কলকাতা: আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপে (AFC Asian Cup) তিনি ভারতীয় দলের সঙ্গে মাঠে থাকবেন না ঠিকই, তবে দূর থেকে অবশ্যই থাকবেন। তাই শনিবার এশিয়ার সবচেয়ে বড় আন্তর্দেশীয় টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে নামার আগে ভারতীয় দলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারকা উইঙ্গার আশিক কুরুনিয়ান (Ashique Kuruniyan)। যিনি তাইল্যান্ডে কিংস কাপে ভারতীয় দলের হয়ে ইরাকের বিরুদ্ধে খেলতে গিয়ে এসিএল-এ (অ্যান্টেরিয়ার ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট) চোট পেয়ে এশিয়ান কাপের লড়াই থেকে ছিটকে গিয়েছেন।


আইএসএলের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আশিক বলেছেন, “এখনই ভারতীয় ফুটবল দলের উন্নতি করার সেরা সময়। এখন আমরা বড় টুর্নামেন্টে খেলার জায়গায় চলে এসেছি এবং রিজার্ভ বেঞ্চেও আমাদের বিকল্প এখন অনেক বেশি”।


দলের মধ্যে চোট-আঘাত হলেও কোনও সমস্যা হবে না বলে মনে করেন মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট তারকা। বলেন, “আমাদের বেঞ্চে এত ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে যে, কারও চোট হলেও কোনও অসুবিধা নেই। তারা বরং সুযোগ পেলে দলে অন্য মাত্রা এনে দিতে পারে। বিভিন্ন প্রতিপক্ষের জন্য আমাদের হাতে বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে, যা আমাদের দলকে অনেক সাহায্য করবে”।


শনিবার থেকে পঞ্চম এশিয়ান কাপের অভিযান শুরু করছে ভারত। প্রথম ম্যাচে তাদের মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া, ফিফা ক্রমতালিকায় যাদের স্থান ২৫ নম্বরে। সেখানে ভারত রয়েছে ১০২ নম্বরে। প্রথম ম্যাচেই ভারত টুর্নামেন্ট শুরু করছে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা দলের বিরুদ্ধে। যেমনটা করেছিল ২০১১-তেও। ১৮ জানুয়ারি ভারতীয় দল তাদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে। প্রথম দুটি ম্যাচই হবে আল রায়ানের আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে। লিগ পর্বে তাদের শেষ ম্যাচ ২৩ জানুয়ারি, আল খোরের আল বায়েত স্টেডিয়ামে। ফিফা ক্রমতালিকায় সিরিয়া ও উজবেকিস্তান রয়েছে যথাক্রমে ৯১ ও ৬৮ নম্বরে। অর্থাৎ এই গ্রুপে সুনীলরা ছেত্রীরাই ক্রমতালিকায় সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দল।


তবে ভারতের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এই টুর্নামেন্টে দেশের ফুটবলপ্রেমীদের আরও আশাবাদী করে তুলতে সাহায্য করেছে। ২০২৩-এ ভারতীয় ফুটবলের বছরটা ভালই কেটেছে, যেখানে ঘরের মাঠে তারা তিনটি ট্রফি জিতেছে এবং কিরগিজ রিপাবলিক, কুয়েত ও লেবাননের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়েও দিয়েছে।


ভারতীয় দলের ফল কেমন হতে পারে, জানতে চাইলে আশিক বলেন, “অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে সেটাই হবে আমাদের সেরা ফল। তবে সেটা খুব কঠিন কাজ। আমার বিশ্বাস, দলের ফুটবলাররা এখন যথেষ্ট ফিট। কারণ ঘরোয়া মরশুম অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তাই ফুটবলাররা সবাই ভাল কন্ডিশনে রয়েছে। অনুশীলনেও ওরা যথেষ্ট পরিশ্রম করছে”।


অনেক আশা করেছিলেন, এই টুর্নামেন্টে দেশের হয়ে মাঠে নামবেন। কিন্তু চোট সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। হতাশ কেরালার তারকা বলেন, “এএফসি এশিয়ান কাপে খেলব বলে ভিতরে ভিতরে খুব উত্তেজিত ছিলাম। কিন্তু ফুটবলে অপ্রত্যাশিত ঘটনা প্রায়ই ঘটে। আমাদের কিছুই করার থাকে না”।


চোট লাগার পরেই ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিমাচ তাঁকে নানা ভাবে উৎসাহিত করেছিলেন বলে জানান সবুজ-মেরুন বাহিনীর এই তারকা ফুটবলার। বলেন, “চোট লাগার পরে কোচ ইগরের সঙ্গে আমার কথা হয়। উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কবে আবার মাঠে ফিরে আসতে পারি আমি। তাঁকে বলি, মাঠে ফেরার সময় নিয়ে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলতে পারব না। উনি আমাকে বলেন, যখন আমি মাঠে ফিরব, তখন তিনিই এই দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন”।


চোট নিয়ে তিনি বলেন, “ইরাকের বিরুদ্ধে কিংস কাপের ম্যাচে আমার হাঁটু ঘুরে যায়। ফলে এসিএল-এ চোট লাগে। হাঁটুতে অস্ত্রোপচার হয়। এখন রিহ্যাব চলছে। বলা হয়, এসিএলে চোট লাগলে তা সারতে আট মাস মতো সময় লাগে। তবে তা চোট পাওয়া ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। অস্ত্রোপচারের পরে শরীর কী ভাবে তা নিচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে”।


ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ স্টিফেন কনস্টন্টাইনের অধীনে ভারতীয় দলের হয়ে প্রথম খেলেন আশিক। স্টিমাচের দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফুটবলার হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১৯-এর এশিয়ান কাপে খেলার পরে এ বারের এশিয়ান কাপেও তাঁকে ও ডিফেন্ডার আনোয়ার আলিকে খেলানোর পরিকল্পনা ছিল ভারতীয় দলের ক্রোয়েশিয়ান কোচের। কিন্তু দু’জনেই চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন।


নিজে না খেলতে পারলেও তাঁর শুভেচ্ছা ভারতীয় দলের ফুটবলারদের সঙ্গে অবশ্যই থাকবে। আশিক বলেন, “দলের সতীর্থদের প্রতি অনেক শুভেচ্ছা। প্রতিটি ম্যাচ তোমরা হৃদয় দিয়ে খেলো। ফল কারও হাতে নেই এটা ঠিকই। কিন্তু চেষ্টা তো আছে। সেটাই করতে হবে”।   


এই টুর্নামেন্টে মোট ছ’টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে ২৪টি দলকে। ভারত রয়েছে গ্রুপ বি-তে। তাজিকিস্তান, লেবানন, চীন ও আয়োজক কাতার গ্রুপ এ-তে রয়েছে। গ্রুপ সি-তে রয়েছে হংকং চীন, প্যালেস্তাইন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও ইরান। ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, জাপান ও ভিয়েতনাম রয়েছে গ্রুপ ডি-তে। মালয়েশিয়া, বাহরিন, জর্ডন ও দক্ষিণ কোরিয়া পরষ্পরের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে গ্রুপ ই থেকে নক আউট পর্বে যাওয়ার জন্য এবং গ্রুপ এফ-এ রয়েছে থাইল্যান্ড, কিরগিজ রিপাবলিক, ওমান ও সৌদি আরব।


প্রতি গ্রুপ থেকে সেরা দু’টি দল প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠবে। ভারত তাদের গ্রুপে সেরা দুইয়ে থাকতে পারবে কি না, সেটাই দেখার। অবশ্য ছ’টি গ্রুপের তিন নম্বর দলগুলির মধ্যে সেরা চারটির মধ্যে থাকলেও ১৬ দলের নক আউট রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা পাওয়া যাবে। সে জন্য ভারতকে গ্রুপ পর্বে তিনটির মধ্যে অন্তত দু’টি ম্যাচে জিততে হবে। (তথ্যসূত্র - আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: ৬ বছর পর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ফেরা ভুবনেশ্বরই কাঁটা বাংলার, অভিষেকের অপেক্ষায় সূরজ


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে