কলকাতা: সারাদিন ধরে রাজনৈতিক ব্যস্ততায় কাটছে। বিধায়ক হওয়ার পর কসবার বাড়ি থেকে রোজ উলুবেড়িয়া যাতায়াত করছি। বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি, রক্তদান শিবির, মানুষের জন্য নানা কাজ আর সইসাবুদ করতেই সময় পার হয়ে যাচ্ছে। তার মধ্য়ে দরজায় কড়া নাড়ছে ইউরো কাপ আর কোপা আমেরিকা। দুই টুর্নামেন্ট দেখার জন্যই হা পিত্যেশ করে বসে থাকি প্রত্যেক চার বছর অন্তর। জানি না রাত জেগে বা ভোরে উঠে সব ম্যাচ দেখতে পারব কি না। তবে কয়েকটা দলের খেলা দেখব বলে মুখিয়ে রয়েছি।


ইউরো কাপে যেমন ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগালের পাশে বেলজিয়ামের ম্য়াচগুলির ওপর নজর থাকবে। গ্রুপ 'বি' থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়ার ব্যাপারে ফেভারিট বেলজিয়ামই। এই গ্রুপে বাকি তিনটি দল ডেনমার্ক, রাশিয়া ও ফিনল্যান্ড। কারা এই গ্রুপে ফেভারিট, ট্রফি জয়ের দাবিদার কারা, কোন দল ঘটাতে পারে অঘটন, আসুন দেখে নেওয়া যাক।


বেলজিয়াম: যদি শুধু খাতা কলম নিয়ে বসি, তাহলে বেলজিয়ামের ফুটলারদের নাম দেখলে ঈর্ষাণ্বিত হয়ে পড়বে যে কোনও দল। রোমেলু লুকাকু, এডেন অ্যাজ়ার, কেভিন দ্য ব্রুইন... একের পর এক বিশ্বফুটবলে সাড়া জাগানো সব নাম। প্রত্যেকেই ইউরোপের বিভিন্ন নামী ক্লাবে খেলে। একক দক্ষতায় ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। বেলজিয়ামের এই দলকে সোনার প্রজন্ম বলা হচ্ছে। ফিফা র‌্যাঙ্কিং অনুযায়ী বিশ্বের এক নম্বর দল। রাশিয়া বিশ্বকাপেও দুরন্ত ফুটবল উপহার দিয়েছিল বেলজিয়াম। দলে একঝাঁক স্কোরার। ফুটবল মাঠে একটা কথা আমরা খুব বলি। গোল চেনা। অর্থাৎ, ম্যাচের পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, জায়গায় বহল পেলে গোলটা করে দিয়ে চলে যাবে এমন ফুটবলার। বেলজিয়াম দলে এরকম একাধিক ফুটবলার রয়েছে। কেভিন দ্য় ব্রুইন তো দলটির চালিকাশক্তি। মাঝমাঠের ইঞ্জিন। একটা সময় যেমন স্পেনের সব আক্রমণ জ়াভি-ইনিয়েস্তার পা থেকে শুরু হতো, বেলজিয়ামেরও যাবতীয় আক্রমণ দানা বাঁধে দ্য ব্রুইনের পাস থেকে। গোলের ঠিকানা লেখা সব পাস বাড়াতে পারে। প্রায় ৬ বছর ধরে দলটিকে কোচিং করাচ্ছে রবের্তো মার্তিনেস। প্রত্যেক ফুটবলারকে খুব ভালভাবে চেনে, বুঝতে পারে। সেটাও একটা অ্যাডভান্টেজ বৈকি!


তবে কাঁটাও রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে প্রত্যাশার চাপ। ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেখেছি গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে ভাল খেলে সেমিফাইনালে হেরে যায়। ফুটবলে বেলজিয়ামও কিছুটা সেরকম। না হলে এত তারকাখচিত দলের সাফল্য কোথায়! ২০১৮ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে হেরে গিয়েছিল। আসলে ওদের নিয়ে গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের প্রচুর প্রত্যাশা। সেই চাপ মাঠে নেমে সামলাতে পারে না। তরুণ ফুটবলারদের আমরা সব সময় বলি, চাপ সামলানোর দক্ষতা থাকা জরুরি। সেটা বড় মঞ্চে তফাত গড়ে দেয়। এত ভাল মানের ফুটবলার থাকার পরেও বেলজিয়াম এই চাপের কাছেই মাথা নোয়ায়। লুকাকু যেমন গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওপেন নেট মিস করে নিজেই নিজের ওপর চাপ তৈরি করেছিল যা থেকে গোটা ম্যাচে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি। যদিও সকলেই পেশাদার ফুটবলার। এই দলের সকলে অনেক বড় ম্য়াচ খেলেছে। নতুন করে তো আর কিছু হারানোর নেই। এইরকম ভেবে মাঠে নামলে ভাল ফল পাবে। এই গ্রুপ থেকে পরের রাউন্ডে যাওয়ার ব্যাপারে বেলজিয়ামই এগিয়ে। ট্রফি জয়েরও অন্যতম দাবিদার অ্যাজ়ার-ব্রুইনরা।


ডেনমার্ক: সেই লাউড্রপ ভাইদের আমল থেকে ডেনমার্ক ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় একটি ফুটবল দল। ১৯৯২ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তাই সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে গেলে কী প্রয়োজন, সেটা জানে। ২০১৬ সালের ইউরো কাপে যোগ্য়তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছিল ডেনমার্ক। 'ড্যানিশ ডিনামাইট'রা তাই এবারের ইউরোতে অনেক কিছু প্রমাণ করতে চাইবে। কোচ ক্যাসপার হিউলমান্ডের সবচেয়ে বড় ভরসা গোলকিপার ক্যাসপার স্মাইকেল। কিংবদন্তি পিটার স্মাইকেলের ছেলে। মাঝমাঠের স্তম্ভ ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন। নিখুঁত পাস বাড়াতে পারেন। সঙ্গে থাকবে ড্যানিয়েল ওয়াজ়, আন্দ্রেয়া স্কোভ ওলসেন। রক্ষণের ভরসা সাইমন কাহের। সব মিলিয়ে লড়াই করবে ডেনমার্ক। পরের রাউন্ডে যাওয়ার ভালরকম সম্ভাবনা রয়েছে।


রাশিয়া: দলটির ফুটবল ঐতিহ্য আলাদা করে বোঝানোর দরকার নেই। প্রথম ইউরোতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রাশিয়া। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের দলটিই ধরে রেখেছে কোচ স্ত্যানিসলাল চের্চেসভ। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে শেষ আটে উঠেছিল রাশিয়া। আর্তেম জ়ুবার মতো ভরসাযোগ্য ফুটবলার রয়েছে দলে। গোল করতে ও করাতে সিদ্ধহস্ত আলেকজ়াণ্ডার গলোভিন। রয়েছে দূরপাল্লার শটের ওস্তাদ ডেনিস চেরিশভ। এই রাশিয়া দল বিনা যুদ্ধে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে বলে মনে হয় না। প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলবে। অঘটন ঘটাতে পারে।


ফিনল্যান্ড: এই প্রথম কোনও বড় মাপের প্রতিযোগিতায় নামার যোগ্যতা অর্জন করেছে ফিনল্যান্ড। কোচ মার্কু কার্নেভার প্রধান ভরসা স্ট্রাইকার টিম পুকি। যোগ্যতা অর্জন পর্বে দশ গোল করেছে। মূল পর্বেও সেই ছন্দ ধরে রাখতে চাইবে। ওদের ওপর কোনও চাপ থাকবে না। কিছুই হারানোর নেই বলে চমক জাগাতে পারে। চাপমুক্ত হয়ে মাঠে নামলে অনেক হিসেবনিকেশ উল্টে দেওয়া যায়। ফলে নজর থাকবে ফিনল্যান্ডের দিকেও।


*সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন: সন্দীপ সরকার