ঝিলম করঞ্জাই, কলকাতা : আর কিছুক্ষণের অপেক্ষা। তারপরেই পৃথিবীতে ফিরবেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর। মহাকাশ থেকে পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন সুনীতা উইলিয়ামসরা। সুনীতাদের ফেরাতে রবিবার সকালে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছয় ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের ড্রাগন যান। ভারতীয় সময় অনুযায়ী, আজ মাঝরাত থেকে কাকভোরের মধ্য়ে ফ্লোরিডা উপকূলে অবতরণ করবেন তাঁরা।
কথা ছিল আটদিনে ফিরে আসবেন। লেগে গেল ন'টা মাস ! একরাশ অনিশ্চয়তাকে সঙ্গী করে, এই দীর্ঘ সময় মহাকাশে আটকে ছিলেন ভারতীয় বংশোদভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর। অবশেষে মঙ্গলবার মধ্য়রাতে নিজের বাড়ি, পৃথিবীতে ফিরছেন মহাকাশ-কন্যা সুনীতা। আমেরিকার ফ্লোরিডার উপকূলবর্তী এলাকায় তাঁদের নিয়ে নামবে মহাকাশযান। যে মুহূর্তের জন্য় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে গোটা বিশ্ব।
২০২৪-এর ৫ জুন। ৮ দিনের জন্য মহাকাশে গেছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস ও তাঁর সহযাত্রী বুচ উইলমোর। কিন্তু, তারপরই বিপত্তি বাধে। যে বোয়িং স্টারলাইনারে চড়ে তাঁরা মহাকাশে গেছিলেন, তাতে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সুনীতাদের ওই মহাকাশযানে করে ফেরানোর ঝুঁকি নিতে পারেনি NASA। যার জেরে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেই আটকে পড়েন তাঁরা। এরপর থেকে কখনও একটু আশার আলো দেখা গেছে। কখনও আবার দপ করে সেই আলো নিভে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর, দুই নভশ্চরকে ফেরাতে ইলন মাস্কের সাহায্য চান। সুনীতাদের ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করে নাসা এবং ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্স।
BITM-এর টেকনিক্যাল অফিসার তরুণ দাস বলছেন, "কোনও উল্কা যখন বাইরে থেকে আমাদের এই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকে, তখন সেই বায়ুর সঙ্গে উল্কার একটা সংঘর্ষ হয়। যেটাকে আমরা বলি, ঘর্ষণের জন্য। এই ঘর্ষণের জন্য যে তাপ সৃষ্টি হয়, সেটা আমরা দেখেছি জ্বলতে জ্বলতে পড়ে। একটা মহাকাশযানের ক্ষেত্রে কী হয়, প্রোটেকটিভ লেয়ার থাকে। সেজন্য প্রচণ্ড যে তাপের সৃষ্টি হয়, তার বাইরের দিকটাকে সে প্রোটেক্ট করতে পারে। এই বার্নটার জন্য আমরা চিন্তা করি। কিন্তু, এখনকার যা প্রযুক্তি তাতে আশা করি আমরা সেটার দিকেও সফল হব।"
মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে সুনীতাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ছেড়ে পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দেয় স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্রু। মঙ্গলবার রাত ২টো থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে আমেরিকার ফ্লোরিডার উপকূলে নামতে পারেন সুনীতারা।
BITM-এর কিউরেটর রাকেশ মজুমদার বলেন, "যেতে হয়, আর যখন ফিরতে হয়...এই দুটোর পার্থক্য আমাদের বুঝতে হবে। যাওয়ার সময় আমাদের ভীষণ একটা ফোর্সের দরকার হয়। যার ফলে ঠেলে উঠে যেতে পারে রকেটটা। তার সঙ্গে যে ক্যাপসুলটা রয়েছে সেটা। যখন ফিরে আসা তখন পুরো উল্টো ব্যাপার। তখন পৃথিবী টানছে। সেটা যদি আমরা টানতে দিই এবং ফুল ফোর্সে যদি নেমে আসে, তাহলে এসে একটা হার্ড ল্যান্ডিং হবে। স্বাভাবিক যে বল, যেটা-উল্কা খসে পড়ে এরকম...সেই ফ্রি ফলটা হতে দিতে হবে না। সুতরাং গ্র্যাভিটির উল্টো দিকে একটা ফোর্স করতে হবে। স্লো ডাউন করতে হবে। আস্তে আস্তে ঢুকতে হবে।"
সুনীতা উইলিয়ামস ২৮৬ দিন মহাকাশে কাটানোর পর ফিরছেন পৃথিবীর বুকে। এর আগে ৬৭৫ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন NASA-র প্রাক্তন মহাকাশচারী পেগি উইটসন, আমেরিকার মহাকাশচারী ফ্র্যাঙ্ক রুবিও ৩৭১ দিন ধরে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে ছিলেন। রাশিয়ার ভ্যালেরি পোলিয়াকোভ মির স্পেস স্টেশনে কাটিয়েছেন ৪৩৭ দিন।