চেন্নাই: সদ্য চলতি লিগের প্রথম জয় পাওয়ার পর এবার জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্য নিয়েই শনিবার চেন্নাইয়িনের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে নামবে ইস্টবেঙ্গল এফসি (East Bengal vs Chennaiyin FC)। প্রতিপক্ষ চেন্নাইন এফসি গত তিন ম্যাাচে জয়হীন। গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জয় পেয়েছে তারা। স্বাভাবিক ভাবেই বিপর্যস্ত দু’বারের আইএসএল চ্যাম্পিয়নরা। তাদের এই দুঃসময়ে ওয়েন কোইলের দলের দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে তিন পয়েন্ট ঘরে তোলার লক্ষ্য নিয়েই নামবে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু তাদের নিজেদের সমস্যাও কিছু কম নেই।
গত ম্যাচে ঘরের মাঠে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে চলতি লিগের প্রথম জয় পায় ইস্টবেঙ্গল। গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের দেওয়া গোলেই প্রথমবারের জন্য তারা তিন পয়েন্ট যোগ করে লিগ টেবলে। এই জয় থেকে যে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে লাল-হলুদ শিবির, সেই আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে লিগ টেবলের ন’নম্বরে থাকা চেন্নাইন এফসি-কে হারাতে যে ঝাঁপাবে তারা, এটাই স্বাভাবিক। সেই আশাতেই বুক বেঁধে রয়েছে লাল-হলুদ জনতা। কিন্তু চার বিদেশীর মাথায় যেখানে শাস্তির খাঁড়া ঝুলছে, সেখানে তাঁরা কতটা জান-প্রাণ লাগিয়ে খেলতে পারবেন এই ম্যাচে, সেটাই দেখার।
হেক্টর ইউস্তে, সল ক্রেসপো, হিজাজি মাহের ও ক্লেটন সিলভা—এই চার বিদেশির তিনটি করে হলুদ কার্ড দেখা হয়ে গিয়েছে। শনিবার এঁদের মধ্যে যে বা যাঁরা একটি হলুদ কার্ড দেখবেন, তিনি বা তাঁরা আর পরের কঠিন ম্যাচে ওড়িশার বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন না। সেই কারণেই অপেক্ষাকৃত সহজ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এই চারজনকেই মাঠে নামাবেন কি না ইস্টবেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন, এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
শোনা যাচ্ছে ইউস্তের ফের চোট লেগেছে, এই ম্যাচে তিনি অনিশ্চিত। মাহের নিয়মিত খেলছেন না। ক্লেটনও নামছেন ম্যাচের শেষ দিকে। একমাত্র সল ক্রেসপো মাঝমাঠের বড় ভরসা। তাই তাঁকে শনিবার শুরু থেকে নিশ্চয়ই নামাবেন অস্কার। ঝুঁকি নিয়ে তাঁকে বেশিক্ষণ মাঠে নাও রাখতে পারেন। সবই নির্ভর করছে দল এই ম্যাচ কেমন খেলে, তার ওপর।
এমনিতেই গত ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় এই ম্যাচে নেই লালচুঙনুঙ্গা। তাই তাঁর জায়গায় দলে ফিরতে পারেন প্রভাত লাকরা। নিশু কুমারও কোচের মাথায় থাকবেন নিশ্চয়ই। ইউস্তেও না থাকায় লাল-হলুদ বাহিনীর রক্ষণ দুর্বল হয়ে পড়বে। যদিও এই রক্ষণ নিয়েই মহমেডানের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত লড়াই করেছিল ইস্টবেঙ্গল। গত ম্যাচে নর্থইস্টকেও কোনও গোল করতে দেয়নি তারা। কিন্তু সেই রক্ষণে লালচুঙনুঙ্গা ও ইউস্তে দু’জনেই ছিলেন। এই ম্যাচে তাঁরা কেউই থাকবেন না। ফলে উইলমার জর্ডন, কোনর শিল্ডস, ইরফান ইয়াডওয়াড, ফারুখ চৌধুরিদের আটকাতে সমস্যা হতে পারে।
মহমেডান স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে তাদের ম্যাচের বয়স আধ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই দুই নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নন্দকুমার শেকর ও নাওরেম মহেশ সিংহ লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যান। কিন্তু একই সঙ্গে দুই উইঙ্গারকে হারানোয় ৭৫ মিনিট (বাড়তি সময়-সহ) ন’জনে মিলে তুমুল লড়াই করে তারা। দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে নিজেদের গোল অক্ষত রাখে এবং মরশুমের প্রথম পয়েন্ট অর্জন করে ইস্টবেঙ্গল।
গত ম্যাচে নর্থইস্টের বিরুদ্ধে নন্দকুমার ও মহেশ খেলতে পারেননি। নন্দর জায়গায় পিভি বিষ্ণু ও মহেশের জায়গায় জিকসন সিংহকে প্রথম দলে রাখেন অস্কার। দুই নির্ভরযোগ্য সদস্যকে ছাড়াই যে উজ্জীবিত ফুটবল খেলে তাঁর দল, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এই দুই পারফরম্যান্সের পর চেন্নাইনের বিরুদ্ধেও ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই লক্ষ্য ইস্টবেঙ্গলের।
কোচ অস্কার ব্রুজোন যে ভাবে গোটা দলটার মধ্যে আত্মবিশ্বাসের বীজ বপন করেছেন, যে ভাবে ভুলগুলো শোধরানোর উপায় বাতলে প্রতিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা অনুযায়ী নিজেদের রণনীতি তৈরি করেন তিনি, তা প্রশংসার যোগ্য। চলতি আইএসএলের আসরেও দলকে লড়াইয়ে ফোরানোর ব্রত নিয়ে কাজ শুরু করেছেন স্প্যানিশ কোচ। গত দুই ম্যাচে সেই লক্ষ্য অর্ধেকটা পূরণ হয়েছে তাঁর। দল লড়াইয়ে ফিরেছে, জয়েও ফিরেছে। এ বার বিজয়রথ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ঘরের মাঠে ছন্দে থাকা মোহনবাগানকে হারাতে পারেনি চেন্নাইন এফসি। ওডিশা এফসি-র বিরুদ্ধে জয় দিয়ে এ বার লিগ অভিযান শুরু করে তারা। এর পরে জামশেদপুর এফসি, নর্থইস্ট এফসি-র মতো দলকে হারালেও কেরালা ব্লাস্টার্স, মহমেডান এসসি-র কাছে হার, হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে ড্র, এ রকম কিছু অপ্রত্যাশিত ফল তাদের কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে। যে দল এফসি গোয়া, মুম্বই সিটি এফসি-র মতো দলকে রুখে দিতে পারে, যারা জামশেদপুর এফসি-র মতো দলের বিরুদ্ধে পাঁচ গোল দিতে পারে, তাদের আর যাই হোক অবহেলা করা যায় না।
চেন্নাইনের সবচেয়ে বড় সমস্যা ধারাবাহিকতার অভাব। চলতি লিগে টানা দু’টি জয় তারা এখন পর্যন্ত অর্জন করতে পারেনি। সর্বোচ্চ টানা তিনটি ম্যাচে অপরাজিত থেকেছে ঠিকই, কিন্তু তার মধ্যে মাত্র একটি জয় ছিল। তবে গোলের সংখ্যায় তারা প্রথম ছয়ে রয়েছে। ১০ ম্যাচে ১৬ গোল করেছে তারা। গোলের সংখ্যার দিক থেকে চেন্নাইন রয়েছে সেরা ছয়ে থাকা পাঞ্জাব এফসি-রও (১৪) ওপরে।
তাদের সর্বোচ্চ গোলদাতা উইলমার জর্ডন গিল একাই ছ’টি গোল করেন। তাই গোলের জন্য মূলত তাঁর ওপরই নির্ভর করে থাকে দলটি। প্রতিপক্ষ যদি তাঁকে আটকে রাখতে পারে বা কড়া পাহাড়ায় রাখতে পারে, তা হলে চেন্নাইনকে অনেকটাই অকেজো করে দেওয়া যায়। ফারুখ চৌধুরি, ড্যানিয়েল চিমা, লুকাস ব্রামবিলারা দুটি করে গোল করলেও ধারাবাহিক সাফল্য পাননি। কিন্তু গত তিন ম্যাচে তারা মাত্র একটি গোল করেছে। অথচ তার আগে ৫-১-এ জামশেদপুরকে হারায় তারা। এই ধারাবাহিকতার অভাবই ভোগাচ্ছে ওয়েন কোইলের দলকে।
একাধিক বাঙালি খেলোয়াড় রয়েছেন এই দলে। গোলকিপার শমীক মিত্র, ডিফেন্ডার অঙ্কিত মুখার্জি, ফরোয়ার্ড কিয়ান নাসিরিরা থাকলেও তাঁরা এখনও দলে অপরিহার্য্য হয়ে উঠতে পারেননি। আসলে দল হিসেবে এখনও ভাল খেলে উঠতে পারেনি তারা। সে জন্যই ধারাবাহিকতার অভাব। শনিবার ঘরের মাঠে দল হিসেবে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে কি না, সেটাই দেখার।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে চিঠি ইস্টবেঙ্গলের