Election Results 2024
(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Tota Exclusive: খারাপ সময়ে বিশ্বাস হারাইনি, সাফল্য পেয়েও নিজেকে স্টার ভাবতে চাই না
একবার থমকেও এই বছরটাকে নিজের কেরিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংসই বললেন তিনি। কেনই বা বলবেন না? তিন দশক ধরে টলিউডে যে এমন একজন অভিনেতা কাজ করে যাচ্ছেন.. তাঁকে যেন নতুন করে আবিষ্কার করল ইন্ডাস্ট্রি। ২০ বছর আগে ঋতুপর্ণ ঘোষের (Rituparnao Ghosh) ছবিতে কাজ করে যে প্রশংসা ভাসছিলেন তিনি... সেই স্মৃতিই যেন ফিরিয়ে দিল 'রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি' (Rocky Our Rani Ki Prem Kahani)।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appতবে বলিউডে সাফল্য, প্রশংসা, কাজ.... এ সবকিছু পেলেও, বাংলাকে এখনও এগিয়ে রেখেছেন তিনি। শিকড়ের টান আছে বলেই তাঁকে এখনও সবচেয়ে বেশি ছুঁয়ে যায় বাংলার সবকিছু। তবে এই বছরটা তাঁর কেরিয়ারের অন্যতম সেরা বছর... কী পেলেন.. কী হারালেন ২০২৩-এ? এবিপি লাইভের সঙ্গে, ফেলে আসা বছরকে ফিরে দেখলেন টোটা রায়চৌধুরী (Tota Roychowdhury)।
প্রশ্ন: এই বছরকে আপনার কেরিয়ারের মোড় ঘোরানো বছর বলতে পারি? টোটা রায়চৌধুরী: (একটু হেসে) দেখুন, এই বছরটাকে আমি কেরিয়ারের অন্যতম সেরা বছর বলতেই পারি। কারণ এইরকম প্রশংসা আমি শেষ পেয়েছিলাম ঠিক ২ দশক আগে। যখন আমি আমার কেরিয়ারটা সবে সবে শুরু করেছি। ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম মুক্তি পেল 'চোখের বালি'। সেইসময়ে প্রশংসার বন্যায় ভেসে গিয়েছিলাম। তারপরে আবার ২০ বছর কাজ.. সেই পথ চলা। এই ২০ বছর পরে এসে আমার সেই প্রশংসা, সেই ভালবাসায় ভাবছি। তবে এবার সেই ব্যাপ্তিটা আরও বৃহৎ। কেবল দেশে নয়, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস, সিঙ্গাপুর.... যেখানে যেখানে এই ছবি চলেছে, দর্শক আলাদা করে আমার সম্পর্কে জানতে চেয়েছে এতটাই ভাল একটা চরিত্র পেয়েছিলাম। বলতে পারেন এটা আমার কেরিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস। আমার কাছে একটা নতুন রাস্তা উন্মোচিত হল, সেটা বলিউডের রাস্তা। এর আগেও আমি বলিউডে কাজ করেছি। তবে এভাবে বড় ফিল্মমেকাররা কাজ করতে চাইছেন, ছবি অফার করছেন যে মাঝে মাঝে আমি নিজেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছি কোন ছবিটা করব আর কোনটা করব না। তবে বাংলার জন্যও সময় রাখছি। যেহেতু প্রশংসা আর সুযোগ পাচ্ছি.. চাই না বাংলাকে ভুলে পাকাপাকিভাবে আরব সাগরের তীরেই চলে গেলাম। মুম্বইতে বলাই রয়েছে আমি আসা-যাওয়া করব তবে বাসস্থান থাকবে কলকাতাতেই। বলতে পারেন এটা আমার বঙ্গপ্রীতি।'
প্রশ্ন: আগামী বছরেও তো টলিউড-বলিউড মিলিয়ে কাজ রয়েছে আপনার? টোটা: হ্যাঁ। ভীষণ আকর্ষণীয় কিছু চরিত্র পাচ্ছি। বছরের শুরুটাই হবে 'যাহা বলিব সত্য বলিব' ওয়েব সিরিজের হাত ধরে। 'রকি-রানি'-র পরে ওটাই আমার প্রথম স্বাক্ষর করা কাজ। এর পরে 'চালচিত্র' ছবিটার কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে প্রায়। ওই ছবিটা নিয়ে ও ভীষণ উত্তেজিত। নতুন বছরে একটা নতুন ফেলুদাও শ্যুট হওয়ার কথা। 'নিখোঁজ ২'-এর শ্যুটিংও হবে। আরও বেশ কিছু বাংলা ছবি নিয়ে কথা চলছে। তবে খুব বেশি কাজও নিতেও পারছি না। মুম্বইতে বেশ কিছু কাজ রয়েছে.. সেগুলো ও শেষ করতে হবে। সিরিজ-ছবি সবকিছুরই অফার রয়েছে। ছুটিটা কাটলেই মুম্বইতে ছুটতে হবে। এতটা ব্যস্ত আমি নিজেও হতে চাইনি। তবে আমাদের তো সবসময় কাজের ফ্লো একইরকম হয় না। যখন যেমন সুযোগ আসে, সেটারই সদব্যবহার করার চেষ্টা করি। তবে দর্শকদের কাছে পৌঁছতে পেরেছি, বাংলার দর্শকেরা আমায় নিয়ে গর্ব করছেন, বলছেন, 'বাংলার ছেলে তুমি বাংলার বাইরে এসে নিজের স্বাক্ষর রেখেছো', এটা আমার কাছে যে কোনও অ্যাওয়ার্ডের থেকেও অনেক অনেক বড় প্রাপ্তি।
প্রশ্ন: পর্দায় পা রাখার ৩ দশক পরে, দর্শক কি নতুন করে চিনল টোটাকে? টোটা: দর্শক চিরকালই আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। সবসময়েই তাঁরা দাবি করতেন আমায় আরও ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে দেখার। আমার মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রির চেয়েও দর্শক আমার ওপর বেশি বিশ্বাস রেখেছিলেন। রাখেনও। সেই বিশ্বাস আর ভালবাসাটা ছিল বলেই এতদিন টানতে পেরেছি। সত্যি বলতে মাঝের সময়টায় পায়ের তলার মাটি তো তেমন শক্ত ছিল না। সবসময় একই রকম চলে না কেরিয়ার। দর্শকদের বিশ্বাস-ভালবাসই আমায় ফিরিয়ে এনেছেন। দর্শকেরা আঁচ পেয়েছিলেন আমি কী করতে পারি। এই বছর ইন্ডাস্ট্রি জানতে পারছে, আমি কী করতে পারি।
প্রশ্ন: কেবল দর্শক নয়, খারাপ হয় নিজের ওপরেও তাহলে বিশ্বাস রেখেছিলেন.. টোটা: আমি নিজেকে নিয়ে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। আমি যেমন জানি আমি কী কী করতে পারি, তেমনই নিজের খামতিগুলো নিয়েও ওয়াকিবহাল। যখন তুল্যমূল্য বিচার করতাম, বিশ্বাস করতাম মনের মতো কাজ পাওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা। বিশ্বাস করতাম, উচ্চ পর্যায়ে কাজ পাওয়ার মতো ক্ষমতা আমার আছে। সেই আত্মবিশ্বাসটা ছিল, আছে। বুঝতাম সুযোগ পেলে ভাল কাজ করব... খালি সুযোগটা পাচ্ছিলাম না। এই বছরে সেটা পেলাম...
প্রশ্ন: প্রশংসায় ভাসছেন.. নিজেকে মাটির কাছাকাছি রাখার মন্ত্রটা কী? টোটা: আমি তো নিজেকে কখনও স্টার ভাবিনি। অভিনেতা ভেবেছি। আমি জানি যতদিন আমার ক্ষমতা থাকবে, আমাকে অভিনয় করে যেতে হবে। স্টার হয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ করব কেন? তারকা হওয়ার অনেক বোঝা থাকে.. অনেক নিয়ম মেনে চলতে হয়। আমার মনে হয়... শুধু অভিনেতা হওয়াটা অনেক সোজা। স্টারসুলভ যা কিছু.. আমি একটু এড়িয়েই চলি। অনেকের সেই মানসিকতা রয়েছে, বৃষস্কন্ধ রয়েছে। স্টার হওয়ার গুরুদায়িত্ব আমি নিজের কাঁধে বইতে পারি না। আমি অভিনেতা তাই সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। আসলে যত মানুষ দেখব, মিশব.. ততই অভিনেতা হিসেবে নিজেকে পরিশিলিত করতে পারব।
প্রশ্ন: কেরিয়ারে যেমন ভাল সময় দেখেছেন, খারাপ সময়ও তো এসেছে। কখনও অবসাদ গ্রাস করেনি? টোটা: হতাশা, বিরক্তি একেবারেই আসেনি বললে মিথ্যে কথা বলা হবে। হতাশা, রাগ, বিরক্তি, দুঃখ সবই এসেছে। তবে এই আবেগগুলোই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। আমার কাছে দুটো উপায় রয়েছে। এক, আমি হতাশা-দুঃখের ভারে মাটিতে মিশে গেলাম। বিপথে চালিত হলাম। সেই প্রলোভন, সুযোগ অবশ্য সবসময়েই থাকে। দ্বিতীয়, ওই হতাশাকে ইন্ধন হিসেবে নিয়ে নিজের আরও উন্নতি করা। নিজেকে আরও যোগ্য করে তোলা। আমি খেলাধূলোর জগতের লোক। খেলাধূলো করে বড় হয়েছি। খারাপ সময়ে নিজেকে বুঝিয়েছি যে... ঠিক আছে, এই পারফরম্যান্সে হচ্ছে না.. তাহলে আরও ভাল করতে হবে। আরও ভালতেও হচ্ছে না... তার চেয়েও ভাল করব। যেখানে আমি হাফ চান্সে গোল দেব। একটা সুযোগ পেলেই দেখিয়ে দেব কী করতে পারি। আমার মানসিকতা এই ছিল। ইন্ডাস্ট্রিতে ৩ দশক আমি নিজের মতো করে, নিজের তালেই চলেছি। তাতে অন্তত মানুষের ভালবাসা আর বিশ্বাসের জায়গায়টা তো অর্জন করতে পেরেছি।
প্রশ্ন: বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে নিজের ব্যক্তিজীবনকে কি ইচ্ছাকৃতভাবেই আড়ালে রাখেন? টোটা: আমি চাই আমায় নিয়ে চর্চা হোক শুধুমাত্র আমার কাজের জন্য। এই বিষয়ে আমি ভীষণ কঠোর। আমার ব্যক্তিগত জীবন একেবারেই ব্যক্তিগত। সেটা নিয়ে কেউ আলোচনা করুক, চর্চা করুক আমি চাই না। পর্দার বাইরে আমি কী করে, কেমনভাবে করি সেটা যতটুকু আমি জানাতে চাই, ততটুকুই জানাব। আমি মানুষকে যতটুকু জানাচ্ছি.. তার চেয়ে বেশি আমি চাই না। আমি তো নিজেকে স্টার মনে করি না। আমি ফলোয়ার্স সংখ্যা দিয়ে নিজের স্টেটাস বিচার করি না। আমার ফলোয়ার্স ভীষণ কম। তবে যাঁরা আছেন তাঁরা প্রকৃতই আমায় ভালবাসেন। কোনও চমকের জন্য নয়।
প্রশ্ন: ক্রিসমাস আর বর্ষশেষ.. ফিটনেস ফ্রিক টোটার ডায়েটে এর কোনও প্রভাব পড়ে নাকি? টোটা: (হেসে) এই সময়টা তো কেক আর নলেন গুড়ের সিজন। তাই ডায়েটটা একটু দূরেই রাখি আমি। আর প্রত্যেক বছর পার্কস্ট্রিটে যাওয়া আমার অভ্যাস। টুপি আর মাস্ক পরে হাঁটি.. সাজানো শহরটাকে দেখতে বেশ লাগে। তবে এই বছর গাড়ি করেই ঘুরলাম। পায়ে হেঁটে ঘোরার আর সাহস হল না...
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -