কলকাতা: পেস্তা ও বাদামি রংয়ের টুপিতে জ্বলজ্বল করছে তিনটি ইংরেজি শব্দ। 'নেভার গিভ আপ'। বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, হাল ছেড়ো না।


টুপির মালিক, ঋদ্ধিমান সাহা (Wriddhiman Saha), ২ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরলেন বঙ্গ ক্রিকেটে। এই টুপি পরে ইডেন গার্ডেন্সে সাংবাদিক বৈঠক করতে আসা কি স্ত্রী রোমির কথায়? সোমবার সন্ধ্যায় ক্লাব হাউসের তিন তলার কনফারেন্স হলে বাংলায় ফেরার ঘোষণা তখন সমাপ্ত। খোশমেজাজে ঋদ্ধিমান। পরিচিত মুখ দেখেই শুরু আড্ডা। হেসে বললেন, 'কথাতেই তো আছে, হ্যাপি ওয়াইফ, হ্যাপি লাইফ।'


হাল ছেড়ো না। ঋদ্ধিমানের বাংলায় প্রত্যাবর্তনের দিন এমন শব্দবন্ধই যেন মানায়। তিনি নিজে ক্রিকেট মাঠে লড়াইয়ের প্রতীক। ভাঙা আঙুল নিয়ে ব্যাট করে বাংলার জার্সিতে ম্যাচ বাঁচিয়েছেন। রাজ্য দলে দীপ দাশগুপ্ত, জাতীয় দলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, দুই দুঁদে উইকেটকিপারের সঙ্গে লড়াই করেও কিপিং দক্ষতায় গোটা বিশ্বকে বলতে বাধ্য করিয়েছেন, 'সুপারম্যান ঋদ্ধিম্যান'। বাংলায় দ্বিতীয় ইনিংসের চ্যালেঞ্জটাও তাই দরাজভাবেই গ্রহণ করছেন।


২ বছর আগে খানিকটা মন কষাকষির সূত্র ধরেই বাংলা ছেড়ে ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। এই মরশুমে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরছেন। সিএবি-র সঙ্গে মান অভিমানের পালা মনে রাখতে চান না ৪০ ছুঁই ছুঁই ক্রিকেটার। আসন্ন ঘরোয়া মরশুমে বাংলার হয়ে খেলবেন, সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ও সচিব নরেশ ওঝাকে পাশে বসিয়ে বলে দিলেন ঋদ্ধিমান। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ও ত্রিপুরা ছেড়ে বাংলার হয়েই ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন। সিদ্ধান্ত আগেই হয়ে গিয়েছিল। সিলমোহর পড়ল সোমবার। ঋদ্ধিমানের ঘোষণা সামনে বসে শুনলেন সঞ্জয় দাস। ঋদ্ধির প্রত্যাবর্তনের নেপথ্যে বাংলার প্রাক্তন ক্রিকেটার তথা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ভূমিকাও অনস্বীকার্য।


তিন ফর্ম্যাটেই কি দেখা যাবে? বয়স যে চল্লিশের কোঠায় যেতে বেশিদিন বাকি নেই? বাস্তবোচিত বাউন্সার খোলা মনে সামলালেন। 'ঠিকই যে, আমার বয়স ৪০ ছুঁই ছুঁই। তবে দলের প্রয়োজনে তিন ফর্ম্যাটেই খেলতে প্রস্তুত। দলের সঙ্গে কথা বলে, কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল, বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পালদের সঙ্গে আলোচনা করে আর শরীর বুঝে সিদ্ধান্ত নেব,' বললেন ঋদ্ধি। যোগ করলেন, 'রঞ্জি ট্রফি জেতার জন্য সর্বস্ব দিয়ে ঝাঁপাব।'


গত মরশুমে বাংলাকে নেতৃত্ব দেওয়া মনোজ তিওয়ারি অবসর নিয়েছেন। আসন্ন রঞ্জিতে কি ঋদ্ধিমানকে বাংলার অধিনায়ক হিসাবে দেখা যেতে পারে? স্নেহাশিস বললেন, 'রঞ্জি ট্রফির এখনও মাস দুয়েক দেরি। তবে মনোজের অভাব পূর্ণ করবে ঋদ্ধি। নেতৃত্বের বিষয়টা আলোচনা করে নেব।' প্রস্তাব পেলে রাজি হবেন? অতীতে বাংলার নেতৃত্বের প্রস্তাব ফিরিয়েছেন। তবে এই ঋদ্ধি অনেক পরিণত। বললেন, 'দলের প্রয়োজনে সবরকম ভূমিকা পালনে রাজি। ১৫ বছর বাংলার হয়ে খেলেছি। মাঝে ২ বছর ত্রিপুরায় খেলার পর ফের বাংলার জার্সিতে নামব।'


বাংলার ক্রিকেট দলের অন্দরমহলে আর একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। ঋদ্ধি খেললে গত দুই মরশুমে উইকেটকিপার হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলা অভিষেক পোড়েলের কী হবে? দীপ দাশগুপ্তের জন্য তাঁকে যেমন একটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল, দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে আইপিএলেও নজরকাড়া চন্দননগরের অভিষেকের কপালেও কি সেরকম কিছু রয়েছে? ঋদ্ধিমান অবশ্য খোলাখুলি বলে দিচ্ছেন, 'যদি মনে হয় অভিষেকের কেরিয়ারের জন্য ও উইকেটকিপিং করলে ভাল হয়, তবে সেটাই করবে। আমি ব্যাটার হিসাবে খেলব।'


আসন্ন আইপিএলের নিলামেও তাঁর নাম দেখা যেতে পারে, ইঙ্গিত দিয়েছেন ঋদ্ধিমান। পাশাপাশি জানিয়েছেন, ক্রিকেট ছাড়ার পর সিএবি চাইলে কোচ হিসাবেও ক্রিকেটকে কিছু ফিরিয়ে দিতে চান।


ঋদ্ধি-আগমনে কি রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার সিদ্ধিলাভ হবে?


আরও পড়ুন: নীরজের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের পাকা কথা সেরে ফেললেন মনু ভাকেরের মা? ভাইরাল ভিডিও


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।