কলকাতা : শনিবারে শনিদেবের পুজো করার নিয়ম আছে। মনে করা হয়, শনিবারে শনিদেবের পুজো ও পুজোয় তাঁর প্রিয় জিনিস অর্পণ করলে শনি মহারাজ প্রসন্ন হন। ভক্তের উপর নিজের আশীর্বাদ বর্ষণ করেন।


তবে, শনিবার শনিদেবের পাশাপাশি ভগবান হনুমানেরও পুজো করা হয়। এর কারণ হল, শনিদেব হনুমানকে কথা দিয়েছিলেন যে, শনিবার যে ভক্ত হনুমানের পুজো করবেন তিনি কখনই শনিদেবের অশুভ নজরের সম্মুখীন হবেন না। এই কারণেই শনিবার হনুমানজির পুজো করা হয়।


শনিদেবের পছন্দের জিনিস সরষের তেল।  তাই, শনিবার ভক্তরা শনিদেবকে সরষের তেল অর্পণ করেন। কিন্তু, শনিদেবকে সরষের তেল নিবেদনের পিছনে রহস্য কী এবং কে শনি মহারাজকে প্রথম সরিষার তেল দিয়েছিলেন ? আসুন জেনে নিই এর সঙ্গে সম্পর্কিত পৌরাণিক ধর্মীয় কাহিনি।


একসময় শনিদেব তাঁর ক্ষমতার জন্য খুব গর্বিত ছিলেন। তিনি মনে করতে থাকেন যে, এই পৃথিবীতে তাঁর চেয়ে শক্তিশালী আর কেউ নেই। যেহেতু শনিদেবের বিপরীতমুখী দিক জীবনে অশান্তি সৃষ্টি করে, এই অহঙ্কারে শনিদেব পৌঁছে যান এক বনে। 
এখানে ভগবান হনুমান ইতিমধ্যেই ভগবান শ্রী রামের উপাসনায় মগ্ন ছিলেন। শনিদেব হনুমানজিকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর প্রতি তার বিপরীত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। কিন্তু হনুমানজির উপর এর কোনও প্রভাব পড়েনি। কারণ, তিনি ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। এতে শনি মহারাজ খুব রেগে যান এবং হনুমানজিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, হে বানর! দেখ তোমার সামনে কে দাঁড়িয়ে আছে!


হনুমানজি শনিদেবের প্রতি কোনও মনোযোগ না দিয়ে তাঁর ধ্যানে মগ্ন থাকেন। এর পরে শনিদেব অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু হনুমানজি এমন ধ্যানে মগ্ন ছিলেন যে তিনি বিন্দুমাত্র বিভ্রান্ত হননি। এত কিছুর পর শনিদেবের ক্রোধ সপ্তমে পৌঁছে যায় এবং ক্রোধে তিনি আবার হনুমানজিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, হে বানর! চোখ খোলো, আমি শনিদেব, আমি এসেছি তোমার সুখ শান্তি বিনষ্ট করতে। এই পৃথিবীতে এমন কোনও প্রাণী নেই যে আমার মুখোমুখি হতে পারে। 


এবার শনিদেব ভাবতে থাকেন, এমন কথা শুনে হনুমান অবশ্যই ভয় পেয়ে যাবেন এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু সেরকম কিছুই হয়নি। অনেক চেষ্টার পর হনুমান উঠে স্বাভাবিক সুরে শনিদেবকে বললেন, হে মহারাজ, আপনি কে? একথা শুনে শনিদেবের ক্রোধ আরও বেড়ে গেল। তিনি বললেন, আমি আপনার রাশিতে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। এর পর আপনি নিজেই জানতে পারবেন আমি কে।


তাতে হনুমানজি বলেন, হে মহারাজ, আপনি অন্য কোথাও যান। কিন্তু আমার প্রভু, আমার ধ্যান ব্যাহত করবেন না। হনুমানের এই ব্যাপারটি শনিদেবের পছন্দ হয়নি এবং তিনি হনুমানজিকে হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু হনুমানজিকে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গেই মনে হল তিনি জ্বলন্ত কয়লায় হাত রেখেছেন। তৎক্ষণাৎ হাত সরিয়ে নিলেন শনিদেব। কিন্তু এর পরেও শনিদেবের রাগ কমেনি। 


এরপর হনুমানজিও রেগে যান এবং তিনি শনিদেবকে লেজ দিয়ে জড়িয়ে ধরে পাহাড় ও গাছে শক্ত করে ছুঁড়ে ঘষতে থাকেন। এভাবে শনিদেবের অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং তাঁর শরীরে অনেক আঘাত লাগে। অবশেষে শনিদেব হনুমানের কাছে তাঁর ভুলের জন্য ক্ষমা চান। তিনি হনুমানজিকে বলেন, আমার অহঙ্কারের জন্য আমাকে ক্ষমা করুন। ভবিষ্যতেও আপনার ছায়া থেকে দূরে থাকব। তখন হনুমানজি বলেন, আপনি শুধু আমার ছায়া থেকে নয়, আমার ভক্তদের ছায়া থেকেও দূরে থাকবেন। শনিদেব হনুমানজিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি কখনও হনুমানজির ভক্তদের প্রতি খারাপ নজর দেবেন না। এরপর হনুমানজি শনিদেবের ক্ষতস্থানে সরিষার তেল লাগান, এতে তাঁর ব্যথা কমে যায়।


সরষের তেল দিয়ে শনিদেবের যন্ত্রণা শেষ হলে তিনি বলেন, যে ভক্ত শনিবার আমাকে ভক্তি সহকারে সরষের তেল নিবেদন করবেন তিনি শনি সংক্রান্ত ঝামেলা থেকে মুক্তি পাবেন। এরপর থেকে শনিদেবকে সরিষার তেল দেওয়ার প্রথা শুরু হয়।