Subrata Roy-Amitabh Bachchan: ভিটেমাটি হারাতে হয়নি, বিপদে কাঁধে পেয়েছিলেন ভরসার হাত, সুব্রতর মৃত্যুতে অমিতাভের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন
সাফল্য যেমন পেয়েছিলেন, তেমন পিছু ছাড়েনি বিতর্কও। কর্মজীবনের শুরুতে ‘গরিবের ঈশ্বর’ হয়ে উঠেছিলেন যেমন, জীবনসায়াহ্নে আবার নামের পাশে জুড়ে গিয়েছিল, দুর্নীতিগ্রস্ত, ‘ব্যাড বয়’ তকমা।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appসাহারাকর্তা সুব্রত রায়ের জীবন বরাবরই এমন বৈপরীত্যে ভরা। তাই তাঁর প্রয়াণে প্রকাশ্যে কেউ না শোকপ্রকাশ করতে পেরেছেন, না উগরে দিতে পেরেছেন ক্ষোভ। রাজনীতি থেকে বলিউড সর্বত্র দহরম মহরম ছিল সুব্রতর। কিন্তু তাঁর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুষ্টিমেয় কিছু লোকজনই।
তবে যাঁর নীরবতা সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে, তিনি হলেন বলিউডের ‘বিগ বি’, অমিতাভ বচ্চনের। একসময় সুব্রত এবং অমিতাভকে দেখে রক্তের সম্পর্ক নেই বলে বোঝা যেত না। কিন্তু সেই সুব্রতর প্রয়াণে অমিতাভের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এমনিতে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মাইক্রোব্লগিং সাইটে লেখালেখি করেন অমিতাভ। সুব্রতর প্রয়াণে একটি শব্দও সেখানে খরচ করেননি তিনি। নিজের ব্লগে যদিও তিনি লেখেন, ‘এক এক করে অতীতও ছেড়ে চলে যাচ্ছে...যাদের উপর মায়া পড়ে যায়, কাছের হয়ে ওঠে যারা, একদিন ছেড়ে চলে যায়...রয়ে যায় শূন্যতা...’।
অমিতাভ লেখেন, ‘একাহাতে, উত্তরাধিকারবাবদ প্রাপ্ত কোনও সাহায্য ছাড়া, হিংসে হওয়ার মতো সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল...শূন্য থেকে শুরু করে এমন জায়গায় পৌঁছেছিলেন, যেখানে না শোনা যেত না... চলে গেল...’। তবে এত কিছু লিখলেও, ব্লগে একটি বারের জন্যও সুব্রতর উল্লেখ করেননি অমিতাভ।
সেই কারণেই সমালোচনার মুখে পড়ছেন অমিতাভ। তাঁকে ‘স্বার্থপর’, ‘সুবিধাবাদী’ বলে কটাক্ষও করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তিনি সুব্রতকে ব্যবহার করেছেন এবং বিপদের সময় সুব্রতর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে। এর নেপথ্যে অতীতকে টেনেও এনেছেন কেউ কেউ।
পূর্ববঙ্গ থেকে ভিটেমাটি খুইয়ে বিহারে আশ্রয় নেয় সুব্রতর পরিবার। সেখান থেকে একার জোরে ‘সাহারাশ্রী’ হয়ে ওঠেন সুব্রত। প্রতাপ, প্রভাব যত বাড়তে থাকে, রাজনীতি এবং গ্ল্যামার দুনিয়ার সঙ্গে ততই নিবিড় হয় তাঁর যোগ। সমাজবাদী পার্টি, মুলায়ম সিংহ এবং অমর সিংহের সঙ্গে দহরম মহরম ছিল তাঁর। সেই সূত্রে অমিতাভের কাছাকাছি আসা।
১৯৯৬ সালে অভিনয় এবং রাজনীতি থেকে সরে এসে অমিতাভ বচ্চন কর্প লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন বলিউডের ‘বিগ বি’। ওই সংস্থা সিনেমা প্রযোজনা ছাড়াও মিস ইন্ডিয়া-সহ একাধিক ইভেন্ট আয়োজনের কাজে হাতে দেয়। কিন্তু ব্যবসা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। দেউলিয়া হয়ে যান অমিতাভ। দেনার দায়ে মুখ দেখাতে পারতেন না। মুম্বইয়ে তাঁর বাংলোও নিলামে তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়।
শোনা যায়, সেই সময় সুব্রত নিজে বিরাট অঙ্কের চেক লিখে দেন, যাতে ভিটেমাটি না হারাতে হয় অমিতাভকে। এর পাল্টা সুব্রতর বিমান সংস্থার প্রচারে বলিউড তারকাদের কাজে লাগান অমিতাভ। শুধু তাই নয় সুব্রতর ছেলের বিয়ে থেকে বাড়ির যে কোনও অনুষ্ঠানে অমিতাভ খোদ অতিথিদের স্বাগত জানানো থেকে খাবার পরিবেশনেও হাত লাগাতেন। অটলবিহারি বাজপেয়ী থেকে তাবড় রাজনীতিক এবং তারকারা সুব্রতর বাড়ির অনুষ্ঠানে যেতেন। সুব্রতর মায়ের মৃত্যুতেও ছুটে গিয়েছিলেন সপুত্র অমিতাভ।
শুধু অমিতাভই নয়, সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় বসার উপক্রম হলে প্রযোজক বনি কপূরও সুব্রতর দ্বারস্থ হন। নিজের ছবির যাবতীয় স্বত্ত্ব সুব্রতর সংস্থার সাহারার হাতে তুলে দেন তিনি। অভিনেত্রী মণীষা কৈরালা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তাঁর চিকিৎসা থেকে বিদেশে তাঁর পরিবারের থাকার ব্যবস্থাও করে দেন সুব্রত। কিন্তু একমাত্র মণীষা ছাড়া প্রকাশ্যে কাউকেই সুব্রতর প্রতি তেমন কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে অমিতাভের নীরবতা চোখে পড়েছে বেশি করে। সুব্রতের শেষকৃত্যে যদিও অমিতাভ, তাঁর ছেলে অভিষেক বচ্চন এবং মেয়ে শ্বেতা বচ্চনকে দেখা গিয়েছে। প্রকাশ্যে শোকজ্ঞাপন থেকে বিরত থাকা নিয়ে নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -