দোহা:  "কাঞ্চনজঙ্ঘা বলেও একটা জিনিস আছে, দেখতে পেলে এই যাত্রায়?" সত্যজিৎ রায়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবির সেই বিখ্যাত ডায়লগ। তাপমাত্রা আট কি নয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ৫ টা। আশা নিয়ে গিয়েছে যদি বরফ বৃষ্টি দেখতে পাওয়া যায়! ঘুম থেকে উঠে জানলা দিয়ে বা খাদের ধারের রেলিং ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে গেলেন। দেখলেন, একটা ৬ ফুট বাই ৪ ফুটের বিশাল আর্জেন্তিনার পতাকা ঝুলছে উল্টোদিকের পাহাড়ে। চারিদিকে পতাকা আর পতাকা। ব্রাজিল, পর্তুগাল, স্পেন, জার্মানি, ইংল্যন্ড। কি নেই! আবার রাস্তার ধারে বড়ো বড়ো কাট আউট। পাহাড়ের চিড়িয়াখানায় লেপার্ড দেখতে গিয়ে চড়াই রাস্তার পাশে দেখলেন লেখা "দ্য রিয়াল গোট" পাশে লিও মেসির ছবি। রোনাল্ডোর ড্রিবলিংয়ের একের পর এক ছবি মল থেকে। সন্ধেবেলা খেলা শুরু হতেই দার্জিলিং পুরসভার কাছে, চক বাজারে আর মলে বড়ো বড়ো জায়ান্ট স্ক্রিনে একের পর এক খেলা। বলুন তো এই অভিজ্ঞতা দার্জিলিংয়ে গিয়ে হয়েছিল আপনার? 


স্কুল জীবন কেটেছে পাহাড়ে, বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা টোটা রায় চৌধুরী বর্ণনা দিচ্ছেন বিশ্বকাপে পাহাড়ে যেন উৎসব। "গোর্খা ব্রিগেড গোল্ড কাপের জন্য ফুটবলের জনপ্রিয়তা পাহাড়ে তুঙ্গে ছিলো। ছিয়াশি ও নব্বই বিশ্বকাপের সময় দেখেছি পাহাড়ে অনেক শিশুর নাম দেওয়া হয়েছিল দিয়েগো। অনেকের নাম আগে দেওয়া হত জিকো। যারা ভালো খেলত তাদেরকে দিয়েগো বা মারাদোনা বলে ডাকা হত। দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন জায়গায় ছিলো ভিডিও পার্লার। বসে দেখার জন্য ২০ টাকা টিকিট আর দাঁড়িয়ে দেখলে ১০ টাকা। খেলা দেখার পর সেই ট্রিকের ঝলকানি পরের দিন সকালে মাঠে। স্কুল দলের হয়ে খেলতাম তাই জানি বিষয়গুলো। ছিয়াশি বিশ্বকাপে ফাইনালের দিন পুরো ছুটি ছিলো সবার। খাওয়া, দাওয়া মিলে মিশে একাকার। এমন কি আন্দোলন বিক্ষোভ ঐ দিনের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছিল। সে এক আলাদা সময়। উউফ! জীবনের আনন্দময় অধ্যায় আমার। সারাজীবন ইচ্ছা থাকল আবারও বিশ্বকাপের সময় কাটাব পাহাড়ে।" আবেগে ভাসলেন টোটা। 


বিশ্বকাপ উৎসবে সেজে উঠেছে পাহাড়ের রানী দার্জিলিং। সান রাইস থেকে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া আর সঙ্গে ফিফা বিশ্বকাপ। মেসি থেকে রোনাল্ডো কে এগিয়ে সেই হিসেব এবার যদি দার্জিলিঙের পাহাড়ে বসে হয় তাহলে তো কথাই নেই। প্রতিবার বিশ্বকাপের সময় সেজে ওঠে দার্জিলিং কালিম্পঙ, কার্শিয়ং। কেউ ঘর সাজান কেউ রেস্তোরাঁ। আবার আলো দিয়ে সাজানো হয় বিভিন্ন মাঠ। কনকনে ঠান্ডা শহরে যতই সেভাবে না আসুক, পাহাড়ে শীতের টের ভালোভাবেই এখন পাওয়া যাচ্ছে। তার মধ্যে বিশ্বকাপ। মানে বাড়তি পাওনা। গ্লিনারিজ থেকে কেভেন্টার্স, জিরো পয়েন্ট থেকে মল। আবার কালিম্পঙের ডম্বর চক থেকে সেবক। চারিদিক জুড়ে শুধুই ফুটবল।