Victoria and Abdul: রানি ভিক্টোরিয়া ও তাঁর ভারতীয় পরিচারকের ঘনিষ্ঠতা, ব্রিটেনের ইতিহাসে আজও ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়
অর্ধেক বিশ্ব জুড়ে রাজপাট তাঁর। ধন-সম্পত্তির ইয়ত্তা নেই। কিন্তু মনের খবর রাখেন কয়জন? তাই পরিবার, শুভাকাঙ্খী, চাকর-বাকরে পরিবৃত হয়েও একাকীত্বে ভুগতেন রানি ভিক্টোরিয়া। সেই সময়ই তাঁর পরম বন্ধু হয়ে ওঠেন আব্দুল করিম, তাঁর ভারতীয় পরিচারক।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appব্রিটেনের ইতিহাসে রানি ভিক্টোরিয়ার জীবনের ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায় হিসেবেই চিহ্নিত ওই সময়কাল। পরাধীন ভারত থেকে আসা অশ্বেতাঙ্গ পরিচারকের সঙ্গে রানির বন্ধুত্বের কাহিনী তাই ধামাচাপা দিয়েই রাখা হয়েছিল। কিন্তু চিরকাল কোনও কিছুই যেমন চাপা থাকে না, তেমনই ভিক্টোরিয়া এবং আব্দুলের বন্ধুত্বের কাহিনীও চাপা থাকেনি।
পরাধীন ভারতে, ঝাঁসির কাছে একটি গ্রামে জন্ম আব্দুল করিমের। ফারসি এবং উর্দু শিক্ষা পেয়েছিলেন চোট বয়সেই। পরে আগ্রা জেলে ক্লার্কের চাকরি পান। সেই সময়ই, তৎকালীন ভারত সম্রাজ্ঞী, ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়ার পরিচারক হিসেবে বেছে নেওয়া হয় তাঁকে।
আগ্রা জেলের তৎকালীন সুপার জন টাইলার করিমকে বেছে নেন। কারণ রানি সেই মর্মেই অনুরোধ জানিয়েছিলেন তাঁকে। ভারতে থাকাকালীনই আদবকায়দার শিক্ষা চলে। শেখানো হয় ইংরেজি। তার পর লন্ডনযাত্রা হয় করিমের।
করিমকে প্রথম বার দেখার কথা নিজের ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া। সেখানে করিমকে তিনি দীর্ঘকায়, ধারাল চেহারার পুরুষ বলে উল্লেখ করেন। করিমের হাতের রান্না ভারী পছন্দ হয় রানি ভিক্টোরিয়ার। পোলাও, ডাল আর করিমের হাতের মাংসের ঝোল রানির প্রিয় খাবারের তালিকায় জায়গা পায়।
করিমকে দেখেই ভারতীয় সংস্কৃতি, ভাষাশিক্ষায় উৎসাহিত হন রানি ভিক্টোরিয়া। উর্দু শিখতে শুরু করেন রানি। করিমের জন্য ভাল ইংরেজিশিক্ষার ব্যবস্থাও করেন, যাতে পারস্পরিক কথোপকথন আরও সহজ হয়। গোড়ার দিকে পরিচারকদের হাতে বার্তা পাঠিয়ে করিমকে ডেকে পাঠাতেন রানি। কিন্তু বন্ধুত্ব গাঢ় হতে শুরু করলে, নিজেই করিমকে চিঠি লিখতেন রানি।
ভারতীয় পরিচারকের সঙ্গে রানির এই বন্ধুত্ব মেনে নিতে পারেননি কেউই, না রাজপরিবারের সদস্যরা, না রানির শ্বেতাঙ্গ বন্ধুবান্ধব এবং ভৃত্যরা। অনেকে আবার সিঁদুরে মেঘ দেখতেও শুরু করেন। কারণ স্বামী অ্যালবার্টটের মৃত্যুর পর স্কটিশ পরিচারক জন ব্রাউনের সঙ্গে রানির বন্ধুত্ব নিয়েও মুখরোচক কাহিনী ছড়িয়েছিল তার আগে।
আড়ালে আবডালে রানিকে ‘শ্রীমতি ব্রাউন বলেও ডাকতেন অনেকে। করিমের ক্ষেত্রেও তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল অনেকের মনেই। তাই করিম যত রানির কাছাকাছি আসতে থাকেন, ততই অন্যদের চক্ষুশূল হতে থাকেন তিনি। বিষয়টি রানিরও নজর এড়ায়নি।
তাই তাঁর অবর্তমানে যাতে করিমের অনাদর না হয়, রানি তার বন্দোবস্ত শুরু করে দেন আগে থেকেই। সর্বত্র রানির সঙ্গী হয়ে ওঠেন করিম। একসঙ্গে স্কটল্যান্ডের কটেজেও সময় কাটান দু’জনে, যেখানে ব্রাউন রানির সঙ্গী হতেন একসময়। করিমের একাধিক চিত্রও অঙ্কণ করান রানি। নিজের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখে যান করিমের কথা। আগ্রায় করিমকে জমির ব্যবস্থাও করে দেন।
করিমকে যে চিঠিপত্র লিখতেন রানি। তাতে নিজেকে ‘পরম বন্ধু’ এবং ‘স্নেহশীল মা’ বলেই উল্লেখ করতেন রানি। করিমকে ‘মুন্সি’ উপাধিও দেন রানি। করিমের স্ত্রী, বাবার লন্ডন পৌঁছনোর ব্যবস্থা করে দেন। দামি উপহার তো বটেই, মৃত্যুর পর তাঁর শোকার্ত ঘনিষ্ঠদের মধ্যে যাতে করিমকে রাখা হয়, সেই ইচ্ছের কথাও জানিয়ে গিয়েছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া।
রানির আশঙ্কা বৃথা ছিল না। ১৯০১ সালের ২২ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পরই তাঁর ছেলেমেয়েরা করিমকে বিতাড়িত করেন। রক্ষী পাঠিয়ে করিমকে পাঠানো রানির সব চিঠি বাজেয়াপ্ত করান সপ্তম এডওয়ার্ড। সেগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভারতে ফেরত পাঠানো হয় করিমকে।
কিন্তু ভিক্টোরিয়া এবং করিমের বন্ধুত্বের ইতিহাস একেবারে মুছে ফেলতে পারেনি ব্রিটেনের রাজ পরিবার। ১৯০৯ সালে আগ্রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন করিম। সব চলে গেলেও, রানির সঙ্গে নিজের বন্ধুত্বের আখ্যান যে ডায়েরিতে লিখে রেখেছিলেন করিম, সেটি রয়ে যায়। পরে পাকিস্তান চলে যায় করিমের গোটা পরিবার। ২০১০ সালে তাদের কাছ থেকে করিমের ডায়েরি হাতে পান ইতিহাসবিদ সর্বাণী বসু।
‘ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আব্দুল: দ্য ট্রু স্টোরি অফ দ্য কুইন্স ক্লোজেস্ট কনফিড্যান্ট’ বইয়ে ব্রিটেনের রানি এবং তাঁর ভারতীয় পরিচারকের বন্ধুত্বের আখ্যান তুলে ধরেন সর্বাণী। পরে সেই নিয়ে বিখ্যাত ছবিও তৈরি হয়, যাতে মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন অস্কারবিজয়ী জুডি ডেঞ্চ এবং আলি ফজল।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -