৪৫ দিনে ১২ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা! চিন-পাকিস্তানকে একসঙ্গে হুঁশিয়ারি ভারতের
সাবমেরিন বিধ্বংসী টর্পেডো সিস্টেম স্মার্ট --- ৫ অক্টোবর, সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি স্মার্ট টর্পেডো সিস্টেমর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে ভারত। ডিআরডিও জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ভবিষ্য়তে সাবমেরিন-বিধ্বংসী রণনীতি ও রণকৌশলের ক্ষেত্রে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে। ডিআরডিও জানিয়েছে, ওড়িশার হুইলার দ্বীপ (অধূনা এপিজে আব্দুল কালাম দ্বীপ) থেকে সুপারসনিক মিসাইল অ্যাসিসটেড রিলিজ অফ টর্পেডো (স্মার্ট) ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রক জানায়, পরীক্ষায় পাল্লা ও উচ্চতা পর্যন্ত ক্ষেপণাস্ত্রের উড়ান, অগ্রভাগ থেকে বিচ্ছিন্নকরণ, টর্পোডো নিক্ষেপ এবং ভেলোসিটি রিডাকশন মেকানিজম (ভিআরএম) সহ অভিযানের সমস্ত লক্ষ্য নিখুঁতভাবে পূর্ণ হয়েছে।
জাহাজ-বিধ্বংসী মিসাইল উড়ান --- ২৩ অক্টোবর আরবসাগরে মোতায়েন ভারতীয় নৌসেনার মিসাইল করভেট শ্রেণির রণতরী আইএনএস প্রবাল থেকে জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র উড়ান-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়। প্রতিরক্ষামন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, নিখুঁতভাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে এই ক্ষেপণাস্ত্রটি। এই উৎক্ষেপণের একটি ছোট ভিডিও প্রকাশ করে নৌসেনা। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ১৩০ কিমি। এর আগে, ১৮ অক্টোবর নৌসেনার স্টেলথ ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ আইএনএস চেন্নাই থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় ভারত-রুশ যৌথ উদ্যোগে তৈরি সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রহ্মোস।
হাইপারসনিক ভূমি থেকে ভূমি মিসাইল শৌর্য ৩ অক্টোবর, সম্পূর্ণ দেশে তৈরি পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম হাইপারসনিক শৌর্য মিসাইলের সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে ভারত। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি আদতে নৌবাহিনীর কে-১৫ সাগরিকা মিসাইলের একটি উন্নত সংস্করণ। ভূমি থেকে ভূমি হাইপারসনিক এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৭০০ থেকে ১০০০ কিমি। বহনক্ষমতা ২০০-১০০০ কেজি। সর্বোচ্চ গতি শব্দের ৭.৫ গুণ। ওড়িশার বালাসোরের কাছে এপিজে আব্দুল কালাম দ্বীপে অবস্থিত ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জের চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে নিক্ষেপ করা হয়। ১০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন প্রায় ৬.২ টন। প্রতিরক্ষামন্ত্রক জানিয়েছে, বিশ্বের সেরা ১০ মিসাইলের অন্যতম হতে চলেছে শৌর্য।
স্ট্যান্ড-অফ অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল সন্ত --- ১৯ অক্টোবর, সামরিক বাহিনীর শক্তি-বৃদ্ধির লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ নেয় ভারত। ওড়িশার উপকূলবর্তী বালাসোরে অবস্থিত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাস্থলে স্ট্যান্ড-অফ অ্যান্টি ট্যাঙ্ক (সন্ত) মিসাইলের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে ডিআরডিও। মূলত, ভারতীয় বায়ুসেনার জন্যই এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে। বায়ুসেনার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে ডিআরডিও-র অধীনস্থ সংস্থা ইমারত। এটি মূলত বাহিনীতে আগে থেকেই ব্যবহৃত হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপযোগ্য ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী হেলিনা ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নত সংস্করণ। এর পাল্লা আগের ৮ কিমি থেকে দ্বিগুণ করে ১৫ কিমি করা হয়েছে। রুশ-নির্মিত এমআই-৩৫ হেলিকপ্টার থেকে এটি নিক্ষেপ করা যাবে।
অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইল রুদ্রম ১ --- ৯ অক্টোবর ভারতের প্রতিরক্ষার এক ঐতিহাসিক দিন। ডিআরডিও-র তৈরি দেশের প্রথম অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইল (এআরএম) বা রেডার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হয়। পূর্ব উপকূলের বালাসোরে এই আকাশ থেকে ভূমি (এএসএম) ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করা হয়। শব্দের চেয়ে দুগুণ বেগে যেতে সক্ষম রুদ্রম-১ ক্ষেপণাস্ত্রটি নিমেষের মধ্যে শত্রুর যে কোনও রেডার ও রেডিয়েশন-নির্ভর নজরদারি ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম। নতুন প্রজন্মের এই ক্ষেপণাস্ত্রকে দেশের প্রথম সারির ফাইটার জেট সুখোই-৩০ এমকেআই-এর সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই মিসাইলকে মিরাজ-২০০০, জাগুয়ার, তেজস ও তেজস মার্ক-২ যুদ্ধবিমানের থেকেও নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে। ২৫০ কিমি পাল্লা বিশিষ্ট ওই ক্ষেপণাস্ত্রটির ওজন প্রায় ১৪০ কেজি।
পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম মিসাইল পৃথ্বী-২ --- ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম ভূমি থেকে ভূমি স্বল্পপাল্লার পৃথ্বী-২ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে ডিআরডিও। ওড়িশার সমুদ্র উপকূলবর্তী চাঁদিপুর থেকে এই মিসাইলটির উৎক্ষেপণ করা হয়। ৩৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুকে অতি সহজেই আঘাত করতে সক্ষম এটি। এই মিশাইল পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম। স্বল্পপাল্লার এই ভূমি থেকে ভূমি এই ক্ষেপণাস্ত্র ৫০০ থেকে ১ হাজার কিলোগ্রাম ওজন বহন করতে পারে। নিপুণ দক্ষতায় সঙ্গে লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে এর জুড়ি নেই বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল (এটিজিএম) নাগ --- ২২ অক্টোবর, ওয়ারহেড সমেত নাগ অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইলের (এটিজিএম) চূড়ান্ত ইউজার ট্রায়াল সফলভাবে সম্পন্ন করে ডিআরডিও। তৃতীয় প্রজন্মের এই ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হয় রাজস্থানের পোখরানে। নাগ মিসাইল ক্যারিয়াল (নামিকা) থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ করা হয়। ‘ডামি’ লক্ষ্যবস্তুকে একেবারে নিখুঁতভাবে আঘাত হানে এই মিসাইল। এর ফলে, এখন ভারতীয় সেনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত নাগ এটিজিএম। চার কিমি পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে ‘ইনফ্রারেড ইমেজিং সিকার’।
লেজার গাইডেড অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল (এটিজিএম) --- ১ অক্টোবর, দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি লেজার গাইডেড অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল (এটিজিএম)-এর পরীক্ষা করে ডিআরডিও। মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরে সেনার প্রধান যুদ্ধট্যাঙ্ক এমবিটি অর্জুন থেকে ওই পরীক্ষা করা হয়। ৫ কিমি পাল্লার ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি একাধিক জায়গা থেকে নিক্ষেপ করা যায়। বর্তমানে ট্যাঙ্কের মূল ১২০ এমএম কামান থেকে নিক্ষেপ করার পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রে রয়েছে হিট ওয়ারহেড, যা শত্রুর উচ্চ-সুরক্ষিত আর্মার্ড ভেহিকল (সাঁজোয়া) -র বর্মকে ভেদ করতে সক্ষম।
হাইপারসনিক টেকনোলজি ডেমনস্ট্রেটর ভেহিকল এইচএসটিডিভি --- পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণের এই ধারা শুরু হয়েছিল ৭ সেপ্টেম্বর। পূর্ব উপকূলে এপিজে আবদুল কালাম দ্বীপ থেকে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হাইপারসনিক টেকনোলজি ডেমন্সট্রেটর ভেহিকল (এইচএসটিডিভি)-এর সফল উৎক্ষেপণ করে ভারত। শব্দের তুলনায় ৬ গুণ গতি নিয়ে মাত্র ২০ সেকেন্ডে ৩২.৫ কিমি (২০ মাইল) উচ্চতা পর্যন্ত ছুটে যেতে পারে। ভবিষ্যতে অধিক-উচ্চগতি (হাইপারসনিক) এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে পেটে ভরে অনেকটা দূর পর্যন্ত বহন করতে সক্ষম এই বিশেষ যান।
দূরপাল্লার ব্রহ্মোস --- ৩০ সেপ্টেম্বর, ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের একটি দূরপাল্লার সংস্করণের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে ভারত। প্রতিরক্ষামন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি ৪০০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ওড়িশার বালাসোরের কাছে এপিজে আব্দুল কালাম দ্বীপে অবস্থিত ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ থেকে নিক্ষেপ করা হয় ক্ষেপণাস্ত্রটি। পূর্ব লাদাখ সীমান্তে চিনের সঙ্গে সংঘাতের আবহ তৈরি হওয়ায় সেখানে ইতিমধ্যেই ২৯০ কিমি পাল্লা মূল ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে ভারত। শব্দের চেয়ে প্রায় তিনগুণ গতিতে উড়তে সক্ষম এই মিসাইলের স্থল, নৌ ও বায়ুসেনা সংস্করণ ভারতের হাতে রয়েছে।
পূর্ব লাদাখ সীমান্তে চিনের সঙ্গে জোর সংঘাতের আবহের মধ্যেই দেশের প্রতিরক্ষার স্বার্থে পরপর ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ চালাল ভারত। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, গত ২ মাসে অর্থাৎ, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ১২টি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ চালিয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও। দেশের প্রথম অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইল রুদ্রম থেকে শুরু করে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্রের দূরপাল্লার সংস্করণ -- একটার পর একটা সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। ৪৫ দিনে এক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ও উইপন সিস্টেমের পরীক্ষা করে কার্যত বিশ্বের তাবড় তাবড় সুপারপাওয়ার দেশগুলিকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ভারত। একটা বিষয়ে পরিষ্কার যে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে ভারত যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে চাইছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, এই দেড় মাসে ভারত কী কী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে নিজের শক্তিবৃদ্ধির পরিচয় দিয়েছে।
সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রহ্মোস --- ১৮ অক্টোবর, আরবসাগরে মোতায়েন দেশে তৈরি নৌসেনার স্টেলথ ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ আইএনএস চেন্নাই থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয় ভারত-রুশ যৌথ উদ্যোগে তৈরি সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রহ্মোস। ওই পরীক্ষায় উচ্চ-স্তরের এবং অত্যন্ত জটিল কৌশল খতিয়ে দেখা হয়। নিখুঁতভাবে ওই ক্ষেপণাস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত ঘরে ধ্বংস করে। শব্দের চেয়ে প্রায় তিনগুণ গতিতে চলা ২৯০ কিমি পাল্লার ওই ক্ষেপণাস্ত্রের স্থল, নৌ ও বায়ুসেনা সংস্করণ রয়েছে।
হাই-স্পিড এক্সটেন্ডবল এরিয়াল টার্গেট ভেহিকল অভ্যাস --- ২২ সেপ্টেম্বর, দেশে তৈরি প্রথম হাই-স্পিড এক্সটেন্ডবল এরিয়াল টার্গেট (হিট) ভেহিকল অভ্যাস-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে ডিআরডিও। ওড়িশার চাঁদিপুরের কাছে ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ থেকে এই পরীক্ষা চালানো হয়। ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার ক্ষেত্রে অভ্যাস-কে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।