Mohun Bagan SG: ঘরের মাঠে কেরল-কাঁটা উপড়ে ফেলার চ্যালেঞ্জ মোহনবাগানের সামনে, বাড়বে পয়েন্টের ব্যবধান?
Indian Super League: যে দাপট নিয়ে একের পর এক ম্যাচ জিতছে গতবারের লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান, তা প্রতিপক্ষ শিবিরকে চাপে রাখবে বৈকি!
কলকাতা: আইএসএলে (ISL) টানা সাতটি ম্যাচে অপরাজিত মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট (Mohun Bagan SG)। শনিবার সবুজ-মেরুন শিবিরের ফুটবলাররা নামছেন ঘরের মাঠে, সল্ট লেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে। প্রতিপক্ষ কেরল ব্লাস্টার্স এফসি।
যে দাপট নিয়ে একের পর এক ম্যাচ জিতছে গতবারের লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান, তা প্রতিপক্ষ শিবিরকে চাপে রাখবে বৈকি! গত ম্যাচে নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র বিরুদ্ধে দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ছ’মিনিটের মধ্যে পরপর দু’টি গোল করে যে ভাবে জয় ছিনিয়ে নেয় হোসে মোলিনার দল, তার পরে তাদের দাপট নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। নিজেদের মাঠে নর্থইস্টকে ৩-২-এ হারানোর পর প্রতিপক্ষের ডেরায় গিয়েও আলাদিন আজারেইদের হারায় বাগান-বাহিনি। শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে এটি তাদের চতুর্থ জয়। এই নিয়ে টানা সাতটি ম্যাচে অপরাজিত তারা, যার মধ্যে ছ’টিতেই জিতেছে।
এ পর্যন্ত ১০টি ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ২৩ পয়েন্ট, যা আগে কোনও আইএসএলে পারেনি সবুজ-মেরুন বাহিনি। আইএসএলে তাদের প্রথম মরশুমে প্রথম দশ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট পেয়েছিল তারা। সেটিই ছিল এতদিন সেরা। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল মোলিনার বাগান-বাহিনি। সে বার সাতটি ম্যাচে গোল অক্ষত রাখতে পেরেছিল তারা। এ বার ছ’টি ক্লিন শিট রয়েছে তাদের খতিয়ানে।
অন্য দিকে, কেরল ব্লাস্টার্স রয়েছে ঠিক অন্য মেরুতে। শেষ পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই হেরেছে তারা। একমাত্র জয় এসেছে চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে। কিন্তু ১১টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জিতে ও দু’টিতে ড্র করে ১১ পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন লিগ টেবলের নীচের দিকে রয়েছে। এই অবস্থায় মোহনবাগানের বিরুদ্ধে যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারে তারা, তা হলে তা হবে এ বারের আইএসএলে অন্যতম সেরা অঘটন।
যদিও অঘটন আইএসএলে নিয়মিত ঘটে। তাই শনিবারের ম্যাচে মোহনবাগানকে অনেকে এগিয়ে রাখলেও তারা যে এই ম্যাচে জিতবেই, এমন কোনও নিশ্চয়তা দেওয়ার ঝুঁকি কেউ নেবে বলে মনে হয় না। কিন্তু ফুটবলপ্রেমীতে ঠাসা দুই রাজ্যের দুই জনপ্রিয় দলের দ্বৈরথে যে শনিবার যুবভারতীর মাঠে ও গ্যালারিতে উত্তেজনার পারদ উঠবে চরমে, এই নিশ্চয়তা দেওয়াই যায়।
সবুজ-মেরুন বাহিনির আক্রমণ বিভাগ যে কোনও দলের ইর্ষার কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাদের গোল করার লোকের অভাব নেই। তিন অস্ট্রেলীয় অ্যাটাকার জেমি ম্যাকলারেন, দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও জেসন কামিংস একসঙ্গে নেমে আক্রমণে ঝড় তুলে দিতে পারেন। সঙ্গে লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিং তো রয়েছেনই। তাঁরাও যে কম যান না, তা গত ম্যাচেই তার প্রমাণ দিয়েছেন দুই গোলদাতা। তবে গ্রেগ স্টুয়ার্ট এই ম্যাচে ফের অনিশ্চিত। আগের চোট এখনও পুরোপুরি সারেনি। তবু অজি ত্রয়ীর আক্রমণ রোখা কঠিন হবে ব্লাস্টার্সের দুর্বল রক্ষণের পক্ষে। ১১ ম্যাচে ২১ গোল হজম করেছে তারা। আইএসএলের ইতিহাসে প্রথম ১১ ম্যাচে এত গোল এর আগে কখনও খায়নি তারা।
গত ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে দু’গোলে পিছিয়ে গিয়েও সমতা আনে তারা। কিন্তু শেষ কুড়ি মিনিটের মধ্যে দু’টি গোল খেয়ে ম্যাচ হাতছাড়া করে তারা। হ্যাটট্রিক করেন সুনীল ছেত্রী, যাঁর দল সারা ম্যাচে পাঁচটি শট গোলে রেখে চারটি থেকেই গোল পায়। শেষ দু’টি গোলই করেন ৪০ বছর বয়সী ছেত্রী, যাঁকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে যান ব্লাস্টার্সের ডিফেন্ডাররা। তা হলে সবুজ-মেরুন অ্যাটাকারদের সামলাবেন কী করে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
তবে এত গোল যেমন খেয়েছে ব্লাস্টার্স তেমনই ১৭ গোল দিয়েওছে। তাদের স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড ইয়েসুস জিমিনিজ ১১ ম্যাচে আটটি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় ওপরের দিকেই রয়েছেন। অপর দুই বিদেশী নোয়া সাদাউই ও কোয়ামে পেপরা যথাক্রমে চারটি ও তিনটি গোল করেছেন। এমন নয় যে তাদের গোল দেওয়ার লোক নেই। এ পর্যন্ত মাত্র দু’টি ম্যাচে গোলশূন্য থেকেছে তারা। বাককি ন’টি ম্যাচেই গোল পেয়েছেন জিমিনিজরা। কিন্তু নিয়মিত গোল করার পাশাপাশি গোল হজমও করছে তারা। এই কারণেই সাফল্য আসছে না।
বেঙ্গালুরুর কাছে হারের পরেই তাই ব্লাস্টার্সের কোচ মাইকেল স্তারে কার্যত ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলেন, “আমাদের দল যেভাবে খেলায় যে রকম কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তা গর্ব করার মতো। মানসিক ভাবে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু স্বীকার করতে খারাপ লাগছে যে, আমরা খুব সহজেই গোল খাচ্ছি”।
চলতি লিগে সব মিলিয়ে যে তিনটি জয় পেয়েছে কোরালার দল তার মধ্যে দু’টিই এসেছে কলকাতার অপর দুই দল ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডানের বিরুদ্ধে। ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গলকে যে ব্যবধানে হারিয়েছে তারা, কলকাতায় এসে সেই একই ব্যবধানে, ২-১-এ হারায় মহমেডানকেও।
তবে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে তাদের চ্যালেঞ্জ মোটেই সহজ হবে না। কারণ, সব বিভাগেই এখন ফর্মের শিখরে রয়েছে সবুজ-মেরুন শিবির। ধারালো আক্রমণ ছাড়াও দুর্ভেদ্য রক্ষণও গড়ে তুলেছে তারা। গত ম্যাচে দলের দুই নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার আলবার্তো রড্রিগেজ ও শুভাশিস বোস কার্ড সমস্যার জন্য খেলতে না পারলেও তাঁদের অভাব বুঝতে দেননি পরিবর্ত ডিফেন্ডাররা। আলাদিন আজারেইয়ের মতো তুখোড় ফরোয়ার্ডকে আটকে রাখার কঠিন কাজটি দারুণ ভাবে করেন আশিস রাই, আশিক কুরুনিয়ানরা। গত সাত ম্যাচে মাত্র একটি গোল খেয়েছে কলকাতার দল।
গত ম্যাচে আপুইয়ার সঙ্গে দারুন বোঝাপড়া তৈরি করে মাঝমাঠ সামলান দীপক টাঙরির জায়গায় নামা সহাল আব্দুল সামাদও। মোলিনার দলের রিজার্ভ বেঞ্চও এখন পুরোপুরি তৈরি। ফলে দল বাছাই নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না স্প্যানিশ কোচকে । এই অবস্থায় তাদের বিজয়রথ থামানো সত্যিই কঠিন। (সৌ: আইএসএল মিডিয়া)
আরও পড়ুন: ভক্তদের বাঁচানোর জন্য দৌড়ে এলেন, ম্যাচ হারলেও মন জিতে নিলেন হার্দিক
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।