যুক্তরাষ্ট্র: ফুলেকো, জাবিভিকা, লাইব। নামগুলো শোনা মনে হচ্ছে? কোথায় শুনেছেন বলুন তো? আপনি ফুটবল প্রেমী হলে অবশ্যই এই নামগুলোর সঙ্গ পরিচয় থাকবে আপনার। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ইউরো কাপ (Euro Cup 2024)। ইউরোপের শক্তিধর ফুটবল খেলিয়ে দেশগুলোর খেতাবি লড়াই। ইংল্যান্ড, জার্মানি, পর্তুগাল, স্পেনের লড়াই দেখার জন্য রাত জাগার পালা শুরু। ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের থেকে কোনও অংশেই কিন্তু জনপ্রিয়তায় কমতি নেই এই টুর্নামেন্টের। তবে জানেন কি, এবারের ইউরো কাপের ম্য়াসকটের (Euro Cup Mascot) নাম? বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রত্যেকবারের ম্য়াসকট সম্পর্কে তো খোঁজখবর নিশ্চই রাখেন। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফুলেকো, ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে জাবিভিকা ও ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের ম্য়াসকট ছিল লাইব। প্রতিটি ম্য়াচে, প্রতিটি স্টেডিয়ামে দেখা মিলেছে যাদের। খেলােয়াড়রাও মাঝে মাঝে মেতে উঠেছেন এই ম্য়াসকটের সঙ্গে। বিশ্বকাপ ফুটবলের ম্য়াসকটদের ইতিহাস তো জানেন। কিন্তু জানেন কি ইউরো কাপের ম্য়াসকটর ইতিহাস সম্পর্কে? জার্মানিতে আয়োজিত এবারের ম্য়াসকটের নাম অ্যালবার্ট। কিন্তু কেন এই নাম? কীভাবেই বা এর উৎপত্তি। ১৯৮০ সালে ইতালিতে আয়োজিত হয়েছিল ইউরো কাপের আসর। সেবারই প্রথম ম্য়াসকটের আবির্ভাব এই টুর্নামেন্টে। এরপর থেকে ১২ বার ইউরো কাপের আসরে ম্য়াসকটের নাম ও তাদের ইতিহাস জেনে নিন--
১৯৮০ ইতালি ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: পিনোকিও
বিবরণ: পিনোকিও একটি কাল্পনিক চরিত্র। ইতালির লেখক কার্লো কোলোডির শিশুদের উপন্যাস দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ পিনোকিওর নায়ক। এক ছোট্ট কাঠের বালক। যার লম্বা নাকটি ইতালির জাতীয় পকাতার রংয়ে সাজানো। মাথায় সাদা টুপি, যার ওপর লেখা ইউরোপা ৮০। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে প্রথম ম্য়াসকট ছিল এটি।
১৯৮৪ ফ্রান্স ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: পেনো
বিবরণ: নাম পেনো। এটি একটি সাদা মুরগি। ফ্রান্সের জাতীয় পাখি। যার শরীরে আবৃত রয়েছে ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা। রঙ্গিন একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে দু হাতে গ্লাভসে ফুটবল নিয়ে একটি পোজ দেওয়া।
১৯৮৮ পশ্চিম জার্মানি ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: বার্নি
বিবরণ: জার্মানির জাতীয় পতাকার রংয়ে একটি ফুটবলের কিট পরা কার্টুনই হল এই বার্নি। দেখা যাচ্ছে যে জার্মানির জার্সি পরে যে ফুটবলে শট মারছেন। এক ফ্লেমিস দৈত্যকার কার্টুন। ইউয়েফা লেখা একটি কালো টি শার্ট পরে সেই কার্টুনকে দেখা যাচ্ছে। ম্য়াসকটটি লাল হাফপ্যান্ট ও হলুদ মোজা পরে খেলছে। ড্রিবলিং করার মুহূর্তগুলোই ম্য়াসকটে তুলে ধরা হয়েছে।
১৯৯২ সুইডেন ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: র্যাবিট
বিবরণ: ইউরো কাপের আসর বসেছিল সুইডেনে। ম্য়াসকট ছিল র্যাবিট। অর্থাৎ বাংলায় যা খরগোস বলা হয়। এই খরগোসটি সুইডেনের জাতীয় পতাকার গায়ে রাঙিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে যে খয়েরি রংয়ের বুট ও তা নিয়ে ফুটবলে শট মারতে উদ্যত হচ্ছে সে। হলুদ জার্সিতে লেখা ইউয়েফা।
১৯৯৬ ইংল্যান্ড ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: গোয়ালিয়াথ
বিবরণ: ১৯৬৬ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের ম্য়াসকট ছিল উইলি। সেই ধাঁচেই ১৯৯৬ সালের ইউরোর ম্য়াসকট তৈরি করা হয়েছিল। গোলিয়াথ হল ইংল্যান্ডের কিট এবং ফুটবল বুট পরা এক সিংহ। তার ডানহাতের নীচে একটি ফুটবল রাখা রয়েছে। এই ম্য়াসকটটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল সে বছর। কারণ ইংল্যান্ড ফুটবল দলকে থ্রি লায়ন্স বলা হয়। আর সে দেশের জাতীয় পশু সিংহ।
২০০০ নেদারল্যান্ডস-বেলজিয়াম ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: বেনেলুকি
বিবরণ: একটি ডেভিল অর্থাৎ বাংলা তর্জমা করলে যাকে বলে শয়তান, তার লেজ ও মানুষের হাত সহ একটি সিংহ। সেবার রয়্যাল ডাচ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে সিংহটির মাথা প্রদর্শিত করা হয়েছিল। এছাড়া আরেক আয়োজক দেশ বেলজিয়ামকে রেড ডেভিলস নামে যেহেতু ডাকা হয়। তাই ডেভিলসের অংশও ছিল ম্য়াসকটে। এটি বুট পরে ডানহাতে ফুটবল ধরে রয়েছে। যেখানে লেখা ইউয়েফা ইউরো ২০০০। বেনেলুকির তার শরীরে ডাচ ও বেলজিয়ামের জাতীয় পকাতাকে মেলে ধরেছে সমানভাবে।
২০০৪ পর্তুগাল ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: কিনাস
বিবরণ: পর্তুগালের জাতীয় পতাকার নাম বান্দেরা দাস কুইনাস থেকে এই ম্য়াসকটের নাম রাখা হয়েছিল কিনাস। শুভেচ্ছাবার্তা বহন করে এই ম্য়াসকটটি। কিনাস একটি ছোট্ট ছেলে পর্তুগালের জার্সি গায়ে ফুটবলে শট মারছেন। যা অনেকটা ব্য়াকভলির মত।
২০০৮ অস্ট্রিয়া-স্যুইৎজারল্যান্ড ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: ট্রিক্স অ্যান্ড ফ্লিক্স
বিবরণ: এই টুর্নামেন্টের আয়োজক ২ দেশ। রেইনবো প্রোডাকশন ও ওয়ার্নার ব্রাদার্সের ডিজাইন ছিল লাল এবং সাদা ফুটবল স্ট্রিপ পরিহিত দুই শিশুর। তারা অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের জাতীয় পতাকার রংয়ে জার্সি পরে রয়েছে। মূলত যমজ দুই ভাই।
২০১২ পোল্যান্ড-ইউক্রেন ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: স্লোভেক অ্যান্ড স্লাভকো
বিবরণ: এই ইউরো কাপেও রেইনবো প্রোডাকশন ও ওয়ার্নার ব্রাদার্স ম্য়াসকট তৈরি করেছিল। পোল্যান্ড ও সুইডেনের ২ যমজ ভাইয়ের মত দেখতে এই ম্য়াসকটটি। দু দেশের জাতীয় পতাকার রংয়ে জার্সি পরিহিত তারা। একজন পোল্যান্ডের জাতীয় রং সাদা ও লাল পরে। অন্য একজন হলুদ ও নীল পরে। পোলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গ্রজেগর্জ লাটো মজা করে বলেছিলেন, ''আমার ওদের চুলগুলো ভীষণ পছন্দ হয়েছে। ৪০ বছর আগে আমারও এমন চুল ছিল।''
২০১৬ ফ্রান্স ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: সুপার ভিক্টর
বিবরণ: ফ্রান্সের ফুটবল দলের কিট পরিহিত একটি শিশুকে দেখা যায় ২০১৬ ইউরো কাপের ম্য়াসকট হিসেবে। ফরাসি পতাকাকে তুলে ধরা হয়েছে এই ম্য়াসকটের মাধ্যমে। বল, জুতো ও একটি কেপ পরে দেখা যায় সেই শিশুকে। অনেকটা সুপারম্য়ানের মত দেখতে এই ম্য়াসকটটি।
২০২০ ইতালি ও তুরস্ক ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: স্কিলজি
বিবরণ: ফ্রিস্টাইলার স্কিলজি এই ইউরো কাপের ম্য়াসকট। এই ম্য়াসকটটি দক্ষতার প্রতীক। ফ্রিস্টাইল ফুটবল ও স্ট্রিট ফুটবলের এক অনন্য় নিদর্শন তুলে ধরা হয়েছে এই ম্য়াসকটের মাধ্যমে।
২০২০ জার্মানি ইউরো কাপ
ম্য়াসকেটর নাম: অ্যালবার্ট
বিবরণ: টেডি বিয়ারের মত দেখতে এই ম্য়াসকটটি। ইউয়েফা.কমের ভোটের মাধ্যমে ও সারা ইউরোপজুড়ে যে স্কুল পড়ুয়ারা আছে, তাদের ভোটের মাধ্যমে ২০২৪ ইউরো কাপের ম্য়াসকটটি বেছে নেওয়া হয়েছিল। ইউরোপের বিভিন্ন স্কুলে ফুটবলের ক্যাম্প করে এই ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল। এই ম্য়াসকটটি প্রথমবার প্রকাশ্যে এসেছিল জার্মানি-কলম্বিয়া এক ফ্রেন্ডলি ম্য়াচের সময়। তবে সেই ম্য়াচের দিনই সকালে জেলসেনকির্চেনের কোনও স্কুলে প্রথমবার আত্মপ্রকাশ করে। এই ম্য়াসকটটি ইউরোপজুড়ে শিশুদের উৎসাহ জোগায় ও অনুপ্রাণিত করে।
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সাল থেকে ইউরো কাপের আসব বসছে। কিন্তু প্রথমবার এই টুর্নামেন্টে ম্য়াসকটের আবিভার্ব হয় ১৯৮০ সালে ইতালিতে আয়োজিত ইউরো কাপে। মহিলা ফুটবলে ২০১৭ ইউরাের ম্য়াসকটের নাম ছিল কিকি। এটি অনেকটা বেড়াল ও সিংহের সংমিশ্রণ বলা যেতে পারে। আবার ২০২২ সালে ইউরো কাপের ম্য়াসকটের নাম ছিল হ্যাটট্রিক। মেয়েদের মত দেখতে তিনটি রোবট। যাদের নাম ছিল কাই, অ্যাশলে ও রবিন।