কলকাতা: গত কয়েক দিনে যে ভাবে একের পর এক ফুটবলার নিয়োগ করেছে ইস্টবেঙ্গল এফসি, তাতে সমর্থকেরা যে ক্রমশ আশাবাদী হয়ে উঠবেন, এটাই স্বাভাবিক। গত মরশুমে সাড়া জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত ইন্ডিয়ান সুপার লিগে যে ভাবে নয় নম্বরে থেকে শেষ করে তারা, তাতে সমর্থকেরা চরম হতাশ হন। মরশুমের অন্য দুই টুর্নামেন্টের একটিতে চ্যাম্পিয়ন ও অন্যটিতে রানার্স আপ হওয়ার পর তাদের আশা ছিল, আইএসএলে অন্তত প্রথম ছয়ে থাকতে পারবে তাদের প্রিয় দল। কিন্তু সেই আশাও পূরণ না হওয়ায় অনেকেই ভেঙে পড়েছেন। 


সেই সাক্ষাৎকারে তিনি সমর্থকদের আশ্বাস দেন, ''একটা আকর্ষণীয় মরশুম রয়েছে আমাদের সামনে, যেখানে দেশের নামও উজ্জ্বল করার চ্যালেঞ্জ থাকবে। আমরা আবার এশীয় মঞ্চে ফিরে আসছি এবং এমন একটা দল গড়তে চলেছি, যা নিয়ে সমর্থকেরা গর্বিত হতে পারেন। তাদের বলব আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। আমরা ঠিক দিকেই এগোচ্ছি।''  


কুয়াদ্রাতের এই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার পর ভাল ভাল খবর দেওয়া শুরু করে ইস্টবেঙ্গল এফসি। গত আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকস, আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেভিড লালনসাঙ্গার সঙ্গে  গত আইএসএলের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট করা মাদি তালালকে দলে নেয় তারা। গত কলিঙ্গ সুপার কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্লেটন সিলভার চুক্তিরও মেয়াদ বাড়ানো হয়। অর্থাৎ, এঁরা প্রত্যেকেই এ বার একই জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন। 


একদিকে যেমন ক্লেটন, দিয়ামান্তাকস, ডেভিডের মতো ক্ষিপ্র স্কোরার, অন্যদিকে তেমন তালালের মতো আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার। সঙ্গে আক্রমণ বিভাগের পুরনো সঙ্গীরা তো রয়েছেনই। আসন্ন আইএসএলে শুরু থেকেই যে আক্রমণে ঝড় তুলতে চাইবে ইস্টবেঙ্গল, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। 


গতবার তাদের আক্রমণ বিভাগ অবশ্য তুলনামূলকভাবে ভাল পারফরম্যান্স দেখায়। প্রথম তিন মরশুমের তুলনায় যেমন তারা বেশি গোল করে, তেমনই কম গোলও খায়।  ২০২০-২১ মরশুমে, তাদের প্রথম আইএসএলে ২০ ম্যাচে ২২ গোল দিয়ে ৩৩ গোল খায় ইস্টবেঙ্গল। সেবার তারা লিগতালিকায় ৯ নম্বরে ছিল। ২০২১-২২ মরশুমে তাদের গোলসংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়ায় ১৮। কিন্তু গোল খাওয়ার সংখ্যা বেড়ে যায় (৩৬)। ২০ ম্যাচে এই পারফরম্যান্সের পর লিগ তালিকায় সর্বশেষ, অর্থাৎ ১১ নম্বরে ছিল তারা। 


তাদের তৃতীয় মরশুমে (২০২২-২৩) ২২ গোল দিয়ে ৩৮ গোল খায় ইস্টবেঙ্গল। অর্থাৎ গোল করার ক্ষেত্রে প্রথম মরশুমের সংখ্যায় ফিরে গেলেও গোল খাওয়ার বহর আরও বেড়ে যায়। তবু সে বার ৯ নম্বরেই ছিল লাল-হলুদ বাহিনী। গতবার সব দিক দিয়েই উন্নতি হয় তাদের। ২৭ গোল করে তারা এবং তাদের বিপক্ষের গোলের সংখ্যাও এক লাফে ২৯-এ নেমে আসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লিগ তালিকায় নয়ের ওপরে উঠতে পারেনি। সেরা ছয়ের দোরগোড়া থেকেও ফিরে আসতে হয় তাদের। 


গতবার রক্ষণে যতটা অনেক উন্নতি করেছে ইস্টবেঙ্গল, আক্রমণে সেই তুলনায় উন্নতির হার কমই ছিল। কোচ কুয়াদ্রাত মনে করেন, গোলসংখ্যা আরও বাড়াতে হবে তাদের। এ বার দল বাছাইয়ের সময় তাই শুরু থেকেই আক্রমণ বিভাগ গোছানোর ওপর বেশি জোর দিয়েছেন তিনি।  


সর্বোচ্চ গোলদাতা দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসকে নেওয়ার পর এ বার গত মরশুমে লিগে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট দেওয়া ফরাসি মিডফিল্ডার মাদি তালালকে সই করায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। গত মরশুমে পাঞ্জাব এফসি-র হয়ে খেলে কী করেছিলেন তালাল, তা সবাই জানেন। ছ’টি গোল ও দশটি গোলে অ্যাসিস্ট করেন। অর্থাৎ, গত আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতা দিয়ামান্তাকস, গত আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেভিড লালনসাঙ্গা ও গত কলিঙ্গ সুপার কাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্লেটন সিলভার সঙ্গে আসন্ন মরশুমে লাল-হলুদ আক্রমণে দেখা যাবে গত আইএসএলের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট দেওয়া তারকা তালালকেও। 


এ ছাড়াও লাল-হলুদ আক্রমণে নাওরেম মহেশ সিং, নন্দকুমার শেকর, পিভি বিষ্ণু, সায়ন ব্যানার্জিরা তো রয়েছেনই। যার অর্থ, কুয়াদ্রাতের দলের আক্রমণ বিভাগে এক দুর্দান্ত কম্বিনেশন তৈরি হতে চলেছে, যে কম্বিনেশন সঠিক ফর্মে থাকলে যে কোনও প্রতিপক্ষের ডিফেন্সের কাছে ত্রাস হয়ে উঠতে পারে।                                                                                                                                                     তথ্য সংগ্রহ: আইএসএল