ভুবনেশ্বর: আইএসএল (ISL) অভিযান যে এরকম তিক্ত অভিজ্ঞতায় পরিণত হবে, হয়তো ভাবতেও পারেননি লাল-হলুদ ফুটবলাররা। টানা পাঁচ হারে কোণঠাসা দেশের অন্যতম সেরা ক্লাব। যদিও মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে কার্যত দাঁড়াতেই পারেনি। শনিবারের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল চারটির বেশি গোলের সুযোগই তৈরি করতে পারেনি। সারা ম্যাচে প্রতিপক্ষের বক্সে মাত্র কুড়িবার ঢুকতে পারে তারা। ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড়রা ৭১টি পাস বাড়ান প্রতিপক্ষের ফাইনাল থার্ডে। এই পরিসংখ্যানগুলিই বুঝিয়ে দেয় দল হিসেবে ইস্টবেঙ্গল কতটা পিছিয়ে রয়েছে চলতি লিগে।


আর সেই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল নামছে ওড়িশা এফসি-র (East Bengal FC vs Odisha FC) বিরুদ্ধে। ম্যাচ ভুবনেশ্বরে, ওড়িশার ডেরায়। ক্লেটন সিলভা ও সল ক্রেসপো ছন্দে না থাকা, নাওরেম মহেশের চোট এবং দিয়ামান্তাকসের অর্ধেক ফিট থাকা ইস্টবেঙ্গলকে ভাল মতোই ভোগাচ্ছে। প্রতিপক্ষের সঙ্ঘবদ্ধ, অলরাউন্ড পারফরম্যান্সকে টেক্কা দেওয়ার জন্য তাঁদের ছন্নছাড়া পারফরম্যান্স যথেষ্ট নয়। এই ছন্নছাড়া ভাবকে সঙ্ঘবদ্ধ ফুটবলে পরিণত করাই এখন নতুন কোচের বড় চ্যালেঞ্জ। মঙ্গলবার প্রথম এগারোয় ক্লেটনকে হয়তো দেখা যাবে না। দিয়ামান্তাকসকে দিয়েই হয়তো শুরু করাবেন কোচ। আক্রমণে নন্দকুমার শেকর, পিভি বিষ্ণু-কে প্রথম এগারোয় দেখা যেতে পারে।


রক্ষণে হেক্টর ইউস্তেও ভাল ফর্মে নেই। হিজাজি মাহেরের চোট। তাই লালচুঙনুঙ্গা প্রথম এগারোয় ফিরতে পারেন। মাদি তালাল, সল ক্রেসপো মাঝমাঠ থেকে ফরোয়ার্ডদের সাহায্য করার চেষ্টা করলেও সেই চেষ্টা বারবার বিফলে যাচ্ছে গোল করতে পারার দক্ষতার অভাবে। এই সমস্যার সমাধান দ্রুত করা যে কঠিন, তা কোচ সোমবার স্বীকারও করেছেন। তবে ওড়িশার বিরুদ্ধে ক্লিন শিট বজায় রাখাটা অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হতে পারে লাল-হলুদ বাহিনীর। কোচের কথায় তেমনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।


এ বার বেশিরভাগ বিদেশী ফুটবলারকেই দলে রেখে দিয়েছে ওড়িশা। রয় কৃষ্ণা, কার্লোস দেলগাদো, আমেদ জাহু, মুর্তাদা ফল, দিয়েগো মরিসিও—সবাই রয়েছেন সের্খিও লোবেরার দলে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন হুগো বুমৌস। এ মরশুমে লোবেরার দলে যোগ দিয়েছেন বাংলার ফরোয়ার্ড রহিম আলি, রোহিত কুমার ও রেইনিয়ে ফার্নান্ডেজ। অমেয় রানাওয়াডের চুক্তিও বাড়িয়েছে তারা। গত ম্যাচে মরিসিও বুমৌসদের দিয়ে শুরু করলেও বিরতির পর রয়, রহিমকে নামিয়ে আক্রমণে শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেন লোবেরা। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কাজে লাগেনি তাঁর।


তিনি যে রকম চান, সে রকম যে খেলতে পারছে না তাঁর দল, তা আগেও বলেছেন ওড়িশার স্প্যানিশ কোচ। তাই নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে তারা। ঘরের মাঠে ওড়িশা বরাবরই ভাল পারফরম্যান্স দেখায়। তবে এ মরশুমেই ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচে হেরেছে তারা। কিন্তু তার পর থেকে নিজেদের ক্রমশ উন্নত করে তুলছে ওড়িশা। মঙ্গলবার বিপর্যস্ত ইস্টবেঙ্গলকে সামনে পেয়ে কতটা আগ্রাসী হয়ে উঠবে লোবেরা-বাহিনী, সেটাই দেখার।


ইস্টবেঙ্গল আইএসএলে গত ছ’টি ম্যাচেই হেরেছে। এই লিগে টানা এতগুলি ম্যাচে তারা আর কখনও হারেনি। তবে টানা আরও বেশি ম্যাচে হারের রেকর্ড আছে নর্থইস্ট (১০), হায়দরাবাদ (৮) ও জামশেদপুরের (৭)। লাল-হলুদ শিবিরের তারকা গ্রিক ফরোয়ার্ড টানা চার ম্যাচে গোল পাননি। গত বছর টানা পাঁচ ম্যাচে গোলহীন ছিলেন তিনি। তার পরে এটিই তাঁর সবচেয়ে খারাপ সময়।


আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে শেষ সাতটি ম্যাচেই অপরাজিত ছিল ওড়িশা। একটি ড্র করে, বাকি ছ’টি ম্যাচেই জেতে তারা। আরও কোনও প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এত ভাল রেকর্ড নেই ওড়িশার। এর মধ্যে মাত্র একটি ম্যাচে তারা কোনও গোল করতে পারেনি। গত সাতটি হোম ম্যাচে অন্তত দু’টি করে গোল করেছে কলিঙ্গ-বাহিনী। চলতি লিগে ট্যাকলে দলগত সাফল্যের হার ওড়িশা এফসি-রই সবচেয়ে বেশি, ৮৮.৪%।


আইএসএলে সের্খিও লোবেরার প্রশিক্ষণাধীন দল ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে চারটি ম্যাচে মাত্র একটি গোল হজম করেছে। তবে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি ম্যাচে একটিও গোল খাননি তিনি। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ওড়িশার হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল অবদান রেখেছেন দিয়েগো মরিসিও। লাল-হলুদ বাহিনীর বিরুদ্ধে চারটি গোল করেছেন ও চারটি করিয়েছেন তিনি।


আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল এফসি ও ওড়িশা এফসি-র মধ্যে যে আটবার দেখা হয়েছে, তার মধ্যে তিনবার ফুটবলপ্রেমীরা দেখেছেন গোলের ফোয়ারা। এই আটবারের মুখোমুখিতে মোট ৪১টি গোল হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল ১৭ ও ওড়িশা ২৪ গোল করেছে। ওড়িশা জিতেছে ছ’বার, ইস্টবেঙ্গল একবার, আর গত মরশুমের প্রথম মুখোমুখিতে একমাত্র গোলশূন্য ড্র হয়। ২০২০-২১ মরশুমে প্রথম মুখোমুখিতে জয় ছাড়া আর কোনও বার সাফল্য পায়নি লাল-হলুদ বাহিনী। সে বার ৩-১-এ জেতে তারা। সে বার দ্বিতীয় লেগে ওড়িশা এফসি ৬-৫-এ জেতে। ২০২১-২২ মরশুমের প্রথম ম্যাচেই ওড়িশা জেতে ৬-৪-এ। ফিরতি লিগে ওড়িশা ফের জেতে ২-১-এ। ২২-২৩ মরশুমের প্রথম মুখোমুখিতে ইস্টবেঙ্গল ঘরের মাঠে দু’গোলে এগিয়ে থেকেও শেষে ২-৪-এ হারে এবং ফিরতি লেগে ৩-১-এ জেতে ওড়িশা। গত মরশুমে দ্বিতীয় লেগে এক মিনিটের মধ্যেই গোল করে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল এফসি। কিন্তু তার পর দুই অর্ধে দু’গোল করে ম্যাচের শেষে ২-১-এ জিতে মাঠ ছাড়ে ওড়িশা। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)


আরও পড়ুন: মাঠ-বিপর্যয়ে মুখ পুড়ল বাংলা ক্রিকেটের, শুরু দায় ঠেলাঠেলি, প্রযুক্তি থাকতেও হল না প্রয়োগ?


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।