Bengal Pro T20: বৃষ্টি কাঁটায় নাজেহাল বেঙ্গল প্রো টি-২০, সময় নিয়ে প্রশ্ন, সূচিবদলের নিয়মে বৈষম্য নিয়ে ক্ষোভ!
Eden Gardens: গত বছর বেঙ্গল প্রো টি-২০ টুর্নামেন্টের প্রথম সংস্করণেও বৃষ্টি-কাঁটা ছিল। তবে এবার বৃষ্টিতে আরও নাস্তানাবুদ হচ্ছে টুর্নামেন্ট।

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বর্ষা প্রবেশ করেছে বঙ্গে। পুরুষদের বিভাগে ভেস্তে গিয়েছে ৪টি ম্যাচ। মহিলাদের বিভাগে? ১০ ম্যাচ বাতিল। সব মিলিয়ে ১৪ ম্যাচ ভণ্ডুল হয়েছে। বলে রাখা ভাল যে, ১১টি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় রিপ্লে দেওয়া হয়েছিল। আর সেমিফাইনাল ও ফাইনাল-সহ ৬টি ম্যাচের সূচি পরিবর্তন হয়েছিল। তাও ১৪ ম্যাচ বাতিল।
বেঙ্গল প্রো টি-২০ (Bengal Pro T20) টুর্নামেন্ট নিয়ে নাজেহাল সিএবি। টুর্নামেন্টের সময়সূচি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ক্ষোভ রয়েছে আট ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের অন্দরেই।
গত বছর বেঙ্গল প্রো টি-২০ টুর্নামেন্টের প্রথম সংস্করণেও বৃষ্টি-কাঁটা ছিল। ইডেনে পুরুষদের ফাইনাল ম্যাচ করাই যায়নি প্রবল বৃষ্টিতে। যুগ্মজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল দুই ফাইনালিস্টকে। তবে এবার বৃষ্টিতে আরও নাস্তানাবুদ হচ্ছে টুর্নামেন্ট।
বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগ এবার শুরু হওয়ার কথা ছিল অনেক আগেই। মহিলাদের টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৬ মে। ৪ জুন ছিল ফাইনাল। পুরুষদের টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার কথা ছিল ৪ জুন। ফাইনাল ছিল ২১ জুন। যদিও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আইপিএল যখন বন্ধ, পিছিয়ে যায় বেঙ্গল প্রো টি-২০-ও। ১১ জুন শুরু হয় টুর্নামেন্ট। মহিলা ও পুরুষ - দুই বিভাগেই ফাইনাল হবে ইডেনে ২৮ জুন, শনিবার।
সিএবি থেকে বলা হচ্ছে, বৃষ্টির ওপর কারও হাত নেই। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনার সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব নয়। যে যুক্তি মেনে নিচ্ছেন অনেকেই। তবে গ্রুপ পর্বের মাঝেই যেভাবে সূচিবদল নিয়ে অবস্থান পাল্টেছে সিএবি, তা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আট ফ্র্যাঞ্চাইজির ১৬ দলের অন্দরেই।
কেন?
১১ জুন টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর থেকেই বৃষ্টি কাঁটায় যখন একের পর এক ম্যাচ ভেস্তে যাচ্ছে পুরুষ ও মহিলা - দুই বিভাগেই, সিএবি থেকে রিপ্লে ও রিশিডিউল মিলিয়ে মোট ১৭টি ম্যাচের সূচি বদল করা হয়। ইডেন গার্ডেন্স ও সল্ট লেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ ছাড়াও টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস মাঠেও খেলা ফেলা হয়। যদিও বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে বলা হচ্ছে, সিএবি থেকে বৈঠক করে ২১ জুন পর্যন্ত হওয়া ম্যাচগুলির সূচি পাল্টানো হয়। কিন্তু ২২ জুন থেকে গ্রুপের শেষ পর্বের ম্যাচগুলি আর সূচি বদলের আওতায় রাখা হয়নি। বলা হচ্ছে, গ্রুপ পর্বে কোনও কারণে সূচি বদল করা হলে সেই নিয়ম কেন গ্রুপের সব ম্যাচের জন্য প্রযোজ্য হল না?
একটি ম্যাচের কথা উঠে আসছে আলোচনায়। ২৬ জুন মহিলাদের বিভাগে মুখোমুখি হয়েছিল শ্রাচী রাঢ় টাইগার্স ও লাক্স শ্যাম কলকাতা টাইগার্স। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ১০ ওভারে ৭৭/৬ তোলে রাঢ় টাইগার্স। জবাবে কলকাতা টাইগার্সের স্কোর যখন ২ ওভারে ৩/১, বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেস্তে যায়। কার্যত জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হয় রাঢ় টাইগার্সের। পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যায়। ৭ ম্যাচে ৮ পয়েন্টে শেষ করে রাঢ় টাইগার্স। হারবার ডায়মন্ডসের সঙ্গে পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে পিছিয়ে থাকায় সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি রাঢ় টাইগার্স।
বলা হচ্ছে, কেন ম্যাচটি রিপ্লে দেওয়ার ব্যবস্থা করা গেল না? তাতে অন্তত সেমিফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকত রাঢ় টাইগার্সের। রাঢ় টাইগার্সের মালিক তথা শ্রাচী গ্রুপের কর্ণধার রাহুল টোডি বললেন, 'খুব অল্পের জন্য সেমিফাইনালে পৌঁছতে পারলাম না। দুর্ভাগ্যজনক। তবে বৃষ্টির ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। এই সময়ে টুর্নামেন্ট হলে বৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।' রাহুল সিএবি-তে বড়িশা স্পোর্টিং ক্লাবের প্রতিনিধিও। বললেন, 'আমি সিএবি-কে ইতিমধ্যেই জানিয়েছি টুর্নামেন্টের সময়সূচি নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য। পরেও এ নিয়ে কিছু প্রস্তাব দেব। সব দলই জেতার জন্য মাঠে নামে।'
বেঙ্গল প্রো টি-২০ আয়োজনের জন্য একটি কমিটি তৈরি করেছে সিএবি। সেই কমিটির প্রধান দীপ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পাওয়া গেল আশ্চর্যজনক তথ্য। বললেন, 'ব্যক্তিগত কিছু কারণে আমি টুর্নামেন্ট শুরুর দুদিন আগে থেকে আর সেভাবে যুক্ত নই। সঠিক বলতে পারব না কী হয়েছে।'
বেঙ্গল প্রো টি-২০ আয়োজক কমিটিতে আট জন সদস্য রয়েছেন খাতায়-কলমে। দীপ ছাড়াও শুভ্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায়, সুরজিৎ লাহিড়ী, অম্বরীশ মিত্র, কেয়া রায়, লোপামুদ্রা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জয়দীপ মুখোপাধ্যায় রয়েছেন কমিটিতে। সঙ্গে ক্যাগ প্রতিনিধি অরবিন্দ্র কুমার রাই এবং সিএবি-র দুই পদাধিকারী - সচিব নরেশ ওঝা ও কোষাধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তী। শোনা গেল, ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে একাধিক সদস্য টুর্নামেন্ট থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন।
সিএবি-র ট্যুর, ফিক্সচার ও টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান তথা সংস্থার রোজনামচার সঙ্গে জড়িত কর্তা, প্রাক্তন ক্রিকেটার সঞ্জয় দাস বলছিলেন, 'ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, ২০ জুন পর্যন্ত যে সমস্ত ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছিল, সেগুলির নতুন সূচি হবে। পরে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দাবি মেনে ২১ জুন পর্যন্ত ভেস্তে যাওয়া ম্যাচগুলির সূচি পাল্টানো হয়। বৃষ্টির ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। এত বড় টুর্নামেন্টে কিছু ম্যাচ ভেস্তে যেতেই পারে। আইপিএলেও হয়।'
টুর্নামেন্ট কি অন্য কোনও সময়ে করা যায় না? এ ব্যাপারে অন্তরায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের নিয়ম। কারণ, বোর্ড থেকে বলা রয়েছে, আইপিএলের আগে কোনও রাজ্য নিজস্ব টি-২০ লিগ করতে পারবে না। তাই সিএবি চাইলেও আইপিএলের আগে বেঙ্গল প্রো টি-২০ করতে পারবে না। সিএবি থেকে বলা হচ্ছে, ভারত-পাক যুদ্ধ না বাঁধলে এই পরিস্থিতি হতোই না। আগেই শুরু হয়ে যেত টুর্নামেন্ট। যদিও সিএবি-র একাংশ থেকে বলা হচ্ছে, ৩ জুন আইপিএল ফাইনাল হয়ে যাওয়ার পর ১১ জুন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আরও আগে টুর্নামেন্ট শুরু করা যেত। সেক্ষেত্রে বৃষ্টি কাঁটায় সূচিবদল করতে হলেও বাড়তি সময় থাকত হাতে। বলা হচ্ছে, তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগ ৫ জুন, সৌরাষ্ট্র প্রিমিয়ার লিগ ৭ জুন শুরু করা গেলে বেঙ্গল প্রো টি-২০ নিয়ে আরও দেরি করা হল কেন!
বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা আপাতত প্রার্থনা করছেন, শনিবারের জোড়া ফাইনাল ম্যাচে অন্তত প্রকৃতি যেন বিরূপ না হয়। ট্রফির ফয়সালা যেন স্বচ্ছভাবে হয়।




















