কলকাতা: সাড়ে তিন সপ্তাহ আগে মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে যে লড়াই করেছিল লাল-হলুদ বাহিনী, যে ভাবে গ্যালারিতে জ্বলে উঠেছিল মশাল, তার পরে অস্কার ব্রুজোর দল নিয়ে আশা অনেক বেড়ে গিয়েছিল আপামর ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) জনতার। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে হার তাদের ফের ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। ফলে গত ম্যাচে তারা কেরল ব্লাস্টার্সকে হারালেও পয়েন্ট টেবিলে যে জায়গায় ছিল, সেই জায়গা থেকে উঠতে পারেনি।
শুক্রবার ফের সেই মুম্বই সিটি এফসি-র মুখোমুখি হতে চলেছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। কিন্তু এই ম্যাচের আগে কাদের নিয়ে লড়াই করবেন, তা-ই ঠিক করতে পারছেন না তাদের স্প্যানিশ কোচ। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে তাদের হোম ম্যাচে তাও ঠিকমতো দলটা গড়তে পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এ বার দল গড়তে হিমশিম খাবেন তিনি। কারণ, চোট-আঘাতের কারণে অর্ধেক খেলোয়াড়ই নেই। মেরেকেটে তিনজন বিদেশীকে পেতে পারেন তিনি। রক্ষণে হেক্টর ইউস্তে, উইংয়ে নবাগত রিচার্ড সেলিস ও আক্রমণে দিমিত্রি দিয়ামান্তাকস।
মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে খেলা ডিফেন্ডার হিজাজি মাহের ও ফরওয়ার্ড ক্লেটন সিলভার এই ম্যাচে খেলা যে প্রায় অসম্ভব, তা বলেই দিয়েছেন কোচ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "আমাদের এখন বুঝতে হবে এদের চোট ঠিক কী ধরনের। ঠিক কত সময় এই চোট ভোগাবে ওদের। কতদিনে সেরে উঠতে পারে তারা। চোট-আঘাতের প্রভাব যথাসম্ভব কমানোর চেষ্টা করছি আমরা। চোট-আঘাতের পরিস্থিতি ঠিক কী রকম, তা জানা দরকার। আগামী সপ্তাহে সম্ভবত এই ধারনার ওপর ভিত্তি করে ক্লাব সিদ্ধান্ত নেবে, যা নেওয়া দরকার।"
ফরাসি মিডফিল্ডার মাদি তালাল পুরো মরশুম থেকেই ছিটকে গিয়েছেন। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার সল ক্রেসপো খেলার মতো ফিট নন। একই অবস্থা হিজাজিরও। তিনি এই মরশুমে আর মাঠে নামতে পারবেন কি না, তা নিয়েই অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ক্লেটনের ব্যাপারেও এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। গত মুম্বই-ম্যাচে চোট পাওয়ার পর আর মাঠে ফিরতে পারেননি আনোয়ার আলি। চোট ডিফেন্ডার মহম্মদ রকিপেরও। তাই উইঙ্গার নন্দকুমার শেকরকে রাইট ব্যাক হিসেবে খেলাতে হচ্ছে। কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে তাঁর জায়গায় খেলান মিডফিল্ডার জিকসন সিংকে। পরিস্থিতি এমনই যে, প্রথম এগারো বাছতেই হিমশিম খাচ্ছেন অস্কার।
শুক্রবার জিততে পারলে সেরা ছয়ের দৌড়ে টিকে থাকতে পারবে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু টেবলের ছয় নম্বরে থাকা মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে কাজটা মোটেই সহজ নয়। এমন ভাঙা দল নিয়ে তা বেশ কঠিন। তবু আশাবাদী কোচ অস্কার। বলেন, "পরিস্থিতি মোটেই আমাদের পক্ষে ভাল না। যা অবস্থা, তাতে কৌশলের দিক থেকে আমাদের আরও নমনীয় হতে হবে। পজিশনাল ফ্লেক্সিবিলিটি আনতে হবে খেলোয়াড়দের মধ্যে। অনেকেই ভাল খেলছে। তাদের আরও আত্মবিশ্বাস জোগাতে হবে। দলের মধ্যে আরও ভারসাম্য আনা প্রয়োজন।"
সে জন্য সদ্য ভেনেজুয়েলা থেকে আনা হয়েছে ফরোয়ার্ড রিচার্ড সেলিসকে। সদ্য ভারতে এসে পরিবেশ ও সতীর্থদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। তবু সেলিসকে রেখেই গত দুই ম্যাচে প্রথম এগারো গড়েছে ইস্টবেঙ্গল। আক্রমণে দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকসের সঙ্গে দেখা যেতে পারে তাঁকে। কলকাতা ডার্বিতে খুব কষ্ট করে দল সাজাতে হয়েছিল অস্কার ব্রুজোনকে। আক্রমণের খেলোয়াড়কে রক্ষণে, রক্ষণের খেলোয়াড়দের মাঝমাঠে রেখে দল সাজাতে হয়েছিল তাঁকে। ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচেও এ ভাবেই দল গড়তে হয় তাঁকে। এই ম্যাচেও সেই পথেই যেতে হবে তাঁকে।
মুম্বই সিটি এফসি দুই ম্যাচে জয়হীন থাকার পর গত ম্যাচে মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে ৩-০ জয় দিয়ে সাফল্যে ফিরেছে। গত পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে এই নিয়ে দু’টিতে জিতেছে তারা। ১৭ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট পেয়ে তারা ছ’নম্বরে। সাত নম্বরে থাকা ওডিশা এফসি তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। এই অবস্থায় মুম্বইয়ের একটি ম্যাচে ড্র করা বা হারা মানেই সেরা ছয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া। তাই আসন্ন ম্যাচে জয়ের জন্য নিশ্চয়ই মরিয়া হয়ে উঠবেন লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতেরা।
গত রবিবার নিজেদের ঘরের মাঠে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে লিগের সাত নম্বর জয়টি পায় মুম্বই। সে দিন প্রায় ৭০ শতাংশ বলের দখল রাখে তারা এবং সারা ম্যাচে তিনটি শট লক্ষ্যে রাখে। তবে ৭১ মিনিট পর্যন্ত কোনও গোল করতে পারেনি মুম্বই। ৭২ মিনিটের মাথায় নিজ গোল করে মুম্বইকে এগিয়ে দেন মহমেডানের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার গৌরব বোরা। এর ছ’মিনিট পর ব্যবধান বাড়ান ছাঙতে এবং ৮২ মিনিটের মাথায় থায়ের ক্রোমার গোলে জয় সুনিশ্চিত করে তারা। শুক্রবারও এ রকম দাপুটে জয় পেতেই মাঠে নামবে তারা।
আরও পড়ুন: 'মানুষের চিৎকারে পার্টনারের কল শুনতে পাইনি', কোহলিকে ঘিরে উন্মাদনা দেখে মুগ্ধ বাংলার প্রতিপক্ষ
প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ইস্টবেঙ্গলের কোচ অস্কার বলেন, "এ বার আইএসএলে প্রায় সব দলেই যথেষ্ট ভারসাম্য আছে। ফলে প্রতিটি ম্যাচেই বেশ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। মুম্বই সিটি এফসি খুব ভাল খেলছে। কলকাতার ম্যাচে প্রথমার্ধে তো ওরা খুবই ভাল খেলেছিল। দ্বিতীয়ার্ধে দুর্ভাগ্যবশত আমরা ভাল খেলে ছবিটা বদলাতে পারলেও তার ফল পাইনি। ওদের মাঝমাঠ খুব ভাল। ব্র্যান্ড, বিপিন, ছাঙতেরা ভারতীয় ফুটবলে অন্যতম সেরা প্লে মেকার। আমরা কাল অ্যাওয়ে ম্যাচে নামব। ওরা হোম ম্যাচে অতটা স্বচ্ছন্দ নয়। এই ব্যাপারটা আমাদের কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে।" (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: মেসবাড়িতে ৮ বছর একসঙ্গে, বাজি জিতে ঋদ্ধিমানের কাছে এখনও ব্যাট পাওনা ডিন্ডার