করুণাময় সিংহ, মালদা: বাংলার নানা কোণে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কত-শত কালীমন্দির (Kali Temple)। এক একটি পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে এক একরকম ইতিহাস। কোথাও বিশেষ উপাচার, কোথাও আবার জড়িয়ে নানা জনশ্রুতি। এমনই একটি মন্দির মালদার (Malda) গোবরজনা কালী মন্দির। জেলার অন্যতম প্রাচীন কালীপুজোগুলির (Kali Puja 2023) মধ্যে অন্যতম এটি। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে ভবানী পাঠকের নাম। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবী চৌধুরানী উপন্যাসের অন্যতম এক চরিত্র ভবানী পাঠক। তাঁর হাতেই নাকি শুরু হয়েছিল এই পুজো। 


ভক্তরা বলে থাকেন, এই কালী মন্দির খুবই জাগ্রত। গোটা বাংলা ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো পড়শি রাজ্য থেকে এখানে পুজো দিতে আসেন অনেকে। নেপাল-বাংলাদেশ থেকেও ভিড় করেন ভক্তরা। কালীপুজোয় (Diwali 2023) এখানে উপচে পড়ে ভিড়।   


ভবানী পাঠকের হাতে পুজো শুরু?
জনশ্রুতি রয়েছে, ভবানী পাঠক কালিন্দ্রী নদী দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ নদীতে জল বেড়ে যায়। সেই সময় তাঁর বজরা নদী তীরবর্তী এলাকায় থামে। সেখানেই রাতে থেকেছিলেন তিনি। কথিত রয়েছে ভবানী পাঠক নাকি সেই সময় স্বপ্নাদেশ পান মা কালীর পুজো করার জন্য। কিন্তু সেই সময় সেখানে মাটি পাওয়া যায়নি। তাই তার পরিবর্তে গোবর এবং জনা অর্থাৎ ধানের তুষ দিয়ে মূর্তি গড়ে পুজো শুরু হয়। তার ফলেই এই এলাকার নাম হয় গোবরজনা। 


আরও জনশ্রুতি:
আরও একটি কথা প্রচলিত রয়েছে। এক সময় এই এলাকা এবং তার পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু এলাকায় কলেরার দাপট দেখা গিয়েছিল। মৃত্যু হয়েছিল বহু মানুষের। তখনই সেখানে ওই বিপদ থেকে বাঁচার আর্তিতে মা কালীর পুজো শুরু হয়। তারপর থেকে নিয়ম মেনে এই পুজো হয়ে আসছে। কিন্তু ঠিক কবে এই পুজোর সূচনা, তা সকলের কাছেই অজানা।


নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে পূজিত হন গোবরজনা কালীমাতা। গোবরজনা গ্রামের চৌধুরী পরিবারের বর্তমান সদস্যরা এই পুজো করছেন। চৌধুরী পরিবার এখন ভাগ হয়ে গিয়েছে। তাই প্রতিবছর পালা করে পুজোর দায়িত্ব পালন করে বর্তমান প্রজন্ম। পরিবারের সদস্য শ্যামাপদ চৌধুরী বলেন, 'এই পুজো ঠিক কত পুরনো তা আমাদের জানা নেই। আমার ঠাকুরদা জ্যোতিষ চৌধুরী এই পুজো করতেন গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে। গ্রামের পাশে কালিন্দ্রী নদীর তীরে ঘন জঙ্গল ছিল আগে। সেখানেই জরাজীর্ণ দেবীর বেদি ছিল। প্রতিবছর কালী পুজো হতো। আগে নদীপথে নৌকায় করে দেবীমূর্তি নিয়ে আসা হতো।' পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, ধীরে ধীরে মন্দিরে ভক্তদের সমাগম বাড়তে থাকে। মন্দির চত্বরের জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়। আগে বিশাল বট গাছের নীচে মন্দির ছিল। গাছটি মরে যাওয়ার পরে তৈরি করা হয় এই মন্দির। এখন সেই মন্দিরেই পুজো হয়।


আরও পড়ুন: দীপাবলিতে সরকারি বিনিয়োগ দেখাতে পারে আলো,জেনে নিন সেরা স্কিমগুলির সাম্প্রতিক সুদ