লন্ডন: ক্রিকেটীয় দক্ষতার লড়াইয়ের মতোই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকে বরাবরই প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন তাঁরা। বিশ্বক্রিকেটের মিথই হল, প্রতিপক্ষ যখন অস্ট্রেলিয়া (England vs Australia), তখন যুযুধান দলকে তৈরি থাকতে হবে বাগযুদ্ধের জন্য। কারণ অজি ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিই হল, প্রতিপক্ষকে ম্যাচে মানসিকভাবেও দুমড়ে মুচড়ে দাও আর ম্যাচ জেতো।
কিন্তু সেদিন ফিকে হয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সেই বুলডোজার মানসিকতাও। পরে জোফ্রা আর্চার বলেছিলেন, 'অস্ট্রেলীয়রা সেদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিল। প্রথমবার ওদের এরকম কুঁকড়ে যেতে দেখেছিলাম।'
২০১৯। অ্যাশেজ সিরিজ (Ashes Series)। সদ্য ওয়ান ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। কিন্তু পাঁচদিনের ক্রিকেটে কে আর কবে অস্ট্রেলিয়াকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পেরেছে। অতএব, ওয়ান ডে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সংসার তখন বেশ আঁধারে ঘেরা। কারণ, অ্যাশেজ সিরিজ, যে সিরিজকে ইংরেজ ক্রিকেটপ্রেমীরা সম্মানের লড়াই মনে করে থাকেন, সেখানে ইংল্যান্ড ১-০ পিছিয়ে। তাও আবার ঘরের মাঠে।
লিডসে তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে তুলেছিল ১৭৯ রান। বল হাতে ৬ উইকেট নিয়েছিলে জোফ্রা আর্চার। কিন্তু ব্যাট করতে নেমে ইংরেজ শিবিরে বিপর্যয়। জশ হ্যাজেলউড-প্যাট কামিন্স ও জেমস প্যাটিনসনের পেস ত্রিফলায় বিদ্ধ হয়ে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬৭ রানে অল আউট হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৬ রান করে অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের সামনে ম্যাচ জেতার জন্য লক্ষ্য ছিল ৩৫৯ রান। যা কার্যত অসম্ভব দেখাতে শুরু করেছিল।
কিন্তু তখনই ত্রাতা হয়ে হাজির বেন স্টোকস। সেই স্টোকস, যাঁর মুন্সিয়ানা অইন মর্গ্যানের হাতে তার মাস দেড়েক আগেই দিয়েছিল বিশ্বকাপ। ইংল্যান্ড তার আগে পর্যন্ত কোনওদিন টেস্টে ৩৫৯ রান তাড়া করে জেতেনি। পরিসংখ্যানও তাই ছিল ইংরেজদের বিপক্ষে।
তবে সব রেকর্ড ফিকে হয়ে গিয়েছিল স্টোকসের ব্যাটিং দক্ষতার সামনে। রিভার্স স্যুইপ, স্যুইচ হিট, কী ছিল না স্টোকসের ইনিংসে। শেষ পর্যন্ত ২৩৫ বলে ১১৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন স্টোকস। তাঁর ইনিংসে ছিল ১১ বাউন্ডারি ও ৮ ছক্কা। অবিচ্ছেদ্য দশম উইকেটে ৭৬ রান যোগ করেছিলেন স্টোকস ও জ্যাক লিচ। যে পার্টনারশিপে লিচের অবদান ছিল ১৭ বলে ১ রান। সেদিন অতিমানবীয় ইনিংস খেলে ইংল্যান্ডকে সিরিজে সমতায় ফিরিয়েছিলেন স্টোকসই। দেখিয়ে দিয়েছিলেন, কেন তাঁকে বিশ্বের সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকায় রাখা হয়।
* অ্যাশেজ সিরিজ শুরু ৮ ডিসেম্বর, ম্যাচের সম্প্রচার সোনি সিক্স, সোনি টেন থ্রি ও সোনি টেন ফোর চ্যানেলে।