কলকাতা: যে সময় তাদের ভাল খেলার প্রয়োজন ছিল, ঠিক সেই সময়েই দলের এই বেহাল অবস্থায় যেমন হতাশ ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার ব্রুজোন (Oscar Bruzon), তেমনই ক্ষুব্ধও। দল বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও কিছু ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করে নিলেন তিনি। শনিবার ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িন এফসি-র (East Bengal vs Chennaiyin FC) কাছে হারের পর সাংবাদিকদের সামনে এই বিরক্তি লুকিয়ে রাখলেন না তিনি।
শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ম্যাচের শুরুটা ভাল করলেও ২১ মিনিটের মধ্যে দু’টি গোল খাওয়ার পর থেকেই ছন্দহীন হয়ে পড়ে তারা। প্রতিপক্ষের দুর্ভেদ্য রক্ষণে চিড় ধরিয়ে সারা ম্যাচে চারটির বেশি শট গোলে রাখতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। চেন্নাইয়িন এফসি-ও সারা ম্যাচে চারটি শট গোলে রাখে। কিন্তু তার মধ্যে তিনটি থেকেই গোল পায় তারা, যা পারেনি ইস্টবেঙ্গল। পয়েন্ট টেবলে তাদের এক ধাপ নীচে থাকা চেন্নাইয়িন এফসি-র কাছে তিন গোলে হেরে সেরা ছয়ের দৌড়ে অনেকে পিছিয়ে গেল তারা, যেখান থেকে সেরা ছয়ে থেকে লিগ শেষ করা বেশ কঠিন।
এই হারের পর দলের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা অনেক দেরীতে জেগেছি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে আমরা ভাল খেলেছি, সুযোগ তৈরি করেছি। দু’গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর চেন্নাইয়িনের নিজেদের অর্ধে বল ধরে রাখার প্রবণতা বেড়ে যায়। আমাদের কোনও জায়গাই দিচ্ছিল না ওরা। প্রথমার্ধের পারফরম্যান্স মোটেই ভাল হয়নি। বিশেষ করে বাঁদিকে। কোনর ও ইরফান ওই দিকটা দিয়ে যা খুশি তাই করছিল। আজ মাঝমাঠ নয়, আমাদের সমস্যা ছিল বাঁ দিকে। দ্বিতীয়ার্ধে আমরা এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান করি। এ ছাড়া দলের অনেকেই আজ তাদের সেরাটা দিতে পারেনি। হতাশাজনক পারফরম্যান্স হয়েছে আজ”।
এ দিন প্রথম এগারোয় তিনটি পরিবর্তন করে দল নামায় ইস্টবেঙ্গল। জিকসন সিংহ, মহম্মদ রকিপ ও সউল ক্রেসপো দলে ফিরে আসেন নন্দকুমার শেকর, শৌভিক চক্রবর্তী ও ডেভিড লালনসাঙ্গার জায়গায়। কোচের আফসোস, গত ম্যাচে মুম্বইয়ের মাঠে নেমে এক পয়েন্ট নিয়ে শহরে ফিরেছিল যে দল, সেই দলকে এ দিন মাঠে নামালেই ভাল হত। বলেন, “আজ দলে অনেকগুলো পরিবর্তন করা হয়েছিল। অনেকেই চোট সারিয়ে ম্যাচে ফিরেছে আজ। সউলের মতো যারা চোট সারিয়ে আজই মাঠে ফিরেছে, তাদের পক্ষে চেন্নাইয়িনের শারীরিক ফুটবলের বিরুদ্ধে তীব্রতার সঙ্গে খেলা সম্ভব ছিল না”।
কোচের স্বীকারোক্তি, “সউলদের বোধহয় এতটা সময় খেলানো উচিত হয়নি। গত ম্যাচের দলটাকেই এই ম্যাচে নামালে বোধহয় ভাল হত। চোট সারিয়ে ফেরা খেলোয়াড়দের শেষ দিকে নামালে বোধহয় ভাল হত। ওরা প্রায় সব ডুয়াল, সেকেন্ড বল, দৌড়ে আমাদের হারিয়ে দিয়েছে। ওরা আজ আমাদের চেয়ে গতি, শক্তি ও আগ্রাসনে এগিয়ে ছিল। প্রথমার্ধে আমরা ওদের খেলার তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারিনি। ধারাবাহিকতার অভাব এ মরশুমে আমাদের এক বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। আজ অনেক ব্যক্তিগত ভুলের খেসারত দিতে হয়েছে আমাদের। সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে বসা হবে। কিন্তু অবশেষে এই হার দলের। জিতলে যেমন দলই জেতে, হারলেও তো দলই হারে”।
আর যে আইএসএলের সেরা ছয়ে পৌঁছনোর কথা ভাবছেন না অস্কার, তা তাঁর কথাতেই বোঝা গেল। যখন বলেন, “এখন থেকে আমাদের এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ নিয়ে ভাবতেই হবে। এ বছর এটাই আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এ ছাড়াও সুপার কাপ আছে। জানি না, সেটা কবে হবে। আমাদের এখন লক্ষ্য আইএসএল টেবলের মাঝামাঝি জায়গায় থেকে শেষ করা এবং এএফসি কাপ ও সুপার কাপে সাফল্য। এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে আমাদের। আজকের হার আমাদের মানসিক শক্তিতে বড় আঘাত হেনেছে। ঘরের মাঠে, আমাদের সমান পয়েন্ট পাওয়া একটা দলের কাছে হার। আগামী সপ্তাহে কলকাতা ডার্বি রয়েছে। এখন ওই ম্যাচটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ”।