙ্গতনায় অঙ্কিতি বসু। ফ্যাশন ই-কমার্স সংস্থা ‘জিলিঙ্গো’-র মালিক তথা সহ প্রতিষ্ঠাতা তিনি। নিজের সংস্থা থেকেই এ বার বহিষ্কৃত হলেন অঙ্কিতি। আর্থিক তছরুপের অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appযদিও অঙ্কিতি ঘনিষ্ঠদের দাবি, ম্যানেজমেন্টের হেভিওয়েট একজনের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ এনেছিলেন অঙ্কিতি। চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়ে লাভ না হওয়ায় আইনি পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তার আঁচ পেয়েই বহিষ্কার করা হল তাঁকে।
বাঙালি পরিবারে জন্ম হলেও, বাংলার বাইরেই বেড়ে ওঠা অঙ্কিতির। মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে অর্থনীতি এবং গণিত নিয়ে পড়াশোনা। চাকরিজীবনের শুরু মার্কিন কনসাল্টিং সংস্থা ম্যাকিনজি-রর মুম্বই শাখায়। সেখান থেকে মার্কিন সংস্থা সেকোয়া ক্যাপিটালসের বেঙ্গালুরু দফতরে যোগদান।
তখন তেইশ বছর বয়স অঙ্কিতির। বেঙ্গালুরুতে বছর চব্বিশের ধ্রুব কপূরের সঙ্গে আলাপ হয়। আইআইটি গুয়াহাটি থেকে পড়াশোনা সেরে গেমিং স্টুডিও কিউয়ি আইএনসি-তে সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত ছিলেন ধ্রুব। চাকরি ছেড়ে নিজের মতো কিছু করার স্বপ্ন দেখছিলেন দু’জনেই। তাই ই-কমার্সের জগতে পা রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
ভারতে যেহেতু আগে থেকেই প্রতিযোগিতা বেশি, তাই অন্যত্র ব্যবসা শুরুর কথা ভাবছিলেন অঙ্কিতি এবং ধ্রুব। সেই সময় ব্যাঙ্কক বেড়াতে যান অঙ্কিতি। সেখানকার বাজারে স্থানীয় ডিজাইনারদের তৈরি পোশাক, জুতো, ব্যাগ এবং অ্যাকসেসরিজ দেখে তাক লেগে যায় অঙ্কিতির। বুঝতে পারেন, ভাষাগত সমস্যার জন্য প্রতিভাবান ডিজাইনাররা প্রচার এবং টাকা, দুই থেকেই বঞ্চিত।
সেই দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেবেন বলে তখনই ভেবে নেন অঙ্কিতি। দেশে ফিরে ধ্রুবের সঙ্গে আলোচনা সারেন। চাকরি ছেড়ে ২১ লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে কাজে লেগে পড়েন দু’জনে। টানা একবছর ধরে বাজার নিয়ে গবেষণা চালিয়ে ব্যাঙ্ককের বাজারে ঘুরে ঘুরে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনলাইন ব্যবসায় আগ্রহ গড়ে তুলে শুরু করেন তাঁরা।
এর পর বেঙ্গালুরুতে বসে প্রযুক্তিগত দিকটা সামলাতে শুরু করেন ধ্রুব। আর বাইরের দেশের যাবতীয় কাজকর্ম সামলানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন অঙ্কিতি। বর্তমানে সিঙ্গাপুর,ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, চিন, কোরিয়া এবং কম্বোডিয়ার বাজারে কার্যত একচেটিয়া রাজত্ব ‘জিলিঙ্গো’র।
২০১৯ সালেই অঙ্কিতা এবং ধ্রুবের সংস্থার বাজারমূল্য ছিল ৯ হাজার ৮০০ কোটি। কোনও স্টার্টআপ সংস্থার ব্যবসা ১০০ কোটি মার্কিন ডলারে বাজারে সেটি ইউনিকর্ন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। ‘জিলিঙ্গো’ ঢের আগেই সেই মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেছে।
কিন্তু ব্যবসা যত বাড়ে ততই, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঝামেলা বাড়তে শুরু করে অঙ্কিতির। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে তাঁকে সংস্থা থেকে বহিষ্কৃত হতে হল বলে মনে করছেন অনেকে। অঙ্কিতি হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন, নাকি আইনি পদক্ষেপ করবেন, সেই নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।
যদিও তদন্তের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, বার্ষিক অডিটে প্রচুর অসঙ্গতি চোখে পড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের টাকা নয়ছয় হয়েছে এদিক ওদিক। এর আগে, আন্তর্জাতিক ফোর্বস ম্যাগাজিনের ৩০ এবং ৪০ অনূর্ধ্ব সফল মহিলাদের তালিকায় জায়গা পেয়েছিলেন অঙ্কিতি। ২০১৯ সালে ব্লুমবার্গের ৫০ জন সফলতম মহিলাদের মধ্যেও নাম ছিল তাঁর।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -