Bengal Pro T20: আইপিএলের ধাঁচে নিলাম চালু হোক বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগেও, প্রস্তাব ঋদ্ধির, কেন উঠছে না বড় রান?
Eden Gardens: মাত্র ২ মাস আগে যে মাঠে আইপিএলে দুই ইনিংস মিলিয়ে উঠেছিল ৪৭২ রান, সেই ইডেনেই বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে ১৩০-১৪০ রান তুলতেই কালঘাম ছুটছে আট ফ্র্যাঞ্চাইজির!

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: মাত্র ২ মাস আগে আইপিএলে (IPL 2025) এই মাঠে লখনউ সুপার জায়ান্টসের ২৩৮ রান তাড়া করে প্রায় জিতে যাচ্ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। মাত্র ৪ রান আগে, ২৩৪ রানে থামতে হয়েছিল নাইটদের। সব মিলিয়ে ম্যাচে উঠেছিল ৪৭২ রান! সেই মাঠেই বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে (Bengal Pro T20) ১৩০-১৪০ রান তুলতেই কালঘাম ছুটছে আট ফ্র্যাঞ্চাইজির। যা দেখে অনেকে হতবাক। প্রশ্ন উঠছে, ইডেনের পিচ বদলে গেল? নাকি তফাত ক্রিকেটারদের গুণগত মানে?
ঋদ্ধিমান সাহা বরাবরই স্পষ্টবক্তা। বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে গতবার ছিলেন ক্রিকেটার। এবার সার্ভোটেক শিলিগুড়ি স্ট্রাইকারের মেন্টর। এবিপি আনন্দের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় খোলামেলা জানিয়ে দিলেন, ক্রিকেটের গুণগত মানে তফাতই আসল কারণ। বললেন, 'আইপিএলে যারা খেলে, তারা হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, অথবা ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ খেলে সুযোগ পেয়েছে। বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে স্থানীয় ক্রিকেট থেকে ক্রিকেটার বেছে খেলা হচ্ছে। দক্ষতার তফাত তো আছেই। আত্মবিশ্বাস একটু কম ছেলেদের।'
তবে ইডেনের পিচ সামান্য বদলেছে বলেও মনে করেন ময়দানের পাপালি। বললেন, 'গতবারের চেয়ে এবারের উইকেট তবু ভাল। তবে আইপিএলে পাটা উইকেটে খেলা হয়। ইডেনের পিচে কোনও কোনও বল নামছে, কোনও বল বাউন্স করছে। গতি ও বাউন্সের সামান্য তারতম্য হচ্ছে। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হলে মানিয়ে নিতে পারত। সকলের পক্ষে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। কোন বল খেলব, কীভাবে খেলব, সেই ধারণা কম আছে ছেলেদের। যত খেলবে, তত সেই অভিজ্ঞতা বাড়বে।'
বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে প্লেয়ার ড্রাফটিংয়ের নিয়ম নিয়েও খুব একটা খুশি শোনাল না ঋদ্ধির গলা। বললেন, 'সব দলই চায় জিততে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। তবে চাওয়া ও করার মধ্যে অনেক তফাত। আইপিএলে নিলাম হয়। বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে তো তা হয় না। লটারির মাধ্যমে ক্রিকেটার বাছাই করা হয়। লাকি ড্রয়ে যে দলের নাম আগে আসে, তারা ভাল ক্রিকেটার নিতে পারে। কারও পালা ৬ নম্বরে এলে ততক্ষণে কয়েকজন ভাল ক্রিকেটার হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। সেগুলোয় তফাত হয়ে যাচ্ছে।'
শিলিগুড়ি স্ট্রাইকার্সের মার্কি প্লেয়ার ছিলেন আকাশ দীপ। তবে তিনি ভারতীয় দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফর করছেন। তাঁকে টুর্নামেন্টে পাওয়া যাবে না। ঋদ্ধিমান বলছেন, 'আকাশকে না পাওয়াটা বড় ধাক্কা। ভারতীয় দলে খেলা ক্রিকেটারকে না পেলে তফাত তো হয়ই। শুধু বোলিং নয়, ব্যাটিং, ফিল্ডিংয়েও ও দলের ভরসা। তবে ড্রাফটিং থেকে ওর যোগ্য বিকল্প তো পাইনি। ফের ড্রাফটিংয়ের নিয়মের কথাই বলব। হাতে যা আছে, তা দিয়েই চেষ্টা করছি।'
শিলিগুড়ি থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার এখন শিলিগুড়ির দলেরই মেন্টর। ঋদ্ধিমান বলছেন, 'ড্রাফটিংয়ে সব দলের সমান সুযোগ হয় না। কখনও চার নম্বরে সুযোগ পাওয়া যায়, কখনও ছয় নম্বরে। অনুষ্টুপকে (মজুমদার) আমরা পেয়েছি টস করে। এই নিয়মটা একটু বদলালে ভাল হয়। ড্রাফটিংটা সিএবি প্রত্যেকবার এভাবেই করবে কি না জানি না। তবে নিলাম করা যেতেই পারে। যেমন হয়তো কোনও ক্রিকেটারের জন্য সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেওয়া হল, যে এর জন্য ১ লক্ষ টাকার বেশি খরচ করা যাবে না। এভাবে নিলাম হলে সবাই হয়তো ভাল দল বানাতে পারবে। ড্রাফটিংয়ে সবাই ভাল ক্রিকেটার চাইবে। সমতা বজায় থাকছে না। কেউ আট নম্বরে প্লেয়ার বাছাইয়ের সুযোগ পেলে হাত থেকে ভাল ক্রিকেটারেরা বেরিয়ে যাবেই।'
শিলিগুড়ি স্ট্রাইকার্স প্রথম দুই ম্যাচে হেরেছে। সোমবার লাক্স শ্যাম কলকাতা টাইগার্সের সঙ্গে তৃতীয় ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যায়। ঋদ্ধিমান বলছেন, 'আমাদের বোলিং ভাল হচ্ছে। তবে ব্যাটিংয়ে কম রান উঠছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে, যেখানে ৭-৮টা করে গ্রুপের ম্যাচ থাকে, সেখানে সব সময়ই ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাওয়া যায়। এমন নয় যে, টুর্নামেন্টের অর্ধেক খেলা হয়ে গিয়েছে। সবে শুরু হয়েছে। তার ওপর বর্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে। যখন-তখন যে কোনও দলের ম্যাচ বাতিল হতে পারে। পয়েন্ট ভাগাভাগি হয়ে যেতে পারে। তাতে বদলে যেতে পারে পয়েন্ট টেবিলের অঙ্কও।'
ভারতীয় দলের হয়ে ৪০ টেস্ট খেলা প্রাক্তন তারকা বললেন, 'আমরা প্রথম দুই ম্যাচ হেরেছি। দলটা নতুন। অনেক নতুন ক্রিকেটার এসেছে। আমরা ডট বল বেশি খেলছি। টি-২০ ক্রিকেটের জন্য যা একেবারে ঠিক নয়। সেই কারণে প্রথম দুই ম্যাচেই ২০-২৫ রান করে কম উঠেছে। যদি ডট বল কমানো যায় এবং বাউন্ডারি মারা যায়, তাহলে ছবিটা বদলে যাবে। এখনও পর্যন্ত ছেলেরা দক্ষতা অনুযায়ী খেলতে পারেনি। প্রতিপক্ষের উইকেট পড়ছে বলে শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচ যাচ্ছে।'
ঋদ্ধিমানের আরও উপলব্ধি, 'এখন যারা খেলছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে আগে খেলেছে। আর কয়েকজন নৈশালোকে কখনও ম্যাচই খেলেনি। সুপার লিগ, এ, বি ও সি গ্রুপের ক্রিকেটারদের নিয়ে দল তৈরি করা হয়েছে। ওদের সময় দিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারবে, তত ভাল। বলা সহজ, মাঠে গিয়ে করে দেখানোটা অত সহজ নয়। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত মানিয়ে নেওয়া যায়। ১৬০ রানের বেশি তুলতে পারলে খেলা ঘুরবে। ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে। অন্য দলের ফলাফলের ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। তবে আগে নিজেদের ম্যাচ জিততে হবে।'
দলের বাঁহাতি স্পিনার রাজু হালদার যেভাবে পিতৃবিয়োগের পর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের আগেই মাঠে নেমে পড়েছেন, তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ মেন্টর ঋদ্ধিমান। বললেন, 'রাজু সকলের কাছেই উদাহরণ। দারুণ বল করছে। যখন থেকে খেলছে, তখন থেকে ভাল বোলিং করছে। উইকেট নিয়েছে। এত উইকেট নেওয়া সহজ নয়। পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসাবে নির্বাচকরা ওকে বাংলা দলে নিলে ভাল হয়। তাতে বোলারদের মধ্যে প্রতিযোগিতাও বাড়বে।'
মেন্টরের ভূমিকায় অভিজ্ঞতা কেমন? 'দারুণ অভিজ্ঞতা। গতবার ক্রিকেটার হিসাবে খেলেছি। এবার মেন্টর। তবে দল না জিতলে কেউই বুঝতে পারবে না। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। তবে মেন্টর সব সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আগে কোচ, অধিনায়কের সিদ্ধান্ত। তারপর মেন্টর মতামত দেয়। ত্রিপুরাতেও এরকম দায়িত্ব সামলেছি। উপভোগ করছি নতুন দায়িত্ব,' বলছিলেন ঋদ্ধিমান। যোগ করলেন, 'কোচ হিসাবে ক্রিকেটারদের মাঠের পারফরম্যান্সই মূল কথা। সবাই সমান হয় না। সবাইকে একভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। আমি চাই মাঠে নেমে শরীরী ভাষা, পরিশ্রম যেন ঠিক জায়গায় থাকে। মাঠের বাইরে তার ব্যক্তিগত জীবনে নাক গলাতে চাই না। তবে মাথায় রাখতে হবে, যেন দলের ওপর কোনও প্রভাব না পড়ে।'



















