Election Results 2024
(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
Subrata Roy Demise: ১০ টাকা নিয়ে ২০ টাকা ফেরত, গরিবের আস্থা অর্জন করেই সাফল্য, সুব্রত ‘ব্যাড বয়’ হলেন যেভাবে...
দেশভাগের ক্ষত নিয়ে পূর্ববঙ্গ থেকে চলে আসতে হয়েছিল পরিবারকে। প্রবাসী বাঙালি পরিবারের ছেলে, দুপুরের ভাতঘুম ধাতে সইত না। বরং যা কিছু হারিয়েছেন, সব ফেরত আনা, আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন ডানা মেলেনি শুধু, গোটা আকাশ প্রায় দখল করেছিলেন সাহারাকর্তা সুব্রত রায়। ৭৫ বছর বয়সে জীবনাবসান হল তাঁর। সাফল্যের পাশাপাশি রেখে গেলেন বিতর্কের দীর্ঘ ইতিহাসও।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appবিহারের আরারিয়ায় জন্ম সুব্রতর। কলকাতার হোলি চাইল্ড স্কুলে পড়াশোনা করেন। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন গোরক্ষপুরের গভর্নমেন্ট টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে। গোরক্ষপুরেই প্রথম ব্যবসায় হাত দেন। কিন্তু চাইলেই তো আর হয়ে যায় না, ব্যবসায় মূলধন লাগে।
১৯৭৬ সালে ধুঁকতে থাকা সাহারা ফাইনান্স সংস্থায় যোগ দেন সুব্রত। ওই সংস্থা চিটফান্ড চালাত। সেটির দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন। সংস্থার চিটফান্ড শাখাকে মাথা তুলে দাঁড় করাতে অভিনব পন্থা নেন সুব্রত।
কর্পোরেট অফিস, ব্যাঙ্ক, নেতা-মন্ত্রীদের দরজায় হত্যে দিয়ে পড়ে থাকার পরিবর্তে, মূলধন জোগাড়ে দরিদ্র-মধ্যবিত্তের দরজায় হাজির হন তিনি। দিন আনি দিন খাই পরিবার, ব্যাঙ্কে পাসবুক খুলে টাকা জমানোর সাধ্য নেই যাঁদের, তাঁদের দ্বারস্থ হন সুব্রত। ১০, ২০, ৫০, ১০০, যাঁর যেমন সামর্থ্য তেমন টাকা সংগ্রহ করেন সুব্রত। সেই টাকা দ্বিগুণ করে ফেরতও দেন। ফেল অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষের আস্থা অর্জনে সফল হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের বিশ্বাস ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
ধীরে ধীরে চিটফান্ড থেকে হসপিট্যালিটি, সংবাদমাধ্যম, রিয়েল এস্টেটের দুনিয়াতেও পা রাখেন সুব্রত। ‘সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার’ নামে নিজের আস্ত সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তিনি। সুব্রতর নেতৃত্বে সাহারা ইন্ডিয়ার ব্যবসা ডানা মেলে। ১৯৯২ সালে হিন্দি ভাষায় ‘রাষ্ট্রীয় সাহারা’ নামের সংবাদপত্রের সূচনা হয়।
এর পর পুণের কাছে বহুচর্চিত ‘অ্যাম্বি ভ্যালি সিটি’ প্রকল্প। ‘সাহারা টিভি’র মাধ্যমে টেলিভিশন জগতেও প্রবেশ করেন সুব্রত, পরে নাম পাল্টে চ্যানেলটি ‘সাহার ওয়ান’ হয়। লন্ডনের গ্রসভেনর হাউজ হোটেল এবং নিউ ইয়র্কের প্লাজা হোটেলও অধিগ্রহণ করেন সুব্রত।
ভারতীয় রেলের পর সাহারা ইন্ডিয়াকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থানের মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক ‘টাইম ম্যাগাজিন’। সেই সময় সাহারা ইন্ডিয়ার বেতনভোগী কর্মিসংখ্যা ছিল ১২ লক্ষ। ভারতীয় মধ্যবিত্ত পরিবারে ৯ কোটি মানুষ বিনিয়োগ করেছিলেন সুব্রতর সংস্থায়। কিন্তু এত সাফল্য পেয়েও, তা ধরে রাখতে পারেননি সুব্রত। চিটফান্ডের বিপুল টাকা তছরুপ থেকে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে।
সেই মামলার তদন্ত চলাকালীন ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা SEBI-কে ৫ কোটি নথি পাঠান সুব্রত। ১২৭টি ট্রাক ডেকে এনে সেই নথি পৌঁছে দেওয়া হয় SEBI-র দফতরে। কিন্তু সেই নথির সিংহভাগই ভুয়ো ছিলে বলে পরবর্তীতে উঠে আসে আদালতে।
সাহারা দুর্নীতি মামলায় দরিদ্র-মধ্যবিত্তের থেকে নেওয়া টাকা ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। SEBI-র সঙ্গে সাহারার জয়েন্ট রিফান্ট অ্যাকাউন্টও তৈরি করা হয় তার জন্য। সাহারাকে ৩৬০ কোটি টাকা ডলার জরিমানা করে সুপ্রিম কোর্ট, ভারতের ইতিহাসে এত টাকা জরিমানার নজির আর নেই। সুব্রতর মুখে কালিও ছিটনো হয়।
সাহারার দু’টি সংস্থায় বিনিয়োগ করা ৩ কোটি মানুষের টাকা ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয় SEBI. কিন্তু লক্ষ লক্ষ খেটে খাওয়া মানুষ তার বাইরেও সাহারার বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছিলেন। মরিয়া লড়াই চালিয়েও সেই টাকা আজও ফেরত পাননি তাঁরা।
অথচ ২০০৪ সালে সুব্রত নিজের ছেলেদের বিয়েতে ৬ কোটি ডলার খরচ করেন। অতিথির সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার। প্রধানমন্ত্রী থেকে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, বলিউড তারকারা ছিলেন নিমন্ত্রিতের তালিকায়।
দরিদ্র পরিবারের ১০১ তরুণীর বিয়েও দেন সুব্রত, তাও আবার জাঁকজমক করে। আদ্যোপান্ত পারিবারিক ব্যক্তি হিসেবে নিজের ভআবমূর্তি গড়ে তোলেন। কিন্তু গোটাটাই পরিকল্পনা ছিল বলে পরে দাবি করেন তদন্তকারীরা।
শোনা যায়, দরিদ্র মানুষের কাছে নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি রূপে তুলে ধরতেন সুব্রত। মানুষ তাঁর পা ধরে কার্যত লুটোপুটি খেতেন। সকলে তাঁকে ‘রক্ষাকর্তা’ বলে সম্বোধন করতেন। কেউ কেউ আবার বলতেন ‘গুরু’, ‘গরিবের ভগবান’। সাহারার কর্মীরা সুব্রতকে ‘সাহারাশ্রী’ বলে সম্বোধন করতেন। তাঁকে হেঁটে যেতে দেখলে ‘সাহারা প্রণামও’ করতে হতো সকলকে।
পাশাপাশি, সেলাম ঠুকে, বুকে হাত রেখে অভিবাদনও জানাতে হতো। এমনকি সাহারার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব বাজাজকে চুলের রং কালো করে ফেলতে হয়, যাতে সুব্রতর সঙ্গে মানানসই লাগে। দুর্নীতিগ্রস্তদের নিয়ে নেটফ্লিক্সের ‘ব্যাড বয় বিলিয়নেয়ার্স: ইন্ডিয়া’ তথ্যচিত্রে ঠাঁই হয়েছে সুব্রতরও।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -