নয়াদিল্লি: একাধিক তত্ত্ব এযাবৎ সামনে এলেও, প্রাণের সৃষ্টি নিয়ে রহস্য কাটেনি আজও। পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টির নেপথ্যে প্রাচীন সাগর-মহাসাগরের ভূমিকা উঠে আসে যেমন, তেমনই মহাজাগতিক অণু থেকেও প্রাণের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে বলেও দাবি করেন কেউ কেউ। এর মধ্যে দ্বিতীয়টিকে সামনে রেখে সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে সৌরজগতেরও বাইরের গ্রহগুলিতে প্রাণের সঞ্চারের সম্ভাব্য কারণ তুলে ধরেছেন একদল বিজ্ঞানী। (Origin of Life)


গত ১৪ নভেম্বর Proceedings of the Royal Society A জার্নালে ওই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে মহাশূন্যে দৌড়ে বেড়ানো ধূমকেতু থেকেই প্রাণের সৃষ্টি বলে দাবি করা হয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, আমাদের সৌরজগতের মতো অন্য অন্য নক্ষত্রমণ্ডলের গ্রহগুলিতেও প্রাণসৃষ্টির প্রাথমিক উপাদানের জোগান দিয়েছে ধূমকেতু। আমাদের সৌরমণ্ডলের অনুরূপ একটি নক্ষত্রমণ্ডলে ধূমকেতু প্রিবায়োটিক মলিকিউলস বয়ে নিয়ে যায় বলে দাবি করা হয়েছে ওই গবেষণাপত্রে। (Science News)


এ ক্ষেত্রে সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত নক্ষত্রমণ্ডলের কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেখানেও সূর্যের মতো নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে একাধিক পাথুরে এক্সোপ্ল্যানেট (সৌরজগতের বাইরে অবস্থিত গ্রহ)। কেমব্রিজ ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রনমির বিজ্ঞানী রিচার্ড আন্সলো জানিয়েছেন, ধূমকেতুই সেখান থেকে প্রাণসৃষ্টির উপাদান বয়ে এনেছে বলে অনুমান তাঁদের। ব্রহ্মাণ্ডের অন্যত্র যদি কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব থেকে থাকে, সেখানেও ধূমকেতু দ্বারাই প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে বলে মত তাঁর।


আরও পড়ুন: Science News:প্রতি ১০-১৫ হাজার বছর পর বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ইউরোপ? ভূমধ্যসাগরের তল ঘেঁটে দাবি বিশেষজ্ঞদের


এই প্রথম নয় যদিও, এর আগেও একাধিক বার ধূমকেতু এবং গ্রহাণু মারফত প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেক্ষেত্রে বলা হয়, এমন একাধিক ধূমকেতু এবং গ্রহাণুতে অ্যামিনো অ্যাসিড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড এবং ভিটামিন বি ৩-র মতো প্রিবায়োটিক অণু মিলেছে। এর মধ্যে কোনও একটি উপাদান একক ভাবে প্রাণ সঞ্চার করার উপযুক্ত নয়। বরং সবক'টির সম্মিলিত যোগদানেই প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।


সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, গ্রহগুলিতে ধূমকেতু দ্বারাই প্রাণের সঞ্চার ঘটে থাকার সম্ভাবনা প্রবল, তবে এক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয় নিশ্চয়ই। প্রথমত, ধূমকেতুটির গতি হতে হবে শ্লথ, সেকেন্টে ১৫ কিলোমিটারের কম। অন্য়থায় গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতে গেলে  মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রায় নিজেই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে ধূমকেতু। তার সঙ্গে শেষ হয়ে যাবে প্রাণসৃষ্টির অণুও। উদাহরণস্বরূপ ১৯৮৬ সালের হ্যালির ধূমকেতুর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেবার সূর্যের গা ঘেঁষে প্রতি সেকেন্ডে ৫৫ কিলোমিটার গতিতে ছুটে যাচ্ছিল ধূমকেতু।


ধূমকেতু মারফত প্রাণসৃষ্টির যে তত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে গবেষণাপত্রে, তা হল, মহাশূন্যে পরস্পরের কাছাকাছি একঝাঁক গ্রহ অবস্থান করছিল। সেখানে আচমকা গোঁত্তা খায় কোনও ধূমকেতু। এক গ্রহের কক্ষপথ থেকে অন্যের কক্ষপথে ছিটকে যায় সেটি। তাতে ক্রমশ গতি কমতে থাকে তার। সেই সময়ই কোনও গ্রহের বায়ুমণ্ডলে অনায়াসে প্রবেশ করে যায় ওই ধূমকেতু এবং সেখানে প্রিবায়োটিক মলিকিউলস পৌঁছে যায়। 


প্রাণসৃষ্টির রহস্য উদঘাটনের এটি একমাত্র তত্ত্ব না হলেও, এই তত্ত্বে ভর করে ব্রহ্মাণ্ডের অন্যত্র প্রাণের খোঁজ চালানো সহজতর হয়ে উঠতে পারে বিজ্ঞানীদের জন্য। এখনও পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কৃত হয়েছে। তাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম দূরত্বে, পরস্পরের কাছাকাছি অবস্থান করা এক্সোপ্ল্যানেটগুলিকে চিহ্নিত করা যেতে পারে।