Iran Protests: বেছে বেছে ছাত্রীদের উপর রাসায়নিক হামলা! রহস্যজনক ভাবে ইরানে অসুস্থ ১ হাজার মেয়ে
আলগা হিজাব পরার ‘অপরাধে’ প্রাণ গিয়েছে মেহসা আমিনির। তার পর পাঁচ ছ’মাস কাটতে চললেও, এখনও উত্তপ্ত ইরান। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশ-বিদেশেও সাড়া পড়ে গিয়েছে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appসেই আবহেই আরও মারাত্মক অভিযোগ উঠে আসছে ইরান থেকে। অভিযোগ, রহস্যজনক ভাবে গত কয়েক মাস ধরে স্কুলে যাওয়া মেয়েরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে সেখানে। এর নেপথ্যে রাসায়নিক হামলাকে দায়ী করছেন ইরানের সাধারণ নাগরিকরা।
গত বছর নভেম্বরে প্রথম বার কোম প্রদেশে রহস্যজনক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে স্কুল পড়ুয়া এক মেয়ে। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি এমন ঘটনা সামনে এসেছে। দেশের বিভিন্ন প্রদেশে প্রায় ৫৮টি স্কুলে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি সামনে এসেছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে ইরানের ২৬টি স্কুলে রাসায়নিক হামলা চালানো হয়েছে। তাতে আচমকা শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, অবসন্ন হয়ে পড়ে স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা।
এই মুহূর্তে একাধিক স্কুলের পড়ুয়ারা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। যারা সুস্থ আছে, স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদের। রাসায়নিক হামলা থেকে রক্ষা করতে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোই বন্ধ করে দিয়েছেন অভিভাবকরা।
বিষয়টি আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছতে সময় লাগেনি। তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লা আলি খামেইনি খোদ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। এমন কিছু ঘটে থাকলে, তা ক্ষমার যোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দোষীদের কড়া শাস্তির কথাও বলেছেন।
কিন্তু তাতেও ভরসা পাচ্ছেন না ইরানের সাধারণ মানুষ। কারণ বিগত কয়েক মাস ধরে এমন অভিযোগ উঠলেও, সরকারের তরফে বার বার বিবৃতি বদল করা হয়েছে বলে দাবি তাঁদের। এমনকি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে যাওয়া এক সাংবাদিককে গত সপ্তাহে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
ইরানের সাধারণ মানুষের একাংশের ধারণা, মেহসার মৃত্যুতে সেপ্টেম্বর মাস থেকে পরিস্থিতি যেভাবে উত্তপ্ত হয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক মহলে বিপাকে পড়েছে ইরান সরকার। তার হিসেব-নিকেশ করতেই পরিকল্পিত ভাবে মেয়েদের স্কুলে রাসায়নিক হামলা চালানো হচ্ছে। কারণ আন্দোলনের অগ্রভাগে রয়েছে মূলত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুলের মেয়েরাই।
রাসায়নিক হামলা কোন পদ্ধতিতে চালানো হচ্ছে, এর নেপথ্যে কে বা কারা রয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয় যদিও। সরকারি নির্দেশে দেসের সংবাদমাধ্যমও বিষয়টি নিয়ে নীরব বলে অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীন তদন্তের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের কাছে তব্দির করেছে বিভিন্ন দেশ এবং সংগঠন।
কেউ কেউ যদিও স্কুলে পাঠরত মেয়েদের আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়াকে রাসায়নিক হামলার ফলশ্রুতি বলতে নারাজ। মানসিক অসুস্থতার জেরেই এমন পরিস্থিতি বলে দাবি তাঁদের। কিন্তু একসঙ্গে এবং পর পর এত মেয়ের অসুস্থ হয়ে পড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।
কারণ এর আগে, ২০১২ থেকে ’১৬ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে স্কুলে পাঠরত মেয়েদের উপর বিষপ্রয়োগের এমন অভিযোগ সামনে এসেছিল। সেবারও মানসিক দুর্বলতা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোনও রাসায়নিক গ্যাস বা বিষেরও নমুনা পাওয়া যায়নি।
তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, বিষাক্ত পদার্থের অবক্ষয় শুরু হয় দ্রুতই।বিশেষ করে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের মতো রাসায়নিক। ইতিমধ্যে ইরান সরকারের একটি তদন্তেও তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। স্কুল চত্বরে সন্দেহজনক কিছু উড়ে এসে পড়তে দেখেছেন, এমন দাবিও করেছেন অনেকে।
আফগানিস্তানের মতো ইরানে মেয়েদের শিক্ষায় যদিও নিষেধাজ্ঞা বা বিধিনিষেধ নেই। বরং সেখানে মেয়েদের শিক্ষায় বিশেষ করে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু একাধিক ক্ষেত্রে স্কুলে পড়া মেয়েদেরই হামরলার শিকার হতে দেখা গিয়েছে। গ্লোবাল এডুকেশন ফ্রম অ্যাটাক-এর একটি রিপোর্টে বলা হয়, অস্থিরতা এবং সংঘাতের পরিবেশ রয়েছে এমন ১৮টি দেশে ২০১৪ থেকে ’২০১৮ সাল পর্যন্ত বার বার স্কুলে পড়া মেয়ে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর হামলা হয়েছে বা তাঁদের নিশানা করা হয়েছে। সেই দেশগুলি হল, আফগানিস্তান, ক্যামেরুন, কলম্বিয়া, কঙ্গো, মিশর, ভারত, ইরাক, লিবিয়া, মালি, মায়ানমার, নাইজিরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলা এবং ইয়েমেন।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -