Messi At Kolkata: খেটে খাওয়া প্রত্যেকটা মানুষের স্বপ্নকে নিয়ে যাব, মেসি-দর্শনের সুযোগ পেয়ে কী বলছেন পরোটা-রাজু?
Pocket Paratha Fame Rajuda: কলকাতাতেও আসবেন আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপজয়ী মহাতারকা। আর সেই সময়ই নাকি মেসির হাতে পরোটা-তরকারি তুলে দেওয়ার সুযোগ পাবেন রাজু!

সন্দীপ সরকার, কলকাতা: তিনি এমনিই ভাইরাল। শিয়ালদা স্টেশনের নিত্যযাত্রীদের কাছে তিনি পকেট-পরোটা খ্যাত 'রাজুদা'। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় তাঁকে ঘিরে যা হয়ে গিয়েছে, এখনও যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছেন রাজু।
আগামী ডিসেম্বরে ভারত সফরে আসছেন বিশ্ব ফুটবলের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। কলকাতাতেও আসবেন আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপজয়ী মহাতারকা। আর সেই সময়ই নাকি মেসির হাতে পরোটা-তরকারি তুলে দেওয়ার সুযোগ পাবেন রাজু!
শুক্রবার এবিপি লাইভ বাংলাকে গোটা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন শতদ্রু দত্ত। যিনি মেসিকে কলকাতা তথা ভারতে নিয়ে আসছেন। এআই দিয়ে বানানো রাজুর একটি ছবি তাঁর নজরে পড়েছিল। যেখানে রাজুকে দেখা যাচ্ছিল মেসির হাতে পরোটা তরকারি তুলে দিতে। সঙ্গে নেটিজেনদের বিদ্রুপ, টিটকিরি। যা দেখে শতদ্রু শপথ নেন, ট্রোলারদের জবাব দেবেন। মেসির সঙ্গে রাজুর দেখা করাবেন। এবিপি লাইভ বাংলার সেই খবর রীতিমতো ভাইরাল হয়।
শনিবার রাজু বলছিলেন, 'আপনাদের খবর দেখে সারাদিন যে কতজনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। হাঁফিয়ে গিয়েছি।' যোগ করলেন, 'ব্যস্ততার কারণে ফুটবল কম দেখা হয়। তবে মেসি মাই লাভ। ভারতের ৯৯ শতাংশ ফুটবলপ্রেমীই মেসির ভক্ত। ওঁকে ঈশ্বরের মতো মনে করেন। আমিও তাঁদেরই একজন।'
গুমা কালীনগর পল্লিতে বাড়ি রাজুর। বাবা-মা-স্ত্রীকে নিয়ে টানাটানির সংসার। রোজ ভোরে গুমা থেকে ট্রেনের ভেন্ডার কম্পার্টমেন্টে চেপে বাড়িতে তৈরি পরোটা-তরকারি নিয়ে হাজির হন শিয়ালদা স্টেশনে। স্টেশনের বাইরে বিক্রি করেন। সঙ্গে থাকে ডিমসিদ্ধ, কাঁচা লঙ্কা, পেঁয়াজ। তাঁর বলার ভঙ্গির জন্য ভাইরাল রাজু। সারাদিন ফুড ব্লগার, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ইউটিউবারদের ভিড় লেগে থাকে।
রাজু বললেন, 'বিশ্বকাপ হলেই আমাদের ক্লাব ঐক্যতান সংঘে প্রোজেক্টর ভাড়া করে নিয়ে এসে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়। আর্জেন্তিনার পতাকা দিয়ে পাড়া সাজানো হয়। সকলে আর্জেন্তিনার জাতীয় দলের জার্সি পরে খেলা দেখি।'
মেসির সঙ্গে দেখা হলে কী বলবেন? রাজু বললেন, 'মেসির সঙ্গে দেখা হলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করব। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাব। শতদ্রু দাদাকেও ধন্যবাদ জানাব। আমাকে চোখে দেখেননি উনি। রাস্তায় খাবার বিক্রি করি। কিছু লোক এআই দিয়ে আমার সঙ্গে মেসির ছবি বানিয়ে ট্রোল করছিল দেখে যেভাবে প্রতিবাদ করেছেন, তাতে আমি মুগ্ধ।'
রাজুর সঙ্গে মেসির সাক্ষাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে জেনে বন্ধু, আত্মীয় স্বজনরা উল্লসিত। পাড়ায় হইচই পড়ে গিয়েছে। রাজু বলছেন, 'আমার খুব ইচ্ছে মেসির জার্সির পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার।'
তবে তিনি একা নন, রাজু মেসি-দর্শনে যাবেন আরও কয়েকশো মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে। বললেন, 'মেসির এত ফলোয়ার। এত লোক পছন্দ করে। কিন্তু অর্থের জন্য সকলে দেখতে পারবেন না। পাঁচ-সাত হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটে যুবভারতী স্টেডিয়ামে গিয়ে মেসিকে দেখার ক্ষমতা নেই সবার নেই। আমি সকলের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। আমার আত্মার সঙ্গে নিয়ে যাব সেই সমস্ত মানুষের ইচ্ছেকে, যাঁরা মেসির ভক্ত, কিন্তু অর্থাভাবে মেসিকে দেখতে যেতে পারবেন না। খেটে খাওয়া প্রত্যেকটা মানুষের হয়ে যাব আমি।'
জানালেন, মেসি ও তাঁর খবর প্রকাশ হওয়ার পরেও বহু লোকে বাজে কথা বলছেন। রাজুর কথায়, 'চারপাশে নেতিবাচকতায় ভরে গিয়েছে। এত ব্যঙ্গ। আমার মতো খেটে খাওয়া এরকম অনেক মানুষ আছেন যাঁরা রাস্তায় খাবার বেচেন। যেদিন মেসি আসবেন, তাঁরা আকাশের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকবেন, কিংবা হাতের ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। বুক ফেটে যাবে, কিন্তু যেতে পারবেন না। আমি তাদের সকলের জন্য যাব। গ্রাম বাংলায় এমন অনেকে আছে যে, ১০ টাকা দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটতেও ভয় পায়। মনে করে, ওই টাকায় এক ঠোঙা মুড়ি কিনে খেতে পারব, পেট ভরাতে পারব। ধরা পড়ি পড়ব, কিন্তু টিকিট কাটব না। তাদের সকলের হয়ে যাব আমি।'
মেসির জন্য কি পরোটা-তরকারি নিয়ে যাবেন? রাজু বললেন, 'যদি উদ্যোক্তারা অনুমতি দেন, মেসির জন্য পরোটা-তরকারি নিয়ে যাব। তবে উনি বিশ্ববরেণ্য তারকা। ওঁর জন্য খাবার নিয়ে গেলে সেটা বিশেষ যত্ন নিয়ে বানাব। আর যদি সেটা পারি, জীবন সার্থক মনে করব।'






















