কলকাতা: হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট জিতে বছরটা শেষ করার পরিকল্পনা ছিল ইস্টবেঙ্গলের। কিন্তু পয়েন্ট টেবলের নীচের দিকে থাকা দলটি যে তাদের আটকে দেবে, তা হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেনি। নতুন বছরের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গলের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ গতবারের কাপ চ্যাম্পিয়ন মুম্বই সিটি এফসি (East Bengal vs Mumbai City FC), যারা অবশ্য ধারাবাহিকতার অভাবে প্রবল ভাবে ভুগছে।
গত ম্যাচেই নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র কাছে তিন গোলে হেরেছে মুম্বই। অথচ তার আগের চারটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতেই জেতে তারা, টানা চারটি ম্যাচে গোল অক্ষত রাখে। সেই দলকে হারিয়ে বছরটা শুরু করতে পারলে গত ম্যাচে তাদের আকাশে জমা হতাশার কালো মেঘ অনেকটাই কাটাতে পারবে লাল-হলুদ ব্রিগেড। এই ম্যাচে জিততে পারলে সেরা ছয়ে প্রবেশ করতে পারবে মুম্বই। সেই সুযোগ নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়েই মাঠে নামবে তারা। মরিয়া মুম্বইকে রোখা সহজ হবে না।
কয়েক দিন আগেই লাল-হলুদ কোচ অস্কার ব্রুজোন মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, জানুয়ারিতে তাদের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ। পরপর কয়েকটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে তাদের। তার প্রথমটিই হল ঘরের মাঠে এই মুম্বই-ম্যাচ এবং তার পরেই আগামী শনিবারের কলকাতা ডার্বি। তবে ডার্বি-ভাবনা এখন শিকেয় উঠেছে তাদের। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে সোমবারের ম্যাচ নিয়েই লাল-হলুদ শিবিরকে যে পরিমান প্রস্তুতি-পরিকল্পনা করতে হচ্ছে, তাতে বড় ম্যাচ নিয়ে ভাবার সময়ই বোধহয় পাচ্ছে না কেউ।
ক্রমবর্ধমান সমস্যা
এর মধ্যে চোট-আঘাতের সমস্যা রয়েই গিয়েছে। ফরাসি মিডফিল্ডার মাদি তালাল পুরো মরশুম থেকেই ছিটকে গিয়েছেন। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সল ক্রেসপোর আগামী সপ্তাহের আগে ভারতে আসছেন না। চোট-আঘাতের তালিকায় আগেই ছিলেন ডিফেন্ডার মহম্মদ রকিপ। এবার অনিশ্চিত হয়ে পড়লেন মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তীও, যিনি মাঝমাঠকে যথেষ্ট সচল ও বেঁধে রাখতে পারেন। গত ম্যাচে গোড়ালিতে চোট পাওয়ায় এই ম্যাচে তিনি অনিশ্চিত।
শৌভিকের না থাকাটা বড় ধাক্কা হয়ে উঠতে পারে ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে। তাঁর জায়গায় হয়তো আনোয়ার আলিকে দেখা যাবে। ইদানীং মাঝমাঠে খেলানো হচ্ছে তাঁকে। খেলছেনও স্বচ্ছন্দে। কিন্তু সম্প্রতি চোট পেয়েছিলেন তিনি। যা গুরুতর নয় বলেই জানিয়েছে ইস্টবেঙ্গল শিবির। রক্ষণে হয়তো নিশু কুমার যোগ দেবেন লালচুঙনুঙ্গার সঙ্গে।
দুই বিদেশি সেন্টার ব্যাক হিজাজি মাহের ও হেক্টর ইউস্তে থাকছেন। আক্রমণে গ্রিক ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস ও ব্রাজিলীয় ক্লেটন সিলভা—এই চার জন ছাড়া কোচ অস্কারের হাতে আর কোনও বিদেশি নেই। হায়দরাবাদকে হারাতে ব্যর্থ হওয়ার পর মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে কতটা কী করতে পারবে তারা, সেই প্রশ্ন তো থাকছেই।
আনোয়ার, পিভি বিষ্ণু, নন্দকুমার শেকর, ডেভিড লালনসাঙ্গা, জিকসন সিং, গোলকিপার প্রভসুখন সিং গিলরা ভাল ফর্মে থাকলেও ধারাবাহিক নন। এটাই সমস্যা। টানা সাতটি ম্যাচে জয়হীন থাকার পর গত ছ’টির ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই জিতেছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। সেই ধারাবাহিকতায় হোঁচট লেগেছে গত ম্যাচের ড্রয়ে। এই জায়গা থেকে দলকে টেনে তুলে আনা মোটেই সহজ হবে না ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে।
তবে তাদের কোচ অস্কার ব্রুজোন আশাবাদী। তিনি বলছেন, 'মুম্বই যে রকম নির্দিষ্ট স্টাইলের ফুটবল খেলে, তাতে কাল আমাদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা আত্মবিশ্বাসী ঠিকই। কিন্তু দলের মধ্যে অনেক সমস্যা রয়েছে। প্রথম সাতটা ম্যাচে পয়েন্টহীন থাকার মাশুল এখন দিতে হচ্ছে আমাদের। তাই সেরা ছয়ের থেকে ছয় পয়েন্ট দূরে আছি আমরা। অন্য দলগুলো পয়েন্ট খোয়ালে ওরা তা পরে সামলে নিতে পারবে। আমাদের সেই সুযোগ নেই। আমাদের প্রতি ম্যাচে পয়েন্ট পেতেই হবে'।
ধারাবাহিকতার অভাবই সমস্যা
গতবারের কাপজয়ী মুম্বই সিটি এফসি এ বার লিগের শুরু থেকেই ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছে। প্রথম তিন ম্যাচে জয়হীন থাকার পর চতুর্থ ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে প্রথম জয় পায় তারা। পরের চারটি ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে জেতে তারা এবং শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জয়, একটিতে ড্র ও একটিতে হারে তারা। শেষ ম্যাচে তারা হারে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের কাছে, যে নর্থইস্ট তার পরেই মহমেডানের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে। টানা চারটি ম্যাচে ক্লিন শিট রাখার পর শেষ ম্যাচে তিন গোল হজম করতে হয় তাদের। ধারাবাহিকতার এই অভাব নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন ছাঙতেদের কোচ।
নর্থইস্টের বিরুদ্ধে তারা প্রথম মিনিটে যেমন গোল খায়, তেমনই ম্যাচের শেষ দিকে চার মিনিটের মধ্যে পরপর দু’টি গোল খেয়ে হারে। সেই ম্যাচে ৬৫ শতাংশ বল পজেশন থাকা সত্ত্বেও ১৩টির মধ্যে তিনটির বেশি শট গোলে রাখতে পারেনি মুম্বই। অথচ নর্থইস্ট মাত্র ৩৫ শতাংশ বল দখলে রাখে। অথচ দশটির মধ্যে মাত্র তিনটি শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয় তাদের। মুম্বই ন’টি কর্নার পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেনি। আসলে আলাদিন আজারেইকে আটকে রাখতে না পারার মাশুল দিতে হয় পিটার ক্রাতকির দলকে।
সেই জন্যই দলের কৌশলে ও ফুটবলারদের মানসিকতায় পরিবর্তন চান মুম্বইয়ের কোচ। তিনি বলেন, 'নিজেদের উন্নত করে তোলার জন্য এই ম্যাচে আমাদের কিছু পরিবর্তন করতে হবে। কারণ, ইস্টবেঙ্গল ভাল দল। প্রতি ম্যাচে ওরা উন্নতি করছে। অবশ্য বিশাল কিছু পরিবর্তন নয়। ট্রানজিশনে আরও উন্নতি করতে হবে। ম্যাচের শুরুটা ভাল করা দরকার। ফুটবলারদের মানসিকতায় আরও উন্নতি ও দৃঢ়তা দরকার। শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে হবে'।
(তথ্য: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: গত ম্যাচে হেরে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে প্রতিপক্ষ, মুম্বই ম্যাচের আগে সতর্ক কোচ অস্কার