কলকাতা: ঘরের মাঠ বরাবরই পয়া এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan) কাছে। পরপর দুই মরসুম গোয়ায় জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থেকে আইএসএল (ISL 2022-23) খেলার পরে সবুজ-মেরুন বাহিনী যখন যুবভারতীর সবুজ গালিচায় নেমেছে, তখনই সমর্থকদের উল্লাসে উজ্জীবিত হয়ে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। পরিসংখ্যান বলছে চলতি আইএসএল মরসুমে এটিকে মোহনবাগান ঘরের মাঠে ১১টি ম্যাচ খেলেছে এবং তার মধ্যে আটটিতেই জিতেছে। 


সোমবার (১৩ মার্চ) ঘরের মাঠে আরও একটি ম্যাচ তাঁদের এবং সেটি সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগ। এই ম্যাচ জিততে পারলে আগামী শনিবার ফাইনালের লড়াইয়ে নামবে তাঁরা। যদিও ফাইনালে ওঠা তাদের নতুন নয়। আইএসএলে তাঁদের অভিষেকের বছরেই ফাইনালে উঠেছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিপিন সিংয়ের গোলে মুম্বই সিটি এফসি-র কাছে ১-২ হেরে আশাহত হয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। ফাইনালে ওঠা নতুন না হলেও খেতাব জয় এখনও হয়ে ওঠেনি ভারতের অন্যতম সেরা ক্লাবের।


তবে সে সব নিয়ে এখন ভাবছেনই না স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো ও তাঁর দলের ছেলেরা। এখন তাঁদের একটাই লক্ষ্য, সোমবার ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ এফসি-কে (Hyderabad FC) হারিয়ে ফাইনালে ওঠা। পরেরটুকু আগামী সপ্তাহের জন্য তোলা থাকবে। আপাতত তিন দিন আগেই হায়দরাবাদে সেমিফাইনালের প্রথম লেগের অভিজ্ঞতা ও ঘরের মাঠে সমর্থকদের শব্দব্রহ্মের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জয়ের পরিকল্পনাতেই ব্যস্ত এটিকে মোহনবাগান শিবির।


ছন্দে সবুজ-মেরুন 


গত বৃহস্পতিবার প্রথম লেগে কোনও গোল করতে না পারলেও ম্যাচের সবচেয়ে সহজ দুটি গোলের সুযোগ কিন্তু এটিকে মোহনবাগানই পেয়েছিল। প্রীতম কোটাল ও মনবীর সিং এই দুটি গোল করতে পারলে সে দিন জয়ের হাসি মুখে নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারতেন তাঁরা।


সে দিন প্রথমার্ধে হায়দরাবাদ ও দ্বিতীয়ার্ধে এটিকে মোহনবাগানের আধিপত্য দেখা যায়। বিরতির আগে পর্যন্ত হায়দরাবাদ যেখানে দুটি শট গোলে রাখে, সেখানে এটিকে মোহনবাগান একটি গোলমুখী শট নেয়। কিন্তু ম্যাচের শেষে দেখা যায় এটিকে মোহনবাগানের গোলমুখী শটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় সাত। সেখানে দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র একটি শট গোলে রাখতে পারে হায়দরাবাদ। তাঁরা সেটপিস থেকে বেশিরভাগ গোল করলেও এ দিন সাত-সাতটি কর্নার পেয়েও একটিও তাদের কাজে লাগাতে দেয়নি প্রতিপক্ষের ডিফেন্স।


এ মরসুমে যে মাঠে মাত্র দুটি ম্যাচ হেরেছে হায়দরাবাদ, সেই মাঠে নেমে তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে এটিকে মোহনবাগান যে ঘরের মাঠে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ইঙ্গিত দিয়েছে, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এখন দেখার বিষয় একটাই, ঘরের মাঠে হায়দরাবাদ এফসি-কে হারিয়ে দ্বিতীয়বার আইএসএল ফাইনালে খেলার সুযোগ অর্জন করে নিতে পারে কি না।


গতবারের চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফসি গত ম্যাচে শুরুতে ঝড় তুলে দিলেও দ্বিতীয়ার্ধে তাঁদের কিছুটা দিশাহারা লেগেছে। দুই সপ্তাহ বিশ্রামের পর খেলতে নামলেও শেষ ৪৫ মিনিট কিছুটা হলেও ক্লান্ত লেগেছে দলের তারকাদের। দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা বার্থোলোমিউ ওগবেচে, হাভিয়ের সিভেরিও, জোয়েল কিয়ানেজে, বোরহা হেরেরা, মহম্মদ ইয়াসির, হোলিচরণ নাজরিরা প্রত্যেকেই সে দিন তরতাজা হয়ে মাঠে নেমে প্রমাণ করে দিয়েছেন, যথেষ্ট ভাল ফর্মে আছেন তাঁরা। গতবারের চ্যাম্পিয়নের খেতাব নিজেদের দখলে রাখাটাই যেখানে সবচেয়ে বড় প্রেরণা, সেখানে তারা সহজেই হার মানবেন, এমনটা মনে করা মোটেই উচিত নয়।


গত বারের ফলাফল


এ ছাড়া এই মরসুমে অ্যাওয়ে ম্যাচে তাঁদের রেকর্ড মোটেই খারাপ নয়। বাইরের মাঠে দশটি ম্যাচের মধ্যে সাতটিতেই জিতেছে তারা। তবে কলকাতায় এসে ইস্টবেঙ্গলকে হারালেও এটিকে মোহনবাগানকে হারাতে পারেনি নিজামের শহরের দল। সে দিন চলতি লিগে অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়ে হায়দরাবাদ এফসি-কে ১-০-য় হারিয়ে দেয় সবুজ-মেরুন বাহিনী। ১১ মিনিটের মাথায় হুগো বুমৌসের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরে প্রতিপক্ষকে কোনও গোলই করতে দেয়নি গতবারের সেমিফাইনালিস্টরা। সারা ম্যাচে একটির বেশি শট গোলে রাখতে পারেনি নিজামের শহরের দল। সোমবারের ম্যাচ শেষেও কোন দল শেষ হাসি হাসবে কি না, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা


আরও পড়ুন: শারীরিক অসুস্থতা নিয়েই শতরান! কেমন আছেন বিরাট কোহলি? জানালেন অক্ষর