লখনউ: উত্তরপ্রদেশ আর ক্রিকেট বলতে সকলের চোখে ভাসে কানপুরের গ্রিন পার্ক স্টেডিয়াম। যে মাঠে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে। তবে অধুনা যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যের নতুন ক্রিকেট রাজধানী হিসাবে আবির্ভাব ঘটিয়েছে লখনউয়ের একানা স্টেডিয়াম। যার নাম রাখা হয়েছে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপায়ীর নামে।


ওয়ান ডে বিশ্বকাপের (ODI World Cup) আর মাস দুয়েকও বাকি নেই। সাজ সাজ রব পড়ে গিয়েছে বিশ্বক্রিকেটে। সব দলই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সারতে ব্য়স্ত। তার ফাঁকে এবিপি লাইভ বিশ্বকাপের দশ স্টেডিয়ামের হাল হকিকত জানাতে শুরু করল বিশেষ এই সিরিজ়। যার প্রথম ছয় পর্বে আলোচনা হয়েছে ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম, হায়দরাবাদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ওয়াংখেড়ে, চিন্নাস্বামী ও দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম নিয়ে। সপ্তম কিস্তিতে আজ লখনউয়ের একানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম।


পুরো নাম ভারতরত্ন শ্রী অটলবিহারী বাজপায়ী একানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের নিরিখে নেহাতই নবাগত। ২০১৯ সালে প্রথম ওয়ান ডে ম্যাচ আয়োজিত হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত মোটে ৪টি ওয়ান ডে ম্যাচ আয়োজিত হয়েছে এই মাঠে। যার মধ্যে ভারত খেলেছে মাত্র একটি ম্যাচ। যে ম্যাচে হেরে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। করোনার ধাক্কায় ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার একটি ওয়ান ডে ম্যাচ বাতিল করা হয়েছিল।


তাহলে আচমকা বিশ্বকাপের দশ কেন্দ্রের মধ্যে এই মাঠ জায়গা পেল কী করে? বিশেষ করে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড বনাম ভারতের মতো মেগাম্যাচ এই মাঠে কেন?


সূত্রের খবর, একানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অপেক্ষাকৃত মন্থর পিচে ইংল্যান্ড কিংবা অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার ইচ্ছা নাকি প্রকাশ করা হয়েছিল খোদ ভারতীয় দল থেকেই! যাতে স্পিন অস্ত্রে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল আঁকড়ে জয়ের রাস্তায় থাকা যায়। সেই কারণেই এই স্টেডিয়াম পেয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।


ভারত-ইংল্যান্ডের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া বনাম শ্রীলঙ্কার মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচও রয়েছে এই স্টেডিয়ামে। কেউ কেউ অবশ্য বোর্ড রাজনীতির প্রসঙ্গও তুলছেন। বলা হচ্ছে, রাজীব শুক্লর জন্যই এত গুরুত্বপূর্ণ ম্য়াচ আয়োজনের বরাত পেয়েছে একানা ক্রিকেট স্টেডিয়াম।


দেশের পঞ্চম বৃহত্তম স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা ৫০,০০০। আইপিএলে লখনউ সুপার জায়ান্টস দলের হোমগ্রাউন্ড। একটা সময় আফগানিস্তান হোমগ্রাউন্ড হিসাবে ব্যবহার করেছে এই মাঠ। 


পিচ: লখনউয়ের ভারতরত্ন শ্রী অটলবিহারী বাজপায়ী একানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচ বরাবরই মন্থর গতির। স্ট্রোক খেলা খুব একটা সহজ নয়। ব্যাটারদের সামনে কঠিন পরীক্ষা। এই মাঠে ৪টি ওয়ান ডে ম্যাচে সর্বোচ্চ ইনিংস ২৫৩ রানের। সেঞ্চুরি মাত্র একটি। যে পরিসংখ্যান থেকে আঁচ পাওয়া যায় যে, বোলারদের, বিশেষ করে স্পিনারদের জন্য বাড়তি সাহায্য় থাকে পিচে। তবে ম্যাচ জুড়ে পিচের খুব একটা তারতম্য হয় না। মানে টস জিতে শুরুতে ব্যাটিং করে বিপক্ষের ওপর বড় রান চাপিয়ে দিয়ে স্পিন জালে ম্যাচ জেতার তত্ত্ব এই মাঠে অচল।


পরিসংখ্যান বলছে, এই মাঠে এখনও পর্যন্ত হওয়া ৪টি ওয়ান ডে-র মধ্যে ২টিতে রান তাড়া করা দল জিতেছে। ২টি জিতেছে প্রথমে ব্যাটিং করা দল। বিরাট বড় রান নাও উঠতে পারে। স্পিনারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।


আবহাওয়া: বিশ্বকাপে লখনউয়ে সবকটি ম্যাচই হবে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। সেই সময় তাপমাত্রার পারদ খুব একটা চড়া থাকবে না। শীতও যে খুব জাঁকিয়ে পড়বে, তা নয়। বরং মনোরম আবহাওয়াই থাকবে। শিশির পড়বে। তবে তা ম্যাচের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠবে না।


স্টেডিয়ামের মোট আসনসংখ্যা: ৫০,০০০


একানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ান ডে রেকর্ড:


প্রথম ওয়ান ডে – ৬ নভেম্বর, ২০১৯


শেষ ওয়ান ডে – ৬ অক্টোবর, ২০২২


ম্যাচ – ৪ (করোনা অতিমারির জন্য একটি ম্যাচ বাতিল হয়েছিল, নাহলে সংখ্যাটি হতো ৫)


মোট রান – ১৮২৯


মোট উইকেট – ৫৬


উইকেট প্রতি রান খরচ – ৩২.৬৬


ওভার প্রতি রান – ৪.৯৯


সর্বোচ্চ ইনিংস – ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ২৫৩/৫ (বনাম আফগানিস্তান, ১১ নভেম্বর, ২০১৯। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় জয়ী ৫ উইকেটে)


সর্বনিম্ন ইনিংস – আফগানিস্তান ১৯৪ (বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ়, ৬ নভেম্বর, ২০১৯। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় জয়ী ৭ উইকেটে)


সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর – শাই হোপ (অপরাজিত ১০৯ রান, বনাম আফগানিস্তান)


সেরা বোলিং – শেলডন কটরেল ৯-০-২৯-৩ (বনাম আফগানিস্তান)


প্রথমে ফিল্ডিং করা দল ৪ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ২টিতে। ২টি ম্যাচ জিতেছে শুরুতে ব্যাটিং করা দল।


 


ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারতের ওয়ান ডে রেকর্ড:


ম্যাচ – ১ (১টি ম্যাচ পরিত্যক্ত)


জয় – ০


পরাজয় - ১


 


একানা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ম্যাচ:


১. অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, ১২ অক্টোবর, শনিবার, দুপুর ২.০০


২. অস্ট্রেলিয়া বনাম শ্রীলঙ্কা, ১৬ অক্টোবর, সোমবার, দুপুর ২.০০


৩. নেদারল্যান্ডস বনাম শ্রীলঙ্কা, ২১ অক্টোবর, শনিবার, সকাল ১০.৩০


৪. ভারত বনাম ইংল্যান্ড, ২৯ অক্টোবর, রবিবার, দুপুর ২.০০


৫. আফগানিস্তান বনাম নেদারল্যান্ডস, ৩ নভেম্বর, শুক্রবার, দুপুর ২.০০


আরও পড়ুন: ODI World Cup 2023: শৈলশহরে শিশিরে ঘুরে যেতে পারে ম্যাচের মোড়, বিশ্বকাপে ধর্মশালায় ধুন্ধুমারের অপেক্ষা









https://t.me/abpanandaofficial