(Source: Poll of Polls)
CAB AGM: সিএবি-র AGM-এর দিনক্ষণ ঠিক হয়ে গেল, কেন অগ্নিগর্ভ হল এপেক্স কাউন্সিলের বৈঠক?
Eden Gardens: সব কিছু ঠিকঠাক চললে ২০ সেপ্টেম্বর, শনিবার বাইপাসের ধারের এক হোটেলে সিএবি-র এজিএম আয়োজিত হবে।

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: একের পর এক বিতর্কে তোলপাড় বঙ্গ ক্রিকেট। সেই আবহে সোমবার সিএবি-র (CAB) এপেক্স কাউন্সিলের বৈঠক যে নিস্তরঙ্গ হবে না, বরং ঘটনাবহুল থাকবে, বাংলা ক্রিকেটের রোজনামচার সঙ্গে জড়িত সকলেই আঁচ করেছিলেন। তবে সেই বৈঠক যে এতটা অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে, তা হয়তো আগাম অনুমান করতে পারেননি অনেকেই।
একাধিক বিষয়কে কেন্দ্র করে সিএবি-র এপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকে সোমবার সন্ধ্যায় ঝড় উঠল। যে বৈঠকে প্রাথমিকভাবে নির্ধারিত হয়ে গেল সিএবি-র বহু প্রতীক্ষিত বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM)-এর দিনক্ষণও। সব কিছু ঠিকঠাক চললে ২০ সেপ্টেম্বর, শনিবার বাইপাসের ধারের এক হোটেলে সিএবি-র এজিএম আয়োজিত হবে। সেদিন সিএবি-র পরবর্তী পদাধিকারীদের বেছে নেওয়া হবে। তবে ভোটাভুটি হবে, নাকি সমঝোতা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বাংলার ক্রিকেট প্রশাসনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত, দুঁদে এমন অনেকেই বলছেন, এত আগে থেকে সিএবি-র অঙ্ক নিয়ে পূর্বাভাস করা সম্ভব নয়। কারণ, সমীকরণ বদলে যেতে লাগে কয়েক ঘণ্টা। তবে নির্বাচনী দামামা যে বেজে গেল, বলার অপেক্ষা রাখে না।
সোমবারের এপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকে মোটামুটিভাবে ঠিক হয়েছে, ৩০ অগাস্ট, শনিবার আলিপুরের ধনধান্য অডিটোরিয়ামে সিএবি-র বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হবে।
এদিনের বৈঠকে অন্যতম আলোচ্যসূচি ছিল, উত্তরপল্লি মিলন সংঘের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ। যে অভিযোগে বলা হয়েছিল, ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভা হচ্ছে না কয়েক বছর। যে কারণে তাদের অনুদান আটকে দিয়েছিল সিএবি। এই ক্লাবের প্রতিনিধি সিএবি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট অমলেন্দু বিশ্বাস। সিএবি-র ওম্বাডসম্যান বিষয়টি এপেক্স কাউন্সিলে পাঠিয়েছিলেন। উত্তরপল্লি মিলন সংঘের পক্ষ থেকে সমস্ত খরচের হিসেব পেশ করা হয়েছে। সোমবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কোনও এক চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টকে দিয়ে ভেরিফাই করিয়ে নেওয়া হলেই আটকে থাকা অনুদান পেয়ে যাবে ক্লাবটি।
পাশাপাশি লিগ ফাইনালে আচরণবিধি ভাঙার জন্য যে চার ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত আগেই হয়েছিল, তা নিয়েও আলোচনা হয়। ৯ জুনের বৈঠকের মিনিটসে সই হয়েছে। সেই অভিযুক্ত চার ক্রিকেটারের শাস্তি আনুষ্ঠানিকভাবে কয়েকদিনের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি আম্পায়াররা অভিযোগ করেছিলেন, লিগ ফাইনালে কোনও এক প্রভাবশালীর কথায় তাঁরা ম্যাচের বাড়তি সময় খেলা করাতে পারেননি। জানা গিয়েছিল, আম্পায়ার কমিটির চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই নাকি ম্যাচের অতিরিক্ত সময় ব্যবহার করা যায়নি। এ ব্যাপারে প্রসেনজিতের কাছে জবাবদিহি চাওয়া হচ্ছে।
লিগ ফাইনালে বেনজির বিতর্কের পর সিদ্ধান্ত হয়েছিল, অভিযুক্ত আম্পায়ারদের সেমিফাইনাল বা ফাইনালের মতো ম্যাচ দেওয়া হবে না। তারপরেও সদ্যসমাপ্ত বেঙ্গল প্রো টি-২০ টুর্নামেন্টের ফাইনালে সেই আম্পায়ারদের মধ্যেই দুজনকে ম্যাচ পরিচালনা করতে দেখা যায়। যা নিয়ে এদিনের বৈঠকে প্রশ্ন তোলা হয়। সিএবি-র তরফে বলা হয়, অভিযুক্ত আম্পায়ারদের স্থানীয় ক্রিকেটের সেমিফাইনাল বা ফাইনাল আয়োজনের দায়িত্ব না দেওয়ার কথা বলে হয়েছিল। তবে বেঙ্গল প্রো টি-২০ সেই আওতার বাইরে ছিল। যদিও তা নিয়েও দ্বিমত রয়েছে। টাউন ক্লাবের সহ সচিব সুরঞ্জন মুখোপাধ্যায় গত পাঁচ বছর ধরে সিএবি-র কিউরেটরও। তাঁর বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠছে বলে আলোচনা হয় বৈঠকে।
তবে বৈঠকে বিস্ফোরণ ঘটে, যখন এপেক্স কাউন্সিলের কয়েকজন সদস্য সিএবি কোষাধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি ওঠা স্বার্থের সংঘাত ও টাকা আত্মসাৎ করার গুরুতর অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করতে চান। শোনা গেল, সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ও সচিব নরেশ ওঝা এপেক্স কাউন্সিলের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাই করতে চাননি। ব্যাপারটা এথিক্স অফিসার ও ওম্বাডসম্যানের বিচারাধীন বলে এড়িয়ে যেতে চান তাঁরা। এপেক্স কাউন্সিলে এটা আলোচনা করা যায় না বলেও বলা হয় সদস্যদের।
যদিও তাতে পরিস্থিতি আয়ত্তে আসেনি, উল্টে উত্তাপ আরও বাড়ে। শোনা গেল, এপেক্স কাউন্সিলের এক সদস্য সিএবি-র গঠনতন্ত্র মনে করিয়ে দিয়ে দাবি করেন যে, এপেক্স কাউন্সিল সব বিষয়েই আলোচনা করতে পারে। বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে যে গঠনতন্ত্র সংশোধিত হয়েছিল, খোদ সেখানেই এপেক্স কাউন্সিলকে এই এক্তিয়ার দেওয়া আছে।
বৈঠকে উপস্থিত অনেকেই দেখে বেশ অবাক হয়ে যান যে, অভিযুক্ত প্রবীর চক্রবর্তী বহাল তবিয়তে সভাঘরে হাজির। তাঁর বিরুদ্ধে উয়াড়ি ক্লাবের একদল সদস্যের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে যখন আইনি পথে তদন্ত হচ্ছে, কেন নিরপেক্ষতার স্বার্থে তাঁকে তদন্ত চলাকালীন সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হল না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। বলা হচ্ছে, তাতে অন্তত সিএবি-র ভাবমূর্তি স্বচ্ছ থাকত। অভিযোগ ওঠার পর প্রবীর উয়াড়ি ক্লাবের সচিব পদ ছেড়েছেন। কিন্তু সিএবি কোষাধ্যক্ষ পদে এখনও আসীন। বলা হচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে ক্লাবের অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছিল তিনি দুই পদেই থাকাকালীন। ৫ জুলাই এথিক্স অফিসার ও ১৯ জুলাই ওম্বাডসম্যান শুনানি ডেকেছেন। কেন আপাতত তাঁকে ক্রিকেট প্রশাসনিক কাজ থেকে অব্যহতি দেওয়া হল না!
শোনা গেল, প্রবীর চক্রবর্তীর প্রসঙ্গে তুলেছিলেন যে সদস্য, সিএবি সচিব তাঁর বিরুদ্ধে চিঠি পাঠানোর হুমকি দেন। এ-ও শোনা গেল যে, সিএবি প্রেসিডেন্ট বৈঠকে বলেন, স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠলে বাংলা থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা তারকারাও সমস্যায় পড়বেন। কারণ, তাঁরা সিএবি থেকে টাকা পাওয়ার পাশাপাশি ভোটাধিকারও প্রয়োগ করেন। যদিও সে দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন সিএবি প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত প্রাক্তন ও বর্তমান কর্তাদের অনেকেই। আপাতত সকলেই এথিক্স অফিসার ও ওম্বাডসম্যানের শুনানিতে কী হয়, তা জানতে মুখিয়ে রয়েছেন।
আর কেউ কেই প্রশ্ন তুলছেন, প্রশাসনের এত আকচাআকচির মধ্যে ক্রিকেট কোথায়? বাংলা শেষ কবে যেন রঞ্জি ট্রফি জিতেছিল?




















