Aurangzeb: হারেমবাসিনীর সঙ্গে প্রেম ভাইয়ের, শাহজাহানকে জানিয়ে দেন দারা! হীরাবাইয়ের মৃত্যুতে পাগলপারা হয়ে যান ঔরঙ্গজেব
ইতিহাসে তাঁর মতো বিতর্কিত চরিত্র বোধহয় আর নেই। ইদানীং কালে তাঁকে নিয়ে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, আগে কখনও তেমনটা হতে দেখা যায়নি। তা সত্ত্বেও মোগল বাদশাহ ঔরঙ্গজেবকে নিয়ে কৌতবহলের সীমা নেই।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appকিন্তু রাজনীতি, বিতর্কের ঊর্ধ্বে মানুষ ঔরঙ্গজেবকে নিয়ে আলোচনার অবকাশ সীমিতই। মোঘল বাদশাহ তো বটেই, সেই সময় হিন্দু রাজাদের মধ্যেও বহুবিবাহ, তার বাইরে অন্য সম্পর্কের চল ছিল। কিন্তু ঔরঙ্গজেব সম্পর্কে বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে অন্য সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার কথা শোনা যায় না।
এমনকি বাবা শাহজাহানের থেকে চরিত্রগত ভাবেও ঔরঙ্গজেব ভিন্ন ছিলেন বলে মত ইতিহাসবিদদের। কোরান অনুবাদ করে, টুপি সেলাই করে নিজের সমাধির টাকা জমা রেখে গিয়েছিলেন নিজেই। নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি, দুঃখ, যন্ত্রণাও নিজের মধ্যেই রেখে দিয়েছিলেন তিনি। কখনও তা নিয়ে ঢোল পেটাতে যাননি।
ঔরঙ্গজেব তখন দাক্ষিণাত্যের গভর্নর। ঔরঙ্গাবাদ যাওয়ার পথে বুরহানপুরে মাসির বাড়িতে দাঁড়ান। সেখানে মেসোমশাই সইফ খানের হারেমে থাকা হীরাবাইয়ের প্রেমে পড়েন ঔরঙ্গজেব।
ইতিহাসে যে তথ্য পাওয়া যায়, তা হল, হীরাবাই কোকিলকণ্ঠী ছিলেন। অসম্ভব ভাল গান গাইতেন। নৃত্যকলাতেও ছিলেন পটীয়সী। ঔরঙ্গজেব ওই হারেমে গেলেও, তাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করেননি হীরাবাই। বরং গাছ থেকে আম পাড়তে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তাঁর এই আচরণই মনে ধরে ঔরঙ্গজেবের।
এমনিতে ধর্মপ্রণ মুসলিম ছিলেন ঔরঙ্গজেব। কিন্তু সঙ্গীতের প্রতি অসম্ভব অনুরাগ ছিল তাঁর। নিজে বীণা বাজাতেন। হীরাবাইয়ের গানই তাঁর প্রতি আকর্ষিত করে তোলে ঔরঙ্গজেবকে। এতটাই মোহিত ছিলেন ঔরঙ্গজেব যে হীরাবাইয়ের কথায় সুরাপানেও রাজি হয়ে যান। কিন্তু শেষ মেশ হীরাবাই-ই তা করতে দেননি তাঁকে।
ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে, হীরাবাইকে মেসোমশাইয়ের হারেম থেকে বের করে আনতে দাবি জানান ঔরঙ্গজেব। সেই নিয়ে বিস্তর টানাপোড়েনও চলে। এর পর ঔরঙ্গজেবের হারেমে ঠাঁই হয় হীরাবাইয়ের, সেই অনুযায়ী নামের শেষে যোগ হয় জায়নাবাদী মহল।
হীরাবাই ছিলেন কাশ্মীরি হিন্দু পরিবারের মেয়ে। মা-বাবা তাঁকে বাজারে বিক্রি করে দিয়ে যান বলে দাবি করা হয়। শেষ মেশ মোগল হারেমে ঠাঁই হয় তাঁর। তাঁর প্রতি ঔরঙ্গজেবের এই অনুরাগ চাপা থাকেনি। দারা শুকোই বিষয়টি শাহজাহানের কানে তুলে দেন।
দৌলতাবাদ যাওয়ার সময় ঔরঙ্গজেবের সঙ্গী হন হীরাবাই। শোনা যায়, সেই দীর্ঘ যাত্রার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন হীরাবাই। ১৬৫৩ সালের নভেম্বর মাসে যাত্রা শুরু হয়। ১৬৫৪ সালে মারা যান হীরাবাই।
হীরাবাইয়ের মৃত্যুতে ঔরঙ্গজেব দিশেহারা হয়ে পড়েন বলে উল্লেখ রয়েছে সমকালীন রচনায়। জানা যায়, শিকারের নাম করে সেই সময় গভীর জঙ্গলে বেরিয়ে পড়তেন ঔরঙ্গজেব। তা নিয়ে কবি মীর আসকরি ওরফে আকিল খানকে সাবধান করতে এলে ঔরঙ্গজেব জানান, একা থাকলে অন্তত নিশ্চিন্তে কাঁদতে পারেন তিনি।
হীরাবাইয়ের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগও ত্যাগ করেন ঔরঙ্গজেব। জীবনে কখনও আর সুরা ছুঁয়েও দেখেননি তিনি। আজকের দিনে তাঁকে নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও, তিনিও যে একেবারে ভেঙেচুরে গিয়ে কাউকে ভালবেসেছিলেন, ইতিহাসেই তার উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে ইতিহাসবিদদের কারও কারও মতে ইতিহাসে ঔরঙ্গজেবের মতো আর কাউকে এত ভুল বোঝা হয়নি।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -