কলকাতা: টানা সাত ম্যাচে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে জয় অধরা ছিল তাদের। চার দিন আগেই সেই খরা কাটিয়ে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জয়ে ফিরেছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। তাও রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে। এ রকম সময়ে শিবিরের মধ্যে আত্মতুষ্টির অনুপ্রবেশের সম্ভাবনাই থাকে বেশি। কিন্তু পরের ম্যাচ যেখানে মুম্বই সিটি এফসি-র মতোই আরও এক শক্তিশালী দল এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে, সেখানে এই আত্মতুষ্টির প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়াই উচিত।  


সবুজ-মেরুন শিবিরেও তাই ‘আত্মতুষ্টি নিষিদ্ধ’ বোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন তাদের স্প্যানিশ কোচ হুয়ান ফেরান্দো। তাঁর স্পষ্ট ইঙ্গিত, মুম্বই সিটি এফসি-কে হারিয়েছ, অর্ধেক তৈরি অবস্থাতেও দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছ, এ সব ঠিকই আছে। কিন্তু তাই বলে নিজেদের এখন থেকেই চ্যাম্পিয়ন ধরে নেওয়ার কোনও কারণই নেই। ফুটবলে কখন যে কী হবে, তা মঙ্গলবার ডুরান্ড কাপের প্রথম সেমিফাইনালেই চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। তাই দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার কথা ছাড়া অন্য কিছু ভাবার প্রশ্নই ওঠে না।


এই ম্যাচে অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার ব্রেন্ডান হ্যামিলকে ছাড়া পুরো দলই হাতে পাচ্ছেন ফেরান্দো। এফসি গোয়ার সাম্প্রতিক ম্যাচগুলির ময়না তদন্ত করে তাদের শক্তি-দুর্বলতার আন্দাজ পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছে সবুজ-মেরুন শিবির এবং সেগুলোর ভিত্তিতেই নিজেদের প্রস্তুতি সারছে তারা। পাশাপাশি মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে তারা যে ভুলগুলি করেছেন, সেগুলি সংশোধনের কাজও হচ্ছে মোহনবাগান শিবিরে। চারদিনের মধ্যে দু’টি কঠিন ম্যাচ। তাই দলে ও রণনীতিতে পরিবর্তন আসতেই পারে।     


গত ম্যাচের আগে পর্যন্ত সাত গোল দিয়ে এক গোল খাওয়া সবুজ-মেরুন শিবিরের পারফরম্যান্স সমর্থকদের মন ভরাতে পারেনি। বিশেষ করে ডার্বির খেলা তো নয়ই। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের পারফরম্যান্সে ফের সেই চেনা ছন্দ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। দলের নির্ভরযোগ্য অস্ট্রেলিয়ান অ্যাটাকার দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকে রিজার্ভ বেঞ্চে রেখে দিয়েও দল নামাতে পারছেন ফেরান্দো, এটাই সবচেয়ে ইতিবাচক ব্যাপার। গত ম্যাচে দল ৩-১-এ এগিয়ে যাওয়ার পর আরমান্দো সাদিকুকে তুলে পেট্রাটসকে নামান তিনি। হুগো বুমৌস তাঁর চেনা ছন্দে ফিরেছেন। কামিংস, সাদিকু প্রতি ম্যাচেই যে উন্নতি করছেন, তা বোঝাই যাচ্ছে। আশিক কুরুনিয়ান, সহাল আব্দুল সামাদ, মনবীর সিংদের সঙ্গে ক্রমশ বোঝাপড়া গড়ে তুলছেন তাঁরা। ফলে দলের আক্রমণের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে।  


রবিবারের মতো রক্ষণকে আঁটোসাঁটো রেখে পেট্রাটস, বুমৌস, কামিংস ও সাদিকুরা যদি নিজেদের মধ্যে ঠিকমতো বোঝাপড়া বজায় রেখে আক্রমণ শানিয়ে যেতে পারেন, তা হলে এফসি গোয়াকে হারানো সম্ভব। রক্ষণে যে ভরসা জোগাতে পারেন, গত দুই ম্যাচে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন নবনিযুক্ত বিদেশি ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তে। তাঁর সঙ্গে আনোয়ার আলি, শুভাশিস বোসরাও ভাল ছন্দে রয়েছেন। ফলে গোয়ার দলের পক্ষে গোল করাটা মোটেই সহজ হবে না।


তবে সেটপিস মুভে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে দু’পক্ষকেই। কারণ, দুই দলেরই সেট পিস মুভ থেকে গোল করার প্রবণতা যথেষ্ট এবং সফলও হয়েছে তারা। সবুজ-মেরুন শিবিরে সেট পিস থেকে যেমন প্রায়ই বিপজ্জনক হয়ে উঠছেন আনোয়ার, তেমনই সন্দেশ ঝিঙ্গনকেও নজরে না রাখলে বিপদ হতেই পারে।