Neeraj Chopra Profile: ছোটবেলায় ওজন কমাতে মাঠে যাওয়া শুরু, সেই নীরজই গড়লেন ইতিহাস
১৩৫ কোটির স্বপ্নপূরণ! শনিবার টোকিওয় ভারতের রূপকথার দিন। টোকিওর ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে ভারতের সোনার ছেলে নীরজ চোপড়ার উত্থান। রচনা হল ইতিহাস। স্বাধীনতার পর প্রথম ভারতীয় হিসেবে অ্যাথলেটিক্সে পদক পেয়েছেন তিনি।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In App২০০৮ এ বেজিং অলিম্পিক্সে অভিনব বিন্দ্রার সোনা জয়ের পর ২০২১ সালে নীরজ। দীর্ঘ ১৩ বছর পর। ভারতীয় সেনায় সুবেদার পদে থাকা নীরজ চোপড়া। এ দিন শুরু থেকে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। প্রথম চেষ্টাতেই ৮৭.০৩ মিটার ছুড়ে এক নম্বরে পৌঁছে যান তিনি। দ্বিতীয় চেষ্টায় আরও বাড়ান দূরত্বটা। ৮৭.৫৮ মিটার ছুড়ে সোনা নিশ্চিত করেন।
১৯৯৭ সালে ২৪ ডিসেম্বর হরিয়ানার পানিপথ জেলার খান্দরা গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম হয় নীরজ চোপড়ার। বাবা সতীশ কুমার একজন কৃষক এবং মা গৃহবধূ। দুই বোন এবং বাবা-মাকে নিয়েই পরিবার নীরজের। ছোট থেকে খেতে ভালবাসতেন নীরজ। ফলে অল্প বয়সেই গোলগাল চেহারার হয়ে পড়েন তিনি। ১২ বছরে তাঁর ওজন দাঁড়ায় ৯০ কেজিরও বেশি। ওজন কমাতে পরিবারের জোরাজুরিতেই সক্কাল সক্কাল শিবাজি স্টেডিয়ামে গিয়ে গা ঘামানো।
সেখানেই হঠাৎ দেখা জ্যাভলিন থ্রোয়ার জয় চৌধুরীর সঙ্গে। সেই সাক্ষাতেই বদলে যায় তাঁর জীবন। নীরজকে একদিন জ্যাভলিন ছুঁড়তে বলেন জয়। তার টেকনিক দেখে বুঝতে পারেন ছেলেটি আসলে ছাইচাপা আগুন। শুরু হয় নীরজের ট্রেনিং। তারপর আরও কঠোর ট্রেনিং। জাতীয় স্তরে পারফরম্যান্স। বিদেশি কোচের তত্ত্বাবধানে চলতে থাকে নিরলস পরিশ্রম। একটু করে নিজের হাতেই নীরজ বদলে ফেলে জীবনের মানচিত্র। আর আজ সেই গোল গাল চেহারার নীরজেরই আন্তর্জাতিক মঞ্চে ধুমকেতুর মত উত্থান ঘিরে উন্মাদনায় ফুটছে দেশ।
কেমন ছিল তাঁর পথ চলা? ২০১৪-য় দক্ষিণ এশীয় গেমসে ৮২.২৩ মিটার ছুড়ে জাতীয় রেকর্ড করেন নীরজ। এর পর ২০১৬-তে নীরজ নজর কাড়েন পোলান্ডের বিডগজে অনুষ্ঠিত হওয়া আইএএএফ বিশ্ব অনূর্ধ্ব-২০ প্রতিযোগিতায়। ৮৬.৪৮ মিটার ছুড়ে জিতে নেন সোনা। গড়েন বিশ্ব জুনিয়র রেকর্ড।
এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত হওয়া এশীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৮৫.২৩ মিটার ছুড়ে সোনা জেতেন নীরজ। ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে ৮৬.৪৭ মিটার ছুড়ে ফের সোনা জেতেন। কমনওয়েলথ গেমসের অভিষেকেই পদক পেয়েছিলেন তিনি। সে বছরই দোহা ডায়মন্ড লিগে ৮৭.৪৩ মিটার ছুড়ে নিজেরই জাতীয় রেকর্ড ভেঙে দেন। ৮৮.০৬ মিটার ছুড়ে এশিয়ান গেমসেও সোনা জিতেছিলেন তিনি।
নীরজের উত্থানের নেপথ্যের অন্যতম নাম গ্যারি কালভার্ট। ২০১৮ সালে হৃদরোগে আচমকাই তিনি প্রয়াত হওয়ার পর বিখ্যাত জার্মান কোচ উইয়ে হনের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন নীরজ। উল্লেখ্য সে বছরই অর্জুন অ্যাওয়ার্ড পান নীরজ।
এর পরের বছরে হঠাৎই হোঁচট! ২০১৯-এ কাঁধে মারাত্মক চোট পান নীরজ। অস্ত্রোপচার হয়। তারপর দীর্ঘদিন রিহ্যাবিলিটেশনে থাকতে হয় তাঁকে। তবে, অসুস্থতা যে পারফরমেন্সে থাবা বসাতে পারেনি তা জ্যাভলিন হাতে ট্র্যাকে ফিরেই তা প্রমাণ করলেন। এ বছরই আন্তর্জাতিক ইভেন্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করে মিলল টোকিওর টিকিট। অলিম্পিক্সে একবারের চেষ্টাতেই ফাইনালের ছাড়পত্র। বাকিটা তো ইতিহাস। উল্লেখ্য, খেলাধুলায় শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ২০২০ সালে বিশিষ্ট সেবা মেডেল (VSM) পেয়েছিলেন নীরজ।
ভারতের প্রথম জুনিয়র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নীরজ চোপড়া ২০১৬ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নায়েব সুবেদারের পদে যোগ দিয়েছিলেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ক্রীড়াবিদদের 'নন-কমিশন' ব়্যাঙ্কে নেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদানের পর, তিনি পুনের মিশন অলিম্পিক উইং এবং আর্মি স্পোর্টস ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হন। মিশন অলিম্পিক উইং ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি উদ্যোগ, যেখানে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দক্ষতা অর্জনের জন্য ১১ টি বিভাগে ক্রীড়াবিদদের চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সব মিলিয়ে ভারতের নাম ফের উঠে এল ইতিহাসের খাতায়! আজ ২২ শ্রাবণ। নীরজের জয়ের হাত ধরে আজই সুদূর টোকিওতে বেজে উঠল জাতীয়সঙ্গীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’। আজ ভারতের জয়ের দিনই বটে। কে জানত? হরিয়ানার কোনও অখ্যাত গ্রাম থেকে উঠে আসা ছেলেটাই টোকিওর ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে এমন ইতিহাস লিখবে? জিতেই ফেরার সংকল্প নিয়েই টোকিওর মাটি ছুঁয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। এরপর ৭ অগাস্ট অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে অবিশ্বাস্য নজির নীরজের। (ছবি এবং তথ্য IANS)
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -