Eden Gardens: আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে বিদ্ধ খোদ সিএবির কোষাধ্যক্ষ! বেনজির ঘটনায় তোলপাড় বাংলার ক্রিকেটে
CAB News: অভিযোগ পেয়ে তৎপর সিএবি-র ওম্বাডসম্যান, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। ১৯ জুলাই ইডেন গার্ডেন্সে শুনানিও ডেকেছেন তিনি।

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: পানীয় জল বা খাবারের বিল, কিংবা গাড়ির খরচ নিয়ে অতীতে প্রশ্ন উঠেছে সিএবি-র (CAB) ফিনান্স কমিটির বৈঠকে। তবে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠছে খোদ বঙ্গ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থার কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে? জল গড়াচ্ছে আদালতে? বাংলা ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেছে কি না, মনে করতে পারছেন না ময়দানের কেউই।
বেনজির সেই ঘটনা ঘিরেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে সিএবি-র অন্দরে। চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পেয়ে তৎপর হয়েছেন সিএবি-র ওম্বাডসম্যান, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। অভিযোগকারীদের বক্তব্য এবং অভিযুক্তের বয়ান শোনার জন্য ১৯ জুলাই ইডেন গার্ডেন্সে শুনানিও ডেকেছেন তিনি।
ঘটনার সূত্রপাত ময়দানের শতাব্দীপ্রাচীন উয়াড়ি ক্লাবের ছয় সদস্যের অভিযোগ ঘিরে। উয়াড়ি ক্লাবের সচিব, যিনি আবার সিএবি-র কোষাধ্যক্ষও, সেই প্রবীর চক্রবর্তী আর্থিক বেনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ তুলে লেক থানা ও আলিপুর আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই ছয় সদস্য। আলিপুর আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মৌমিতা রায় ১৮ জুন রায় দেন যে, এই অভিযোগকে মান্যতা দিয়ে তদন্ত করতে হবে লেক থানার অফিসার ইন চার্জকে। ২ জুলাই লেক থানার ওসি-র প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্টও তলব করেছেন তিনি। যে রায়ের কপি রয়েছে এবিপি লাইভ বাংলার হাতে।
ঠিক কী অভিযোগ?
৩০ মে সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে পাঁচ পাতার একটি অভিযোগপত্র জমা দেন উয়াড়ি ক্লাবের ছয় সদস্য। সেখানে দাবি করা হয়েছে, সিএবি-র গঠনতন্ত্র ভেঙেছেন খোদ সংস্থার কোষাধ্যক্ষই। সেই চিঠিতে লেখা হয়, সিএবি-র সংবিধান উপেক্ষা করে একইসঙ্গে দুই পদে রয়েছেন প্রবীর চক্রবর্তী। উয়াড়ি ক্লাবের সচিব ও সিএবি-র কোষাধ্যক্ষের পদ। যা লোঢা কমিটির সুপারিশ মেনে সংশোধিত সিএবি-র গঠনতন্ত্রের ৬৭ (৪) ধারার বিরোধী।
কিন্তু সেই চিঠির যে অভিযোগকে ঘিরে ময়দানে হইচই পড়ে গিয়েছে, সেটি হল সিএবি-র কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই আর্থিক বেনিয়মের তীর। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, সিএবি থেকে উয়াড়ি ক্লাব যে বার্ষিক অনুদান পায়, এবং অভিযুক্ত প্রবীর চক্রবর্তী কোষাধ্যক্ষের পদে থাকাকালীন যে অনুদানের চেকে সই করেন নিজেই, তা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন! নিজেদের অভিযোগের স্বপক্ষে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টও দিয়েছেন অভিযোগকারীরা। সেই সঙ্গে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের পর থেকে উয়াড়ি ক্লাবে কোনও বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) হয়নি। কোনও হিসেব পেশও করা হয়নি।
সিএবি-র নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম ডিভিশন ও দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাবগুলি প্রত্যেক বছর একটা মোটা অঙ্কের অনুদান পায় ক্রিকেটের পরিকাঠামো ও খেলা সংক্রান্ত অন্যান্য খরচের জন্য। ২০২২-২৩ মরশুমে টাকার অঙ্কটা ক্লাব প্রতি প্রায় ৯ লক্ষ ৯০ হাজার ও ২০২৩-২৪ মরশুমে প্রায় সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ডিভিশনের ক্লাবগুলির ক্ষেত্রে অনুদানের অঙ্কে সামান্য তারতম্য রয়েছে। অবশ্য ইডেনে কীরকম ম্যাচ হচ্ছে এবং বোর্ড থেকে কত টাকার অনুদান আসছে, তার ওপর নির্ভর করে এই অঙ্ক সামান্য হেরফের হয়। যেমন, ২০২৩ সালে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য সিএবি-র ভাঁড়ারে এসেছিল বাড়তি অর্থ। সদস্য ক্লাবগুলির অনুদানও বেড়েছিল।
তবে অনুদান পেতে গেলে খরচের হিসেব সিএবি-তে পেশ করতে হয় প্রত্যেক ক্লাবকে। অভিযোগ, দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলা উয়াড়ি ক্লাব সেটা করছে না। তাও পেয়ে যাচ্ছে অনুদান! উয়াড়ি ক্লাবের অনেক সদস্যই অভিযোগ করছেন যে, সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। সিএবি-কে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখার আর্জি জানানো হয়েছে অভিযোগকারীদের তরফে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রবীর চক্রবর্তীকে কোষাধ্যক্ষের পদ থেকে বরখাস্ত করার আবেদনও করা হয়েছে।
শোনা গেল, অভিযুক্তের তরফে পাল্টা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময় ক্লাবকে ঋণ দিয়েছিলেন তিনি। সেই টাকাই তিনি ক্লাবের অনুদান থেকে শোধ করে নিয়েছেন। যদিও তার স্বপক্ষে কোনও গ্রহণযোগ্য নথি তিনি এখনও পেশ করতে পারেননি বলেই খবর। এ-ও শোনা গেল যে, তাঁকে দ্রুত নথি জমা দিতে বলা হয়েছে।
সিএবি গোটা ঘটনা প্রথমেই এথিক্স অফিসারের কাছে পাঠায়। তিনি একবার শুনানিও ডেকেছিলেন। শোনা গেল, ১৮ জুনের প্রথম শুনানিতে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য সিএবি-র কোষাধ্যক্ষের তরফে আরও সময় চাওয়া হয়েছে। ২৮ জুন, শনিবার বেলা সাড়ে ১২টায় ফের শুনানি ডেকেছেন এথিক্স অফিসার।
ইতিমধ্যেই ব্যাপারটি পৌঁছেছে সিএবির ওম্বাডসম্যান তথা কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের কাছে। ১৯ জুলাই হিয়ারিং ডেকেছেন তিনিও (যে চিঠির কপি রয়েছে এবিপি লাইভ বাংলার হাতে)। সেদিন দুই পক্ষের বক্তব্য শুনবেন তিনি। এথিক্স অফিসার কী রিপোর্ট জমা দেন, সেই বৈঠকে তা নিয়েও আলোচনা হবে। সব মিলিয়ে চরম অস্বস্তিতে সিএবি।
এ ব্যাপারে সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ প্রবীর চক্রবর্তীর সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল, তিনি অভিযোগ নিয়ে কী বলবেন? প্রবীর চক্রবর্তী বলেন, ‘এখনও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মতো পরিস্থিতি আসেনি। পরে নিশ্চয়ই জানাব।’



















