কলকাতা: একটা সময় ৮ জুলাই দিনটি কীভাবে উদযাপন করা হবে, নীল নকশা তৈরি করতেন ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। তবে কন্যা সানা বড় হয়েছে। এখন পুরো চিত্রনাট্য নিজের হাতে সযত্নে সাজান তিনিই। কখন, কী ফ্লেভারের কাটা হবে, কীভাবে বাড়ি সাজানো হবে, মেন্যুতে কী থাকবে, সব কিছুই এখন ঠিক করেন সানা।


বুধবার ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা ছুঁলেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আবিষ্কার করবেন, তাঁর জন্য হাজির সারপ্রাইজ়। বিশেষভাবে অর্ডার দেওয়া কেক। মেয়ের পছন্দের সেই কেক কেটেই ৪৯ বছর সম্পূর্ণ করার মুহূর্তটা উদযাপন করবেন জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট।


বুধবার ৪৯ বছর সম্পূর্ণ হচ্ছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের। কীভাবে সেলিব্রেট করা হবে বিশেষ দিনটি? সৌরভের স্ত্রী তথা বিখ্যাত ওডিশি নৃত্যশিল্পী ডোনা এবিপি লাইভকে বললেন, 'দারুণ কোনও সেলিব্রেশনের পরিকল্পনা নেই। বাড়িতেই কেক কাটা হবে। মহারাজের জন্মদিনে প্রচুর মানুষ শুভেচ্ছা জানান। অনেকেই বাড়িতে আসেন শুভেচ্ছা জানাতে। দাদার কয়েকজন অন্ধ ভক্ত রয়েছেন। চণ্ডীগড়ে আলাপ হয়েছিল তাঁদের সঙ্গে। ওঁরা প্রত্যেক বছর দাদার জন্মদিনে বিমানযাত্রা করে কলকাতায় এসে শুভেচ্ছা জানাবেনই। সে মহারাজ যেখানেই থাকুক না কেন, সেখানেই পৌঁছে যান। সারাদিন ধরে মহারাজের অগণিত ভক্ত শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। ওর ফ্যান ক্লাব থেকে এক সপ্তাহ আগে থেকে জন্মদিনের কাউন্টডাউন শুরু করে দেয়। জন্মদিনের দিন সকালেই সকলে কেক নিয়ে হাজির হয়ে যায় বাড়িতে। দাদার স্পনসরেরা কেক পাঠায়। অনেক অনুরাগী ফুল পাঠায়। সারাদিন এভাবেই কেটে যায়।' 


ডোনা জানালেন, কীভাবে সৌরভের জন্মদিনের সমস্ত ব্যবস্থা নিজে হাতে সামলাতে শিখে গিয়েছেন কন্যা সানা। 'আগে মহারাজের জন্মদিন উদযাপনের সমস্ত পরিকল্পনা আমাকেই করতে হতো। এখন সানা বড় হয়েছে। ওই সব পরিকল্পনা করে। ও বলল, মা, দুটো কেক অর্ডার দিয়েছি। একটা রাত ১২টায় কাটা হবে। আর একটা জন্মদিনের দিন সন্ধেবেলা বাড়িতে লোকজন এলে কাটা হবে। আমাকে কিছুই করতে হয় না। মেয়েই সব সামলে দেয়,' বলছিলেন ডোনা। বাবাকে কী উপহার দেবে সানা? ডোনা বলছেন, 'প্রত্যেক বছর মহারাজের জন্মদিনে ও কিছু না কিছু করতেই থাকে। ভাল কেক দেয়। সুন্দর ফুলের বোকে দেয়। তবে আমাদের মধ্যে উপহার দেওয়ার অত চল নেই।'


করোনা আবহে সৌরভের জন্য উপহার কেনা হয়নি ডোনারও। 'এবার দোকানপাট সব বন্ধ থাকছে। উপহার কিছু কেনা হয়নি। কেক অর্ডার দিয়েছি। উপহার পাওনা রইল ওর। বাইরে গেলে কিনে দেব। তাছাড়া সারা বছর প্রচুর কেনাকাটা এমনিতেই হয়। তাই এবার আলাদা করে কিছু প্ল্যান করিনি,' বলছিলেন ডোনা।


আর খাওয়া-দাওয়া? খাদ্যরসিক বলেই পরিচিত সৌরভ। ক্রিকেট খেলার সময় কড়া ডায়েট মেনে চলতে হতো। তবু সুযোগ পেলেই বিরিয়ানিতে মজে যেতেন। ডোনা অবশ্য জানালেন, সাম্প্রতিক অসুস্থতার পর সৌরভের খাদ্যতালিকা থেকে এখন বাদ মাটন ও চিকেন, সব ধরনের মাংসই। বললেন, 'মহারাজের জন্মদিনে আগে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হতো। ওর সব পছন্দের ডিশ রান্না হতো। রেস্তোরাঁয় গিয়েও খাওয়া দাওয়া হতো। তবে করোনা পরিস্থিতিতে সেসব হচ্ছে না। আর অসুস্থতার পর ও নিজেও ভীষণ নিয়ন্ত্রিত খাওয়াদাওয়া করে। মাটন তো দূরের কথা, চিকেন খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। শুধু শাকসব্জি আর মাছ খায়। সেটাও খুব কম তেলে রান্না করা হয়। এবার বিরিয়ানি নয়। বাড়ির মাছ ভাতে হবে জন্মদিনের সেলিব্রেশন।' এরপরই হাসতে হাসতে ডোনা যোগ করলেন, 'আমাকেও এখন কিছু খেতে দেয় না। সারা বাড়ি এখন কড়া ডায়েটে রয়েছে। তাই ওর জন্মদিনে বিশেষ কিছু খাওয়াদাওয়া হবে না। বাড়ির রান্নাই খাওয়া হবে সকলে মিলে।'


যদিও সৌরভের আগের কিছু জন্মদিন উদযাপনের কথা মনে পড়ছে ডোনার। বলছেন, 'ও ক্রিকেট খেলার সময় এই দিনটায় কলকাতায় থাকাই হতো না। তবে আমরা বাইরে থাকলেও রেস্তোরাঁয় খেতে যেতাম। ইংল্যান্ডে জন্মদিনের সময় থাকার সুযোগ হলেই সকলে মিলে হইচই করতে করতে রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া করতাম। এছাড়া জাতীয় দলে ওর সতীর্থদের সঙ্গেও একসঙ্গে খেতে বাইরে যেতাম। তবে কলকাতায় থাকলে বাইরে খেতে যাওয়া বড় একটা হয় না। বাড়িতেই রান্নাবান্না হয়। কলকাতায় বার্থ ডে পার্টিও যে কয়েকবার হয়েছে, তাও বাড়িতেই হয়েছে।'


সৌরভ নিজে বরাবর বলেন, বয়সটা নেহাত একটা সংখ্যা। তাঁর ৪৯তম জন্মদিন নিয়ে আপনার কী মনে হচ্ছে? হাসতে হাসতে ডোনা বলছেন, 'সত্যিই মহারাজের বয়স ৪৯ হয়ে গেল। পরের বছরই হাফসেঞ্চুরি।' যোগ করছেন, 'ক্রিকেটে ওর প্রচুর অবদান। ব্যাটসম্যান হিসাবে, অধিনায়ক হিসাবে, পরবর্তী কালে ধারাভাষ্যকার হিসাবে, সিএবি প্রেসিডেন্ট হিসাবে, আর এখন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দারুণ সমস্ত কাজ করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আইপিএল আয়োজন থেকে শুরু করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন, এসব নিয়ে এখন ভীষণ ব্যস্ত। ওর ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ডের কোনও শেষ নেই। ক্রিকেটের সব ধরনের ফর্ম্যাটে ও অবদান রাখতে পেরেছে। সেদিক থেকে ও ভাগ্যবানও। দারুণ কেরিয়ার মহারাজের।'


সম্প্রতি অন্য এক ভূমিকাতেও দেখা যাচ্ছে সৌরভকে। কখনও করোনাকালে ত্রাণ পাঠাচ্ছেন, কখনও পাশে দাঁড়াচ্ছেন ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্তদের। ডোনা অবশ্য এতে নতুন কিছু দেখছেন না। বলছেন, 'ও বরাবরই বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আগেও বিভিন্ন চ্যারিটি ম্যাচ খেলা থেকে শুরু করে শিশুদের চিকিৎসায় সাহায্য করতে একটি হাসপাতালের পাশে দাঁড়িয়ে নিলাম, অনেক কিছু করেছে। সব ক্রিকেটারেরাই করে। মহারাজও অনেকদিন থেকে এসব করে। অনেকে মহারাজের সঙ্গে ডিনার করার জন্য টাকা দিয়ে টেবিল বুক করে আর সেই টাকা ত্রাণ তহবিলে দান করা হয়। এখন হয়তো ওর এই ধরনের কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে আসছে। তবে আগেও করত। এত মানুষের ভালবাসা পেয়েছে। মানুষের পাশে থাকতে ভালবাসে মহারাজ।'