কলকাতা: প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কলকাতার অপর একটি দল আইএসএল জিতেছে। অন্যদিকে, নিজেদের শতবর্ষে কোনও সাফল্য নেই। ফলে গত কয়েকমাস ধরে মন ভাল ছিল না ইস্টবেঙ্গল সদস্য-সমর্থকদের। বলা ভুল হল, শুধু সদস্য-সমর্থকরাই নন, ক্লাবের অবস্থা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন সুলে মুসা, ওলালেকান ওমোলাজার মতো প্রাক্তন বিদেশি ফুটবলাররাও। বিদেশি হয়েও যাঁরা লাল-হলুদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তো এরকমই একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে ধর্ম-বর্ণ-জাতি মিলেমিশে একাকার। সবার মুখেই এক কথা, ‘জয় ইস্টবেঙ্গল’। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে আইএসএল-এ ইস্টবেঙ্গলের খেলার কথা ঘোষণা হওয়ার পর তাই সবাই খুশি।


২০০০-২০০১ মরসুমে প্রথমবার জাতীয় লিগ জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেই সাফল্যের অন্যতম নায়ক ছিলেন নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার ওমোলাজা। তিনি দ্বিতীয় লেগে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোল করা ছাড়াও শেষ ম্যাচে এসবিটি-র বিরুদ্ধে জোড়া গোল করে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেন। এই প্রাক্তন ফুটবলার আজ প্রচণ্ড খুশি। এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, ‘গত কয়েকমাস ধরেই ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল-এ খেলার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছিল। আমার অনেক বন্ধুই বলছিল, ইস্টবেঙ্গল এবার আইএসএল-এ খেলতে পারবে না। কিন্তু আমি সবাইকে বলতাম, কীভাবে হবে জানি না, কিন্তু ইস্টবেঙ্গল আইএসএল-এ খেলবেই। ইস্টবেঙ্গলকে মুছে ফেলা যাবে না। আমি জানি ইস্টবেঙ্গল কী। আজ তাই আমার খুশির দিন।’

ইস্টবেঙ্গলকে প্রথমবার জাতীয় লিগ জেতানোর কথা এত বছর পরেও মনে আছে ওমোলাজার। এ বিষয়ে তিনি জানালেন, ‘পল্টুদা (দাস) আমাকে ইস্টবেঙ্গলে এনেছিলেন। আমরা জাতীয় লিগ জেতার কিছুদিন আগে তিনি প্রয়াত হন। সেদিন শপথ করেছিলাম, পল্টুদার জন্যই দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে হবে। সেবার আমরা ১৪ পয়েন্ট এগিয়েছিলাম। তখন সবাই ধরে নিয়েছিল, আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছি। তাই দলের অনেকে আত্মতুষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে আমরা পরপর পয়েন্ট হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কঠিন করে ফেলি। শেষ ম্যাচে আমরা পয়েন্ট হারালে আর মোহনবাগান জিতলে ওরাই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। আমি দলের সবাইকে বলেছিলাম, পল্টুদার জন্যই দলকে জেতাব। আমাদের খেলা ছিল এসবিটি-র বিরুদ্ধে। খুব খারাপ মাঠে অত্যন্ত কঠিন ম্যাচ ছিল। আমি প্রথমার্ধে এক গোল করার পর কোচ চিৎকার করে বলছিলেন, মিডফিল্ডে নেমে এসো। আমাদের গোল খেলে হবে না। কলকাতায় মোহনবাগান এক গোলে জিতছে। আমি বিরতির সময় কোচকে বলেছিলাম, চিন্তা নেই, আমরা জিতব। গ্যালারিতে আমাদের অল্প কয়েকজন সমর্থক ছিল। গোটা মাঠে বিপক্ষের সমর্থকরাই চিৎকার করছিল। আমি খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে দ্বিতীয় গোল করার পর ওরা চুপ করে যায়। আমরা অল্প কয়েকজন আনন্দ করছিলাম। খেলা শেষ হওয়ার পর স্বপনদা (বল) বলেছিলেন, তুমি বলেছিলে, পল্টুদার জন্য জেতাবে। সেটাই করলে। তাঁর কথা শুনে খুব আনন্দ হয়েছিল।’

ইস্টবেঙ্গল ছাড়ার পর মোহনবাগানে খেলার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওমোলাজা ঠিক করে নিয়েছিলেন, কলকাতায় খেললে লাল-হলুদ ছাড়া অন্য কোনও জার্সি পরবেন না। তাই মোহনবাগানে না খেলে বেলজিয়ামের দ্বিতীয় ডিভিশনের একটি ক্লাবের হয়ে খেলতে চলে যান। খেলা ছাড়ার পর ভালবাসার টানে কলকাতাতেই ফিরে এসেছেন। এখন এখানেই থাকেন। প্রায়ই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যান। কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও আছে।

ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের উদ্দেশে ওমোলাজার বার্তা, ‘সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। দলের পাশে থাকুন। আপনারা পাশে থাকলে ইস্টবেঙ্গল এমন জায়গায় পৌঁছে যাবে, যা ভাবতেও পারবেন না।’