Grace Hayden: বাবা ছিলেন ভারতীয় বোলারদের আতঙ্ক, বুমরাকে ভয় পান মেয়ে! কলকাতায় জন্মদিনে পরবেন শাড়ি
Bengal Pro T20: অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা বরাবর ভারতীয় ব্যাটারদের বিপাকে ফেলেছেন। অথচ এখনকার ভারতীয় দলে রয়েছেন এমন এক ফাস্টবোলার, হেডেন-কন্যা যাঁর ফ্যান!

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বাবা ছিলেন ভারতীয় বোলারদের আতঙ্ক। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের (Indian Cricket Team) বিরুদ্ধে ১৮ টেস্টে ৫৯ ব্যাটিং গড়ে ১৮৮৮ রান। ৬টি সেঞ্চুরি। যার মধ্যে একটি ডাবল সেঞ্চুরি। ২৮ ওয়ান ডে ম্যাচে প্রায় ৫৪ গড়ে ১৪৫০ রান। ৩ সেঞ্চুরি। আর কাকে না সামলাতে হয়নি! অনিল কুম্বলে ও হরভজন সিংহ - শুধু ভারতের নয়, গোটা বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম দুই স্পিনার। সঙ্গে জাহির খান, জাভাগাল শ্রীনাথ, ইশান্ত শর্মা, আশিস নেহরা - এক সে বড়কড় এক নামজাদা পেসার। সকলের বিরুদ্ধেই ব্যাট হাতে দাপট দেখিয়েছেন। ২০০৩ সালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের টিম ইন্ডিয়ার বিশ্বজয়ের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গিয়েছিল যে অস্ট্রেলিয়ার হাতে, সেই দলের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন ম্যাথু হেডেন (Matthew Hayden)।
বাবার মতোই ক্রিকেট মাঠে ঝড় তুলেছেন হেডেন-কন্যা গ্রেস (Grace Hayden)। তবে তিনি ক্রিকেট খেলেন না। কাজ করেন ধারাভাষ্যকার ও ক্রিকেট সঞ্চালক হিসাবে। কলকাতায় এসেছেন বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগের ধারাভাষ্য দিতে। মাইকেল ক্লার্কের সঙ্গেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নজর কেড়েছিলেন। প্রত্যেক ম্যাচেই থাকছেন। ক্রিকেট নিয়ে সাবলীল আলোচনায়, পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে নজর কেড়ে নিয়েছেন ২৩ বছরের তরুণী।
ক্রিকেট প্রেম কি বাবার থেকে পাওয়া? ইডেন গার্ডেন্সের ক্লাব হাউসের তিনতলায় কনফারেন্স রুমে বসে এবিপি আনন্দের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার ফাঁকে গ্রেস হেডেন বললেন, 'আমি ক্রিকেটীয় পরিবেশে বড় হয়েছি। বাবা ক্রিকেটার। বাড়িতে খেলা নিয়ে আলাদা আবেগ ছিল।'
ভারতের বিরুদ্ধে ঈর্ষণীয় রেকর্ড ছিল ম্যাথু হেডেনের। মেয়েও ভারতকে ভালবেসে ফেলেছেন। গ্রেস বলছিলেন, 'কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অস্ট্রেলিয়া হোক বা ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, সর্বত্রই ক্রিকেট নিয়ে একইরকম আবেগ। বাবা ভারতকে খুব পছন্দ করে। আমিও সেটাই পেয়েছি। ভারতের সংস্কৃতি, খাবার, সবই আমার দারুণ লাগে। আইপিএলে আমি পাঁচ বছর হল সঞ্চালকের কাজ করছি। আমি ভারতে কাজ শুরু করার আগে থেকেই বাবা এখান থেকে রান্না শিখে যেত। কুইন্সল্যান্ডে আমাদের বাড়িতে সেসব রান্না হতো। ভারতীয় খাবারদাবারের সঙ্গে আমার অনেকদিনের পরিচয়। অনেকেই জানতে চান, প্রথমবার ভারতে এসে খাবার কেমন লেগেছিল। আমি বলি, আরে! আমার বাড়িতেও তো এসব রান্না হয়। আমার কাছে কিছুই নতুন নয়। ভারতীয় মশলার সঙ্গেও আমি পরিচিত। আইপিএলে সঞ্চালক হিসাবে কাজ করতে এসেও আমার সমস্যা হয়নি।'
ক্রিকেট সঞ্চলনা ও ধারাভাষ্যে কীভাবে এলেন? গ্রেস বলছেন, 'ক্রিকেট আমার কাছে ম্যাজিকের মতো। বাবা বিখ্যাত হওয়ায় সব সময়ই প্রচারের আলোয় থাকতে হয়েছে। আমি ছোট থেকেই খেলাধুলো ভালবাসি। তবে কেরিয়ার শুরু হয়েছিল মডেলিংয়ে। আমি ক্যামেরার সামনে বরাবরই স্বচ্ছন্দ। কথা বলতে ভালবাসি। স্কুল শেষ করার পর থেকেই মডেলিং করতাম। তারপর আমাদের দেশের প্রথম সারির চ্যানেল - চ্যানেল সেভেন সঞ্চালনার প্রস্তাব দেয়। হর্স রেসিং সঞ্চালনা করে কেরিয়ার শুরু। মেলবোর্নে হর্স রেসিং ও ফ্যাশনের অনুষ্ঠান দিয়ে কেরিয়ার শুরু। তারপর গত পাঁচ বছর ধরে স্টার স্পোর্টসের হয়ে আইপিএল করছি।'
গ্রেস আরও বললেন, 'আমার পরিবারের সংস্কৃতি খুব সাহায্য করেছে। বাবা নিজে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএলে খেলেছে। পরে ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করেছে। তাতে আমার খুব সুবিধা হয়েছে। আমি যে ভারতে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, তাতে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। ভারতে এত প্রাণশক্তি, এত রং, সুর, শব্দ, হৈচৈ, মানুষের উন্মাদনা, আমার দারুণ লাগে। আমার কাজ করতে খুব ভাল লাগে। আমাদের দেশের সংস্কৃতির চেয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত হলেও আমি ভালবাসি।'
অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইয়ান হিলির কন্যা অ্যালিসা দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলেন। আপনি কখনও ক্রিকেট খেলেছেন? গ্রেস বলছেন, 'ছোটবেলায় বাবা ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করিয়েছিল। খেলাধুলো আমি ভালবাসি। স্কুলে স্পোর্টস গার্ল অফ দ্য ইয়ার হয়েছি। তবে ক্রিকেটটা সেভাবে খেলা হয়নি। কখনও খেলার আগ্রহ অনুভব করিনি। তবে নেটে ব্যাটিং করেছি। মজা লাগে।'
ম্যাথু হেডেন স্পিনের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করতেন। গ্রেস দেখেছেন বাবার সাধনা। বলছিলেন, 'সাত বছর ধরে বাবা অস্ট্রেলিয়া দলে কখনও সুযোগ পেত, কখনও বাদ পড়ত। তাই আলাদা কিছু করতেই হতো। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের ভারতীয় স্পিনারদের খেলার ব্যাপারে দুর্বলতা ছিল। সেই সময় চেন্নাইয়ে একটা স্পিন ক্লিনিক হয়। বাবা সেখানে যোগ দিয়েছিল। সেখান থেকেই স্পিন খেলার পাঠ। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতে দাপট দেখিয়েছে।'
বাবা অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার সময় কখনও ভারতে আসা হয়নি গ্রেসের। বলছিলেন, 'ইংল্যান্ডে, দক্ষিণ আফ্রিকায়, শ্রীলঙ্কায় গিয়েছি। কিন্তু ঠিক ভারতে আসার সময় আমার স্কুলের পরীক্ষা বা এরকম কিছু পড়ে যেত। ২০১৮ সালে প্রথমবার ভারতে আসা। বেঙ্গালুরুতে আমার ১৬তম জন্মদিন কাটিয়েছিলাম। তবে ২০০৯ সালে আইপিএল যেবার দক্ষিণ আফ্রিকায় স্থানান্তরিত হয়েছিল, সেবার মাঠে গিয়ে খেলা দেখেছিলাম।'
ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রিয় কে? গ্রেসের কথায়, 'ঋষভ পন্থ। ওর ফিরে আসার গল্প অবিশ্বাস্য। ওর বেঁচে থাকাটাই অলৌকিক। ওর এমন খেলাটা অলৌকিক। মানসিক জোর শেখার মতো। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দারুণ রেকর্ড।'
অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা বরাবর ভারতীয় ব্যাটারদের বিপাকে ফেলেছেন। অথচ এখনকার ভারতীয় দলে রয়েছেন এমন এক ফাস্টবোলার, হেডেন-কন্যা যাঁর ফ্যান! কে সেই ভারতীয় পেসার? গ্রেস বলছেন, 'যশপ্রীত বুমরা। আমি দারুণ ভালবাসি ওকে। কী বোলার একজন! ব্যাটার হলে আমি কোনও দিন বুমরার বিরুদ্ধে খেলতে চাইতাম না। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যা খেলে, আতঙ্ক তৈরি করে দেয়। ওরে বাবা, ওকে খেলা দুষ্কর।' যোগ করলেন, 'কিংগ কোহলিকেও দারুণ লাগে। ওর দক্ষতার জন্য ওকে সকলেই ভালবাসে। ওর নেতৃত্ব দেওয়ার মুন্সিয়ানা ভাল লাগে।'
গ্রেস কলকাতায় বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে ধারাভাষ্যকার হিসাবে কাজ করছেন। বাবা ম্যাথু হেডেন লর্ডসে অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন। গ্রেস অবশ্য ফাইনালের খবর রাখছেন। বলছিলেন, 'স্টিভ স্মিথ প্রথম ইনিংসে দারুণ ব্যাট করল। বিউ ওয়েবস্টারও দুর্দান্ত। অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান দলে আমার প্রিয় ক্রিকেটার প্যাট কামিন্স। শান্ত, সংযত। ওকে যখন নেতৃত্ব দেওয়া হয়, অনেকে ভ্রু কুঁচকেছিলেন। কেউ ভাবতেও পারেননি যে, কামিন্স বিশ্বকাপ দেবে দেশকে। ট্র্যাভিস হেডকেও দারুণ লাগে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে আইপিএলে ভাল খেলেছে।'
বাবার সতীর্থদের মধ্যে মাইকেল ক্লার্ক খুব স্নেহ করেন। বলেন, 'তোমাকে কত ছোট দেখেছি আর এখন আমার সঙ্গে ধারাভাষ্যকারের কাজ করছো?' ভারতের অনেক ক্রিকেটারও সেই কথা বলেন।
কলকাতা কেমন লাগছে? 'কলকাতা দারুণ লাগছে। খুব গরম। কুইন্সল্যান্ডেও খুব গরম। তবে এখানে খুব আর্দ্রতা। কলকাতাকে কেন সিটি অফ জয় বলা হয় বুঝতে পারি। দুর্গাপুজো দেখেছি। কলকাতার মাছ খেয়েছি। ফুচকা খেয়েছি। বিরিয়ানি। তবে আমি মিষ্টি পছন্দ করি না। রসগোল্লা খাওয়া হয়নি,' বলছিলেন গ্রেস।
আগামী সোমবার তাঁর জন্মদিন। গ্রেস বলছেন, 'ভারতীয় শাড়ি আমার ভীষণ পছন্দের। ১৬ জুন কলকাতায় আমার জন্মদিন কাটাব। সেদিন শাড়ি পড়ার ইচ্ছে রয়েছে।' ক্রিকেট ছাড়া আর কী পছন্দ? 'অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস ভাল লাগে। আমি ও আমার পার্টনার সার্ফিং করি। রান্না করি। লোকজনকে রেঁধে খাওয়াতে ভাল লাগে। দৌড়তে ভাল লাগে,' বললেন গ্রেস।
ম্যাথু হেডেনের মেয়েও ক্রিকেট মাঠে মন জিতে নিচ্ছেন। তবে ভিন্ন ভূমিকায়।




















